logo
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১৪:৪৯
শিশু সাহিত্যিক যখন পর্ণোগ্রাফির হোতা : গ্রেপ্তার ২
নিজস্ব প্রতিবেদক

শিশু সাহিত্যিক যখন পর্ণোগ্রাফির হোতা : গ্রেপ্তার ২

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি’র স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপ বিভাগের এন্টি ইললিগ্যাল আর্মস রিকোভারী টিম কর্তৃক গতকাল আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির মূলহোতা ও সহযোগীসহ রাজধানীর খিলগাঁও হতে ২ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং একজন শিশু ভিকটিম উদ্ধার, প্রচুর পরিমান শিশু পর্নোগ্রাফির কনটেন্ট ও পর্নোগ্রাফি তৈরীর সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন টি আই এম ফখরুজ্জামান ওরুফে টিপু কিবরিয়া ও কামরুল ইসলা ওরফে সাগর।

পুলিশ জানায়, টি আই এম ফকরুজ্জামান এক সময়কার খুব জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক। সে টিপু কিবরিয়া নামে পরিচিত। টিপু কিবরিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে বাংলায় স্মাতক এবং ১৯৮৮ সালে স্মাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৯১ সালে সেবা প্রকাশনীর মাসিক “কিশোর পত্রিকা”য় সহকারী সম্পাদক পদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তিনি ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশু সাহিত্য রচনা করতেন। তার অর্ধ শতাধিক এর উপরে বই রয়েছে যার বেশিরভাগই সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।

২০০৫ সাল থেকে শিশু পর্নগ্রাফি উৎপাদন ও বিতরণের সাথে জড়ায় টিপু কিবরিয়া। দীর্ঘদিন এই অপরাধের সাথে জড়িত থাকার পর ২০১৪ সালে সিআইডির কাছে গ্রেফতার হন এবং তার নামে পর্ণগ্রাফি আইনে মামলা হয়। ২০২১ সালে জেল খানা থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় সাহিত্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে টিপু কিবরিয়া। “একশো এক” নামে একটি কবিতার বই প্রকাশ করে। একই সাথে, সাহিত্য চর্চার আড়ালে পুনরায় শিশু পর্নোগ্রাফির সেই পুরনো পথেই হাঁটতে শুরু করে টিপু কিবরিয়া।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট বানায়। সে নিজে গুলিস্তান, সোহরাওয়ার্দি উদ্যান সহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাংবাদিক বেশে ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের সামান্য কিছু অর্থের লোভ দেখিয়ে নিজের বাসায় ডেকে এনে তার নিজের ক্যামেরার সাহায্যে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির নগ্ন ছবি, শরীরের বিভিন্ন গোপনাঙ্গের ছবি তোলে এবং ভিডিও করে। নিজের বাসা ছাড়াও বিভিন্ন পার্কের নির্জন ঝোপ ঝাড়ে এই ছিন্নমূল ছেলে শিশুদের একই প্রক্রিয়ায় অশ্লীলছবি ও ভিডিও ধারণ করে। এই ছিন্নমূল ছেলে শিশুদের সংগ্রহ করার জন্য তার কয়েকজন সহযোগীও রয়েছে। যাদের মধ্যে একজন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো হতে প্রায় ২০ জন পথশিশুর ছবি ভিকটিম হিসেবে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

পরবর্তীতে এই অশ্লীল ছবিগুলো বিভিন্ন নিষিদ্ধ ও পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটে আপলোড করে। এ সকল ওয়েবসাইট গুলো বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষগুলোর একধরণের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যার অধিকাংশ সদস্য মূলত উন্নত বিশ্বের মানসিক বিকারগ্রস্থ নাগরিকরা। এই ওয়েবসাইটগুলো থেকেই টিপু কিবরিয়ার আপলোড করা ছবিগুলো দেখে অনেক বিকৃত রুচির ব্যক্তিরা তার সাথে যোগাযোগ করে। তারা টিপু কিবরিয়ার কাছে ছেলে শিশুদের বিভিন্ন রকমের অশ্লীল ছবির চাহিদা দেয় এবং টিপু কিবরিয়া অর্থের বিনিময়ে ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের ব্যবহার করে তাদের চাহিদা চরিতার্থ করে।

অভিযান পরিচালনার সময় তার বাসায় তার ব্যবহৃত ডেস্কটপটি পরীক্ষা করে দেখা যায় সে MEGA এবং Totanota নামক দুইটি এনক্রিপ্টেড এপস এর মাধ্যমে তার ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করে। এ পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও জর্মানির নাগরিকসহ প্রায় ২০/২৫ টি Totanota ও MEGA আইডি সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। যারা এসব আইডি দিয়ে মূল হোতা টিপু কিবরিয়ার সাথে শিশু পর্নোগ্রাফির বিভিন্ন কনটেন্ট এর জন্য যোগাযোগ করতো।

এছাড়া তার ব্যবহৃত ক্যামেরা, পিসি ও ক্লাউড স্টোরেজ থেকে প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৫০০ শিশু পর্নোগ্রাফির উদ্দেশ্যে তোলা স্থির চিত্র ও প্রায় ১০০০ ভিডিও কনটেন্ট এর সন্ধান পাওয়া গেছে। তার ডেস্কটপে অসংখ্য ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের প্রচুর অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাওয়া গিয়েছে।

ধৃত আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।