logo
আপডেট : ২ মে, ২০২৪ ১১:০২
গাজায় এক সাংবাদিকের বেঁচে থাকার লড়াই
অনলাইন ডেস্ক

গাজায় এক সাংবাদিকের বেঁচে থাকার লড়াই

বিবিসি টিমের সঙ্গে দিনে এক বেলা খেয়ে, তাঁবুতে কাটিয়েছেন সাংবাদিক আদনান

প্রায় তিন মাস ধরে আদনান এল-বুরশ গাজায় চলমান যুদ্ধের উপর রিপোর্ট করেছেন তাঁবুতে থাকা অবস্থায়। খাবার খেয়েছেন দিনে মাত্র একবার আর ক্রমাগত লড়াই চালিয়েছেন তার স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানকে নিরাপদে রাখার জন্য। যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে যে তীব্র বেদনাদায়ক মুহূর্তের সাক্ষী হতে হয়েছে এই বিবিসি অ্যারাবিকের এই সংবাদদাতাকে, তা তিনি ভাগ করে নিয়েছেন পাঠকদের সঙ্গে।

গত ছয় মাসে সবচেয়ে খারাপ মুহূর্তগুলির মধ্যে একটা ছিল যেদিন রাতে আমরা সবাই রাস্তায় ঘুমিয়েছিলাম। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের প্রচণ্ড ঠান্ডায় স্ত্রী ও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে অসহায় বোধ করছিলাম আমি। আমার ১৯ বছর বয়সী যমজ মেয়ে জাকিয়া ও বাতুল ফুটপাতে শুয়েছিল। পাশেই ছিল ১৪ বছরের মেয়ে ইয়ুম্না, আট বছরের ছেলে মুহম্মদ, সব চেয়ে ছোট মেয়ে রাজান যার বয়স মাত্র পাঁচ বছর আর ওদের মা জয়নব।
আমরা ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদর দফতরের বাইরে বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। গোটা রাত প্রতিধ্বনিত হয়ে চলেছিল গোলাগুলির শব্দ। আর ছিল মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া ড্রোনের ক্রমাগত আওয়াজ।

একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়ায় খুঁজে পেয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু বাড়িওয়ালা আগেই ফোন করে জানালেন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাকে সতর্ক করেছে যে ওই ইমারতের উপর বোমা ফেলা হবে। সে সময় আমি কাজ করছিলাম। আমার পরিবার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিল সেদিন।

বাস্তুচ্যুত মানুষের ভিড়ে ঠাঁসা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদর দফতরের সামনে আমরা আবার দেখা করলাম। আমি আর আমার ভাই গোটা রাত কার্ডবোর্ডের বাক্সের ওপর বসে আলোচনা করছিলাম আমাদের কী করা উচিৎ।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী উত্তর গাজার সবাইকে নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণে সরে যেতে বলার পরই, গত ১৩ই অক্টোবর আমরা জাবালিয়া শহর ছাড়ি। ওই শহরে আমাদের বাড়িঘর সমস্ত কিছু পিছনে ফেলে এসেছি। আর এখন সেই অঞ্চলে ফেলা বোমা থেকে আমরা কোনও মতে বাঁচলাম যে এলাকায় আমাদের চলে আসতে বলা হয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে মাথা ঠিক রেখে ভাবনা চিন্তা করা কঠিন ছিল। ক্ষুব্ধ, অপমানিত বোধ করছিলাম, ভয়ঙ্কর লাগছিল এটা ভেবেই যে আমি আমার পরিবারকে কোনওরকম সুরক্ষা দিতে পারিনি।

শেষপর্যন্ত আমার বাড়ির লোকেরা কেন্দ্রীয় গাজার নুসেইরাতের থাকার জন্য একটা অ্যাপার্টমেন্ট পেয়ে যায়। আমি থেকে যাই বিবিসি টিমের সঙ্গে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের কাছে একটি তাঁবুতে। কয়েকদিন পরপর বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। ইন্টারনেট সার্ভিস আর টেলিফোন সিগনালের সমস্যার দরুন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন ছিল। একবার তো চার-পাঁচ দিন বাড়ির লোকেদের কোনও খবরই পাইনি।
খান ইউনিসে বিবিসির টিমে যে সাতজন ছিলাম আমরা, তারা দিনে একবেলা খেতাম। কোনও কোনও দিন খাবার মজুদ থাকলেও খেতাম না কারণ কাছাকাছি যাওয়ার মতো কোনও শৌচালয় ছিল না। এই সময় আমার বন্ধু ওয়ায়েল আল-দাহদৌহ ভয়ানক ক্ষতির সম্মুখীন হন। তিনি আল জাজিরার ব্যুরো প্রধান।

তার পরিবার যে বাড়িতে থাকত সেটা ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যায়। এই ঘটনায় তার স্ত্রী, কিশোর ছেলে, সাত বছরের মেয়ে এবং এক বছরের নাতি নিহত হয়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অবশ্য দাবি করেছে তারা বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা হ্রাস করার জন্য ‘যথাসম্ভব সতর্কতা’ গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে ‘ওই অঞ্চলে হামাসের সন্ত্রাসী অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু’ হিসাবে নিশানা করেছিল তারা।

আমার বন্ধু যাকে ২০ বছর ধরে চিনি তাকে একটা ভিডিও ফুটেজে দেখেছিলাম আমি। মধ্য গাজায় সাদা কাপড়ে মোড়ানো সন্তানদের দেহ জড়িয়েছিল সে। ওই দৃশ্য দেখে ছটফট করছিলাম। খালি মনে হচ্ছিল যদি আমি ওখানে থাকতাম! অন্যান্য বন্ধু, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীদের মৃত্যুর ধারাবাহিক খবরের মধ্যে এই মৃত্যুর খবরটাও এসেছিল। আমার বুক ফেটে যাচ্ছিল। এই যুদ্ধে আমি প্রায় ২০০ জনকে হারিয়েছি। 
সেদিন রিপোর্ট করতে গিয়ে লাইভ সম্প্রচারের সময় আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। পরদিন যখন ঘুম ভাঙল তখনও গাল বেয়ে চোখের জল বয়ে চলেছে। বন্ধু ওয়ায়েলের ওই দৃশ্য আমার মাথায় গেঁথে গিয়েছিল।
গত ১৫ বছর ধরে গাজায় সংঘাতের খবর সংগ্রহ করেছি কিন্তু এই যুদ্ধ তার থেকে একেবারে আলাদা- তা সে নজিরবিহীন আক্রমণই হোক যা থেকে এই যুদ্ধের সূত্রপাত কিম্বা ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা।
গত সাতই অক্টোবর ছয়টা বেজে ১৫ মিনিটে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের আওয়াজে আর আমার সন্তানদের চিৎকারে ঘুম ভাঙে। ছাদে গিয়ে দেখি গাজা থেকে ইসরাইলের দিকে রকেট ছোঁড়া হচ্ছে।

আমরা বুঝতে পারলাম হামাস ইসরায়েলে সীমানা ভেঙ্গে ঢুকে পড়েছে আর আক্রমণ চালিয়েছে যে হামলায় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হন এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। সে সময় আমরা জানতাম ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া কী হতে চলেছে। আমরা জানতাম, ওই প্রতিক্রিয়ার এমন হবে যা আমরা এর আগে কোনওদিন দেখিনি।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আঘাত আর মৃত্যুর ঝুঁকি তো সর্বদাই রয়েছে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক দু'দিন পরে, জাবালিয়ার স্থানীয় বাজারে খাবার মজুদ করার জন্য তাড়াতাড়ি ছুটেছিলাম আমি। সেখানে গিয়ে দেখলাম অন্যরাও একইভাবে খাবার মজুদ করছিলেন। আমি যাওয়ার ১০ মিনিটের মাথায় ওই এলাকায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করা হয়। পুরো এলাকাটা ধ্বংস হয়ে যায়। এর মধ্যে বড় মুদি দোকানও রয়েছে যেখানে কিছুক্ষণ আগেই আমি জিনিসপত্র কেনাকাটা করেছিলাম। ওই এলাকার দোকানদারদের আমি চিনতাম। এদের অনেকেই ছিলেন ওই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে।

প্রথম থেকেই তারা বলে আসছে, হামাসকে লক্ষ্য করে অভিযান চালানো হচ্ছে, যারা (হামাস) বেসামরিক এলাকায় অবস্থান করা অবস্থাতেই কাজ চালাচ্ছে। তারা (ইসরায়েল) আরও জানিয়েছে, ‘সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার বিষয়টা আন্তর্জাতিক আইনের সংশ্লিষ্ট বিধান সাপেক্ষে করা হচ্ছে।’

যুদ্ধের আগে, জাবালিয়া একটি সুন্দর, শান্ত শহর ছিল। আমি সেখানে জন্মগ্রহণ করেছি এবং পরিবারের সাথে একটা সাধারণ জীবন যাপন করে এসেছি। সন্তুষ্টিতে মোড়া, ভালোবাসা আর ভবিষ্যতের স্বপ্নে ভরা একটা জীবন। শহরের পূর্বদিকে আমার একটা খামার ছিল। সেখানে আমি নিজের হাতে জলপাই, লেবু আর কমলা লেবুর গাছ লাগিয়েছিলাম। বেশ শান্ত ছিল ওই জায়গাটা। কাজের শেষে ওখানে বসে চা খেতে ভালবাসতাম আমি।
যেদিন উত্তর গাজা ছেড়ে খান ইউনিসে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম - আমাদের বাড়িঘর এবং গাজা সিটিতে বিবিসি অফিসকে পিছনে ফেলে – সেইদিনটা আমার জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য দিন ছিল। ১০ জনেরও বেশি মানুষ একটা গাড়িতে ঠাঁসাঠাসি করে চড়ে, আমি এবং আমার পরিবারের সকলে দক্ষিণের দিকে যাচ্ছিলাম একটা মাত্র রাস্তা ধরে যে রাস্তা দিয়ে চলেছেন হাজার হাজার মানুষের। কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ গাড়ি চড়ে, নিজেদের জিনিসপত্র বোঝাই করে তারাও চলেছিলেন একইদিকে।
আমাদের যাত্রা মাঝেমধ্যে থমকে যাচ্ছিল রাস্তার দু’দিকের নিকটবর্তী এলাকায় বিমান হামলার কারণে। বিভ্রান্তি, দুঃখ আর অনিশ্চয়তা আমার পরিবার আর অন্যান্য মানুষের মুখে স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছিল।
বাচ্চারা আমাকে সমানে প্রশ্ন করে চলেছিল “আমরা কোথায় যাচ্ছি? কাল কি আমরা ফিরে আসব?” আমার এখন মনে হয় আসার সময় আমার যে ফটো অ্যালবামে আমার ছেলেবেলার ছবি ছিল- সেটা সঙ্গে আনলে হতো। সেখানে আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে তোলা ছবি ছিল। আমার আর স্ত্রীর বাগদানের ছবিও ছিল ওই অ্যালবামে। আমার বাবা আরবির শিক্ষক ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তার বইগুলো আমার কাছে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম। এখন ভাবি, তার কয়েকটা বই সঙ্গে করে নিয়ে আসলে হতো।
পরে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম আমাদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে আর আমার সেই খামারটা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণের সেই ভয়ঙ্কর যাত্রা আর রেড ক্রিসেন্টের সদর দফতরের বাইরে সেই রাতের পরে, আমি খান ইউনিস থেকেই বেশ কয়েক সপ্তাহ কাজ চালিয়ে যাই। আমার পরিবার তখনও নুসিরাতে ছিল। তাদের থেকে আলাদা থাকার বিষয়টা আমাকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করেছিল।
এরপর ডিসেম্বরের শুরুতে ইসরায়েল গাজাবাসীদের খান ইউনিসের কিছু অংশ ছেড়ে আরও দক্ষিণে রাফাহ-সহ অন্যান্য এলাকায় চলে যেতে বলে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী উত্তরমুখী প্রধান সড়কটাও বন্ধ করে দেয়। আমাকে আর আমার পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার মাধ্যম ছিল ওই সড়ক। আমি জানতাম না কীভাবে তাদের কাছে যাব কিংবা যদি যাই তাহলে আমরা সবাই মিলে কোথায় যাব? রাফাহ এমনিতেই হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে ঠাঁসা ছিল। সেখানে থাকার জায়গা ছিল না বললেই চলে।

এরপর কয়েকদিন ধরে আমি তীব্র আবেগের সঙ্গে লড়াই করেছি। ইতিমধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী প্রধান সড়কের দিকে এগোচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য মধ্য ও উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণকে ভাগ করে দেওয়া। এটা ভেবেই আতঙ্কিত ছিলাম যে আমাকে বা আমার পরিবারকে হত্যা করা হবে আর আমরা কেউ কাউকে কোনওদিন দেখতে পাব না।

এই প্রথম মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। এটা কোন দিন সেটাও মনে পড়ছিল না। একবার ভেবেছিলাম কাজ বন্ধ করে পরিবারের কাছে ফিরে যাব, মরলে আমরা একসঙ্গে মরব। শেষ পর্যন্ত ১১ই ডিসেম্বর আমার এক সহকর্মীকে নিয়ে নুসেইরাতের পেছনের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাই। সেখানে পৌঁছানো মাত্রই আমার ছোট ছেলেমেয়েরা আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য ছুটে আসে। আমার সবচেয়ে ছোট মেয়ে রাজান শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরেছিল। আমার পরিবারকে রাফায় স্থানান্তরিত করতে পেরেছিলাম। বিবিসির টিমও সেখানে স্থানান্তরিত হয়। রিপোর্টিং-এর কাজ কিন্তু অব্যাহত ছিল। এগুলো বেশ ভয়ঙ্কর মুহূর্ত ছিল।

ডিসেম্বরের শেষের দিকে, আমি রিপোর্ট করেছিলাম যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় ৮০ টি মৃতদেহ হস্তান্তর করেছে। আইডিএফ জানিয়েছিল, দেহ গাজা থেকে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যাতে তাদের মধ্যে কোনো জিম্মি আছেন কিনা তা পরীক্ষা করা যায়।

রাফাহ এলাকার সমাধিস্থলে একটা বড় লরি ঢুকে পড়ে। বিশাল কন্টেইনারটি খোলার সময় তীব্র দুর্গন্ধ ছিল। অ্যাপ্রন আর মাস্ক পরা কয়েকজন নীল প্লাস্টিকে মোড়ানো দেহাবশেষগুলো রাখেন বালি খুঁড়ে তৈরি একটা বিশাল গণসমাধিতে। এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি। এই দৃশ্য যে কতটা ভয়ঙ্কর তা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
জানুয়ারি মাসে আরও এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়। আমি রাফাহর একটি হাসপাতাল থেকে খবর সংগ্রহের কাজ করছিলাম, সেই সময় বেশ কয়েকজনের মৃতদেহ আনা হয়। এদের মধ্যে বন্ধু ওয়ায়েল আল-দাহদৌহের আরেক ছেলে হামজার দেহও ছিল। ওনার বড় ছেলে হামজাও সাংবাদিক ছিল। আল জাজিরার জন্য কাজ করত।
কিন্তু ওয়ায়েলকে এই দুঃসংবাদ কে দেবে? একের পর এক স্বজন হারিয়ে ইতিমধ্যে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে গিয়েছে ও (ওয়ায়েল আল-দাহদৌহ)। আমার এক সহকর্মী ওয়ায়েলের ঘনিষ্ঠ কোনও ব্যক্তিকে খবরটা দেওয়ার জন্য ফোন করছহিলেন। ওদের কথা আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না।
ইসরায়লি বিমান হামলায় হামজা এবং তার সহকর্মী মুস্তফা থুরায়ার মৃত্যু হয়। মুস্তফা থুরায়া ফ্রিল্যান্স ভিডিওগ্রাফার ছিলেন। ওই অঞ্চলে অন্য এক বিমান হামলার পরবর্তী পরিস্থিতির বিষয়ে খবর সংগ্রহ করে ফিরছিলেন ওই দুইজন। সে সময় তাদের গাড়ির উপর ইসরায়েলের বিমান হামলা হয়।
ইসরায়েলের দাবি ওই দু’জন ‘গাজা-ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য'। তাদের এই দাবি মিথ্যা বলে জানিয়েছে নিহতদের পরিবার এবং আল জাজিরা।
আইডিএফ-এর দাবি হামজা আর মুস্তফা থুরায়া ড্রোন পরিচালনা করছিল এবং তারা ‘আইডিএফ সৈন্যদের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছিল’। তবে ওয়াশিংটন পোস্টের তদন্ত বলছে ‘এমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি যা থেকে বলা যেতে পারে ওই ব্যক্তিরা সেদিন সাংবাদিক ছাড়া অন্য কোনও ভূমিকায় কাজ করছিলেন’।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স-এর তথ্য অনুসারে সাতই অক্টোবর থেকে গাজায় ১০০ জনেরও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন - যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ফিলিস্তিনি।
আইডিএফ অবশ্য দাবি করেছে তারা কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের নিশানা করেনি এবং করবেও না। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে 'সাংবাদিকসহ বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনের জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে’। কিন্তু 'সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে থাকার ঝুঁকি থেকেই যায়’।
অবশেষে খবর এলো বিবিসি টিমের সদস্যদের পরিবারের গাজা ছাড়ার অনুমতি মিলেছে। চার সপ্তাহ পরে, আমরাও মিশরীয় কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিয়ে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে চলে আসি।
এই প্রতিবেদন আমি লিখছি কাতারে বসে। কিন্তু আমি জানি, জাবালিয়ায় ওরা ঘাস তুলছে, পশুর খাবার নিজেরা খাওয়ার জন্য তৈরি করছে। আর আমি এখানে পরিষ্কার হোটেলে খাবার খাচ্ছি। খেতে কষ্ট হয়- এটা অনেকটা বিষ খাওয়ার মতো। ভবিষ্যৎ ঝাপসা। গাজা আমার প্রাণ। আমি একদিন সেখানে ফিরতে চাই কিন্তু আপাতত সেটা অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।