logo
আপডেট : ৮ মে, ২০২৪ ১০:৪৮
ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব- ২০
নিশিকথা
ওমর ফারুক

নিশিকথা

কোনদিক দিয়ে রাত আড়াইটা বেজে গেছে টেরই পায়নি নিশি। মন খারাপ থাকায় আজ আর ঘড়ির দিকে তাকানো হয়নি তার। সুইচ টিপে ঘরের আলো তাড়িয়ে দিয়ে বেলকনিতে বসেছিল ও। দক্ষিণ দিকের আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল অপলক। 

শরৎকাল না হলেও আকাশটা পরিষ্কারই ছিল। ক'টি তারা খেলা করছিল। কেমন যেন একটা তারা সরে গিয়েছিল পশ্চিম দিকে। ওই সময় পুর্বদিক থেকে আরেকটা তারা এসে শূণ্যস্থান পূরন করে। তারারা এভাবে জায়গা বদল করে নাকি সে ভুল দেখছে তাও আন্দাজ করতে পারে না। যাই হোক তার সময়তো কাটছে। অন্তত মনটাকে একটু প্রশান্তি দেওয়ার জন্য তারার দিকে তাকিয়ে থাকাই বা খারাপ কি?
রাতে মা-বাবাবার সঙ্গে খেতে বসলেও অন্যদিনের মতো খেতে পারেনি নিশি। বারবার মনে পড়েছিল আমি তো ওদের সন্তান নই। নাহিদ আহমেদ ভেবে নিয়েছেন, পত্রিকার ছবি দেখেই নিশির মনটা খারাপ। তারাও কিছু বললেন না। 
নিশি বেলকনিতে বসেই রবীন্দ্রনাথের কোনো একটি গান আওরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কোন গানটা গাইবে তা নিয়েও ঝামেলায় পড়ে যায়। 
এর মাঝেই একটি ফোন আসে তার মোবাইল ফােনে। আজ সকাল থেকেই দেখতে পেল দেশের বাইরের একটা নম্বর থেকে ফোন এসেছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে ফােনটা ধরে। এক মহিলা ফোন করেছে। ফোন ধরার সঙ্গে সঙ্গেই ওই মহিলা উৎকণ্ঠিত হেয় জানতে চান।
তুমি কেমন আছো আম্মু?
চমকে যায় নিশি। তার পরিচিত জন কেউ এমনভাবে আম্মু ডাকে তা মনে করতে পারলো না সে। জবা আহমেদ তাকে নাম ধরেই ডােক। কখনো আদর করে তাকে আম্মু ডেকেছে তাও নিশি মনে করতে পারে না। আম্মু ডাকটা শোনার পর কেমন আবেগ প্রবণ হয়ে ওঠে নিশি। কে এই মহিলা যে তাকে এত মধুর সুরে আম্মু বলে ডাকলো। কিছুক্ষণ তার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেরুলো না। কি জবাব দেবে তা খুঁজছিল। কোন শব্দ সে ব্যবহার করবে তাও মাথায় আসছিল না। আজ শব্দরাও যেন নিশির কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আবারো প্রশ্ন-
তুমি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছ আম্মু?
এবারের আম্মু ডাকটা আরো বেশি আবেগি করে তোলে। শব্দ এবার খুঁজে পায় নিশি।
কে বলছেন আমি ঠিক..
চিনতে পারছো না এইতো। আমি তােমার শুভাকাঙক্ষী। পত্রিকার তোমাকে ধরিয়ে দেওয়ার বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে তা আমি জানি। আমি জানি তুমি এমন কেনো কাজ করতে পারো না যে, পত্রিকায় তোমাকে ধরিয়ে দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হতে পারে। নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে।
মহিলার কথায় আরো বিস্মিত নিশি। কে তিনি। নাম্বারটা দেখেই বুঝেছে ইংল্যান্ডের নম্বর। সেখান থেকে এক মহিলা তার খবরাখবর রাখে! ইন্টারনেটে যে পত্রিকা বিদেশের লোকজন দেখতে পারে সেখানে তাে বিজ্ঞাপনের অংশ দেওয়া হয় না। তা হলে এই মহিলা কিভাবে জানলো তার ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। 
নিশি এবার ভয় পেয়ে যায়। মহিলার সঙ্গে কথা বাড়ানোটাও সুবিধার মনে হচ্ছে না তার কাছে। কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই নিশি  দ্রুত ফােন কাটে। এরপর আবারো তার মোবাইলে ওই নম্বর থেকে কল আসে। কেটে দেয় নিশি। কয়েকবার এমন করার পর মোবা্ইল ফোনটি বন্ধ করে দেয় সে।
এমনিতেই সব উদ্ভট বিষয়ের মাঝে আছে নিশি। তাই এই ফােনাটকেও তার কাছে উদ্ভটই মনে হলো তার। তার মনে হতে থাকলো , সে বিশেষ কেউ হয়ে গেছে। যা শুধু ঢাকা নয় তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে সদুর লন্ডনেও। 
নিশি এক গ্লাস পানি খেয়ে সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ঘুমানোর জন্য যখন বিছানায় যায় তখন রাত তিনটা বাজে। নিজের অজান্তেই চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে থাকে নিচে। এক সময় ঘুমিয়ে যায় সে।
চলবে..