logo
আপডেট : ৯ মে, ২০২৪ ১০:২৮
ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব- ২১
নিশিকথা
ওমর ফারুক

নিশিকথা

পরদিন সকালে নিশির ঘুম ভাঙ্গে বাবার চিৎকার শুনে। তার বাবা চিৎকার করে স্ত্রী জবার সঙ্গে কথা বলছে। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত যা চোখে পড়েনি নিশির। বাবা নাহিদ আহমেদ স্ত্রীকে বলছেন -
তুমি আসলে কি চাও। নিশিকে বাড়ি থেকে বের করে দেবাে?
জবা আহমেদ ঠাণ্ডা মাথায় বললেন-
তুমি উত্তেজিত হচ্ছো কেন? তোমার প্রেসারটা বাড়বে।
বাড়ুক, বেড়ে মরে যাই। তা হলে যদি তোমার শান্তি হয়।
কি ধরনের অলুক্ষণে কথা বলছো তুমি।
এতক্ষণ ধরে যেসব প্যাঁচালশুরু করেছো তার মানে কি?
আমি বলছি যে, মাথা গরম না করে পত্রিকা অফিসে গিয়ে আসল বিষয়টা জেনে আসো। আসলে নিশি কোনো অন্যায় করেছে কি না?
যদি করে থাকে তা হলে কি করবে?
সেটা পড়ে দেখা  যাবে।
নিশি তোমার পেটের সন্তান না হলেও তো তোমার সন্তান নাকি। আর সেই সন্তানের বিরুদ্ধে তুমি অ্যাকশনে যেতে চাচ্ছ, সেটা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি। এ
এবার রেগে যান জবা আহমেদ-
শোনো, আমার পেটের না হলেও আমি নিশিকে নিজের সন্তানই মনে করি। আর তাকে সেভাবেই বড় করা হয়েছে। বুঝতে দেইনি আমি তার মা নই। যদি সে আমার পেটের সন্তান হওয়ার পরও কোন অন্যায় কাজে জড়াতো তা হলে আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দিতাম। 
কি শাস্তি দিতে জানতে পারি?
বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিতাম।
নিশিকেও দাও। অসুবিধাটা কোথায়?
অসুবিধাটা তুমি।
আমি!
হ্যাঁ তুমি। আমি বন্ধ করে দিলে তুমি বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিবে।
না-ও তো দিতে পারি।
তোমাকেতো ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে চিনি নাকি?
এখন নিশিকে কি করতে চাও?
আগে প্রকৃত খবরটা নিয়ে এসো। দেখি সে কত বড় অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েছে। এরপর ব্যবস্থা নেবো। জবা বেশ শক্তভাবেই কথাগুলো বলে যায়। নাহিদ আহমেদের মনে ছুট লাগে। 
তার মানে নিশি তোমার সন্তান নয় বলে তুমি তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইছো?
এমনভাবে বললে মনে হচ্ছে যেন সে তোমার প্রকৃত সন্তান।
হ্যাঁ, সে তোমার সন্তান না হলেও প্রকৃত অর্থেই সে আমার সন্তান। আমার সন্তান বলেই তোমার মতো গরম মেজাজ পায়নি। হয়েছে ঠান্ডা মেজাজের মানুষ।
কথাটা শুনে খুব একটা চমকায়নি জবা। পিতৃস্নেহ  কারণেই পরের সন্তানকে নিজের সন্তান বলে দাবি করছে। তার নিজেরও তো খারাপ লাগছে নিশিকে পরের সন্তান বলতে। 
কতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর তাদের সুখের সংসারে কেন এ সমস্যার সৃষ্টি হলো তাও চিন্তা করে দেখার চেষ্টা করেন জবা আহমেদ। নিশিকে আনার পর তিনিই তো তােক কােলে পিঠে করে মানুষ করেছেন। একবারওতো জবা আহমেদের মনে পড়েনি, সেতো তার সন্তান নয়। 
না করেই বা কি করবেন। ব্যাংকের লোকগুলো যেভাবে তাকিয়েছে। প্রথম দিকে না বললেও পরে যেভাবে নিশিকে নিয়ে তার সামনে সমালোচনা করেছে তাতে কার মাথা ঠিক থাকবে? জবার মনে হয় যদি তার পেটের সন্তান হতো তা হলে নিশ্চয়ই সে কোন অপরাধের সঙ্গে জড়াতো না। কিন্তু তার হাতেইতো বড় হয়েছে নিশি। তা হলে তার ব্যাপারে খোঁজ -রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন জবা আহমেদ।
পরক্ষণই জবার মনে পড়ে তার স্বামীর কথা। লোকটা কি বললো! তার প্রকৃত মেয়ে নিশি। তা কিভাবে সম্ভব। রাস্তা থেকে কুঁড়িয়ে পাওয়া একটা শিশু কি করে নাহিদের সন্তান হতে পারে? নিশিকে যখন নিয়ে আসা হয়েছিল তখন তার বয়স ছিল ১ দিন। নাহিদ ও তারিক এক সঙ্গে গাড়িতে করে নিশিকে নিয়ে বাসায় এসেছিলেন। তারিক জানিয়েছিল এক দরিদ্র ঘরে জন্ম নিয়েছে মেয়েটি। তার মা তাকে খাওয়াতে -পড়াতে পারবে না বলে নবজাতককে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছিল, তখন তাদের চোখে পড়ে। তার কাছ থেকে মেয়েটিকে নিয়ে আসে। 
বিনিময়ে নাহিদ তাকে দুই হাজার টাকা দিয়েছে। সেই মহিলা কোনোদিন তার সন্তানকে নিজের সন্তান বলে দাবি করতে আসবে না, এ কারণেই টাকা দেওয়া। কিনে আনা হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। এর পর থেকেই তো নিশি জবার কোলে বেড়ে উঠেছে। আজ সে বিশ্ববিদ্যালেয়র ছাত্রী।
নাহিদের সঙ্গে আর কোন কথা বললেন না জবা। তিনি বেরিয়ে গেলেন। নাহিদ অবাক। প্রকৃত সন্তান বলার পরও সে,  কোনো ব্যাখ্যা না চেয়েই চেল গেলো। এমন তো হওয়ার কথা নয়। জবা আহমেদ কোনো বিষয়ই শেষ না দেখে ছাড়েন না। ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে এমনটিই দেখেছেন তিনি। আজ তার কি হলো। সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মানুষের জীবনকে এভাবে বদলে দিতে পারে? হয়তো পারে। তা না হলে জবাই বা কেন এমন বদলে গেলো। নাহিদ আপন মনে হিসাব করে যেতে থাকে অনেক কিছুর।

চলবে..