সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপরাধে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এনালিস্ট এটিএম শামসুজ্জামান তার সহযোগি ফয়সাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম আজ ভোররাত্রি থেকে নজরদারিতে রেখে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে দক্ষিণ ও মধ্য পীরেরবাগ, মিরপুর এবং আগারগাঁ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট এটিএম শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগী ফয়সাল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেপ্তারকালে কাছাকাছি দুইটি ভিন্ন বাসায় তাদের হেফাজত থেকে একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, তৈরিকৃত শতাধিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা, গুরুত্বপূর্ণ দলিল ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। এ সকল কম্পিউটার প্রিন্টার ল্যাপটপ দিয়ে গত কয়েক বছরের পাঁচ হাজারের অধিক অরিজিনাল সার্টিফিকেট মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে হ্যান্ডওভার করা হয়েছে এবং একই সাথে সরকারি ওয়েবসাইটে, সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রয়কৃত সার্টিফিকেটগুলোকে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নাম্বার, রেজিস্ট্রেশন নাম্বার গুলোকে সার্স করলে তা সঠিক বলে প্রমাণিত হবে।
একেএম শামসুজ্জামানের বাড়ি দিনাজপুরে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে যোগদান করেছেন ২০০৯ সালে। বর্তমানে তার পদ সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট। বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার বিভিন্ন থানার আনাচে কানাচে অবস্থিত কারিগরি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় গুলোতে পড়ালেখা করা হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন, রোল নাম্বার, সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি, সেগুলোকে নির্দিষ্ট সার্ভারে আপলোড দেয়া, ভেরিফিকেশন নিশ্চিত করা, কম্পিউটার সিস্টেম কোড সংরক্ষণ গোপনীয়তা বজায় রাখাসহ বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সকল প্রকার ডিজিটালাইজেশন এবং কম্পিউটারাইজেশন মূল দায়িত্ব তার কাঁধে। সহকর্মী কম্পিউটার অপারেটর বা এক্সপার্টদেরকে সাথে নিয়ে এই দায়িত্বটা তিনি পালন করবেন এটাই প্রত্যাশিত।
কিন্তু জনাব শামসুজ্জামান তার অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনের চেয়ে দুর্নীতি মূলক কাজ করার জন্যই বেশি আগ্রহী ছিল। সিস্টেম অ্যানালিস্ট হওয়ার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবছর কত হাজার পরীক্ষার্থী এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষায় জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে কতজন ফর্ম ফিল আপ করে রোল নাম্বার পেয়েছে, কতজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নাই কতজন কৃতকার্য হয়েছে কতজন অকৃতকার্য হয়েছে সব তথ্যই তার কাছে থাকতো। এ বিশাল তথ্য ভান্ডার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অথরিটি, সিস্টেম কোড ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রতি সপ্তাহ প্রতিমাস এবং বছরে শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগীরা লক্ষ লক্ষ টাকার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বাণিজ্য করেছে।
শামসুজ্জামান অফিসের কিছু লোক এবং বাইরের বিভিন্ন বিভাগের কিছু দালালকে দিয়ে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তৈরির এই বাণিজ্য করে আসছে। দালালরা কখনো কখনো ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ও দিতো মে তারা যে অরজিনাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট দিবে তা অনলাইনে ভেরিফাইড হবে।
২০১৭ সালে ও মার্কশিট সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে চাক কিছুতো করা হয় কিন্তু হাইকোর্টের মাধ্যমে আবার চাকরিতে পুনর্বাহল হয়ে সে এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পাঁচ হাজারের অধিক সার্টিফিকেট মার্কশিট বিক্রি করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছে। নিয়মিত মামলা রজ্জু হওয়া প্রক্রিয়াধীন।
আমরা মনে করি একজন ব্যক্তির পক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে এতো বড় জোচ্চুরি করাটা দুষ্কর। তার সাথে অন্যরা হয় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে না হয় দায়িত্বে অবহেলা করে তাকে এই কুকর্মটি সম্পাদন করার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। তদন্ত করে জড়িত সকলকেই আইন আমলে নিয়ে আসা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।