ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিসি)কে জানিয়ে অনেকটা অস্বস্থিতেই পড়ে গেছেন থানার ওসি। তিনি ভাবছেন ধরিয়ে দেওয়ার পুরো ঘটনা না জেনে ডিসি সাহেবকে জানানো ঠিক হয়নি। নিজের উপর বিরক্ত হয় ওসি। রাগ ধরে যায় দারোগা কায়েসের প্রতি। ওর জন্যই তিনি বিষয়টি অতি উৎসাহের সঙ্গে বড় সাহেবকে জানিয়েছেন। এতে তিনি কোন বেকায়দায় পড়েন কি না , সে জন্য বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন।
করিৎকর্মা ওসি বসে নেই। তিনি পত্রিকা অফিসে গিয়ে ঘটনাটি আবিস্কারের চেষ্টা করছেন। সেখানকার বিজ্ঞাপন বিভাগ থেকে জানতে পরেছেন রামপুরার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বিজ্ঞাপনটি দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা নিয়ে সেখানে গিয়ে যখন হাজির হন তখন ভর দুপুর। রোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গরম পড়েছিল বেশ। সরকারি গাড়িতে এয়ার কন্ডিশনার না থাকায় তিনি ঘামছিলেন। তার চেয়ে বেশি ঘামছিলেন ডিসি সাহেবের কথা মনে করে। যানজটে গাড়ি আটকে যাওয়ার পরওদ দু'তিনবার চালককে ধমকেছেন তিনি। কনস্টেবল পদমর্যাদার চালক বিনা প্রতিবাদে তার ধমক শুনেছে। বড় অফিসারদের নিয়ে গাড়ি চালাতে গেলে এমন ধমকের পাল্লায় পড়া নতুন কিছু নয়। ধমক তার গা সওয়া।
গলদঘর্ম হয়ে রামপুরার ওই প্রতিষ্ঠানে ঢুকে কিছুটা স্বস্থি পান ওসি। প্রতিষ্ঠানের গেট থেকে বের হওয়া এয়ার কন্ডিশনারের বাতাস তার শরীরকে ঠান্ডা করে তোলে। কিন্তু মনের গরম কিছুতেই ঠান্ডা হচ্ছিল না।
প্রতিষ্ঠানের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) বেশ সম্মানের সঙ্গেই ওসি সাহেবকে তার কক্ষে যেতে বললেন। ওসি তার কাছে বিজ্ঞাপনের বিষযটি জানতে চান। কিন্তু সিইও যা বললেন, তাতে ওসি সাহেব খুব হতাশ হয়ে গেলেন। তার চোখের সামনে ডিসি সাহেবের মুখটা ভেসে উঠলো। ওসি সাহেব ভেবেছিলেন সিইও বলবেন, তার প্রতিষ্ঠানে মেয়েটি চাকরি করতো। টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেছে। এ কারণে পত্রিকায় ধরিয়ে দেওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। কিন্তু সিইও বললেন অন্য কথা। বললেন- ৃ
ধরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কি ধরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তা কিন্তু বিজ্ঞাপনে নেই। এটাও নেই যে পুলিশে ধরিয়ে দিন। আসলে আমাদের আমদানীকৃত টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনী চমক দিতে গিয়েই এমন কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়েছে। আগামীকালের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ওই তরুণীর হাতে একটি টুথপেস্ট ধরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হবে। আর এটাই বিজ্ঞাপনের আকর্ষন।
এবার ক্ষেপে যান ওসি সাহেব-
এটাতো এক ধরনের প্রতারণা।
যুক্তি দেখান সিইও।
দেখুন আপনি বিষয়টিকে আইনি চোখে দেখছেন। আর আমরা দেখছি মার্কেটিংয়ের কৌশল হিসেবে। নতুন পণ্য বাজারে চালাতে হলে, আমাদেরতো ব্যতিক্রমী কিছু করতেই হবে, তাই না?
সিইওর কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু ডিসি সাহেবকে কোন যুক্তি দিয়ে বুঝাবেন তা ভেবে কুল কিনারা করেত পারছেন না ওসি।
আপনি যাই বলুন, এটা স্রেফ প্রতারণা। এ কারণে আপনাদের শাস্তি হওয়া উচিৎ।
এবার সিইও তার যুক্তি তুলে ধরেন।
দেখুন ওসি সাহেব, বেশ কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেশের জনপ্রিয় এক টিিভ অভিনেত্রীর ছবি ছাপিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিলর , তিনি নিখোঁজ। এই নিয়ে কাগজে অনেক লেখালেখিও হয়েছে। কই আপনারাতো সেটাকে প্রতারণা হিসেবে দেখেননি। আমরাতো সে ধরনের কিছু করিনি। শুধু বিজ্ঞাপনের আইডিয়অটা নিয়ে এ ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়েছি। তবে বিজ্ঞাপনে বড় ধরনের একটা ভুল হয়েছে। সেই ভুলটির কথা কি শুনবেন?
না। সরি। আমার আর সময় নেই। আপনারা ভুল করতেই থাকেন, আর আমাদের কাজের চাইতে অকাজের পেছনে দৌড়ানোর জন্য ব্যস্ত রাখেন।
কথাগুলাে বলেই বেরিয়ে যেতে চান ওসি সাহেব। সিইও তাকে কফি খেয়ে যেতে অনুরোধ করেন । কিন্তু ওসি সাহেব তার কথা না রেখে বেরিয়ে যান।
গাড়িতে উঠার আগেই উঠার আগেই ডিসি সাহেব ফোন করেন ওসি সাহেবকে। মোবাইলে ডিসির নম্বর দেখেই ওসির হাতপা কাঁপতে শুরু করে। তার চাকরিজীবনে এমন ভুল কখনো করেননি। আজ কি-না এমন একটা ভুল করলেন যার সঙ্গে এক তরুণী সম্পৃক্ত। যা তাকে বিব্রত করে তুলেছে। ওসি ভীত হয়ে ফোন ধরেন। ডিসি সাহেব বলতে থাকেন-
শোনেন আমি খোঁজ নিয়েছি তরুণীর ছবি ছাপিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান তাদের টুথপেষ্টের বিজ্ঞাপন আকর্ষনীয় করতে এমন করেছে। এই নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না।
জ্বী স্যার।
আপনাকে ধন্যবাদ। এই কারণে যে, আপনি বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। তা না হয়ে অন্য ঘটনাও তো হতে পারতো।
থ্যাংকইউ স্যার।
ডিসি সাহেব ফোন কাটতেই বুকের উপর থেকে যেন একটা বড় পাথর নেমে যায় ওসির। গাড়িতে না ওঠে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেন তিনি। ডাকেন গাড়ি চালক কনসে্টবল মজিদকে। মজিদ গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে স্যার স্যর করতে থাকেন। ওসি সাহেব বলেন-
মজিদ কফি খাবে?
ওসির কথা শুনে চমকে যায় মজিদ। একটু আগেই যার কাছ থেকে অযথাই গালাগাল খেয়েছে, তিনি তাকে কফি খাওয়াতে চাচ্ছে। মজিদ হ্যাঁ- না কোনো উত্তর না দিয়ে স্যার স্যার করতে থাকে। ওসি সাহেব বুঝতে পারেন কফি খেতে মজিদের আপত্তি নেই। তিনি গাড়তে উঠে বেইলিরোডের দিকে যেতে বলেন। সেখানেই একটি দোকানে মজিদকে কফি খাওয়াবেন তিনি। দোকানের নাম শুনেই মজিদ বুঝতে পারে , তার স্যার সত্যি সত্যিই তাকে কফি খাওয়াবে।
গাড়ি বেইলি রোডমুখী। কিন্তু যানজটের কারণে এগুতেই চাচ্ছে না। কিন্তু একটুও বিরক্ত নন ওসি সাহেব। তার মনে ফুর্তি রয়েছে। যেখানে তার গালাগাল শোনার কথা, সেখানে ডিসি সাহেব তার কাজের প্রশংসা করেছেন। ফুর্তি থাকাই স্বাভাবিক। গাড়িতে যেতে যেতেই মনে পড়ে তার এক শিক্ষকের কথা। সেই শিক্ষক তাকে একদিন বলেছিলেন -
ভালো কাজের ফল ভালোই হয়। তবে কোনো কোনো ভালো কাজের ফল খারাপ আসতে পারে। কিন্তু কোন খারাপ কাজের ফল কখনোই ভাল আসতে পারে না। তিনি আরো বলেছিলেন, সব চেষ্টারই একটি ভালো ফল পাওয়া যায়। সেটা দু'দিন আগে বা পড়ে।
ওসি সাহেবের মনে কথাগুলো দাগ কেটে যাচ্ছিল। তিনি মেয়েটির বিষয়টি নিয়ে ঘাটাঘাটি না করলে এমন প্রশংসা পেতেন না। তিনি চেষ্টা করেছেন বলেই হয়তো এমন প্রশংসা জুটেছে।
চলবে...