logo
আপডেট : ১১ মে, ২০২৪ ১১:১৯
ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব- ২৩
নিশিকথা
ওমর ফারুক

নিশিকথা

দিবাকে বাড়ির দরজায় দেখে আকাশ থেকে পড়েন জবা আহমেদ। এক সঙ্গে কতগুলো বছর তারা কাটিয়েছে। হরিহর আত্মা ছিল দু'জন। তারিক আর নািহদের মধ্যে যে রকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তাদের মধ্যেও এর চেয়ে কম ছিল না। কিন্তু জবার বিয়ের তিন বছর পর দিবা লন্ডনে চলে যায়। এর পর আর কোনো যোগােযােগ রাখেনি জবার সঙ্গে।
জবার বিয়ের সময় নাহিদ ও তারিকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল দিবার। তারিক যদি আগে বিয়ে না করে ফেলতো তা হলে দিবাকে তার সঙ্গে বিয়ে দিতো জবা। এ নিয়ে তার আফসোসও কম ছিল না। দু'জন যদি এই দু'জনের স্ত্রী হতো তা হলে কতই না ভালাে লাগতো। জবা তখন ভাবতো তারিককে অবশ্যই পছন্দ করতো দিবা। একদিন কথায় কথায় জানতেও চেয়েছিল। দিবা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও জবা বুঝতে পারছিল তারিককে সে পছন্দ করে ঠিকই। কিন্তু বিবাহিত লোকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি না করাই ভালো বলে যুক্তি দাঁড় করিয়েছিল দিবা।
এ নিয়ে সেদিন দু'জন হাসাহাসিও কম করেনি। তবে তারিক ও নাহিদ দিবার বন্ধু হয়ে যায়। যেন সেও জবার মতোই একজন বন্ধু। তাদের মধ্যে নারী পুরুষের বিষয়টি থাকেনি। কারো প্রতি কারো চাহিদাও তৈরি হয়নি। জবার কথা শুনে দু'একবার তারিকের প্রতি চাহিদার বিষয়টি ঊঁকি দিলেও তা সংবরণ করতে পেরেছে। সে ক্ষমতা তার রয়েছে। তবে তারিকের মাঝে একবারও তেমন বিষয় কাজ করেনি। দিবাকে শুধু বন্ধু হিসেবেই দেখেছে সে।
দরজা খুলতেই জবা দেখে তার বাসার দরজায় দিবা। প্রথমে চিনতে একটু কষ্ট হয়। দিবারও জবাকে চিনতে কম কষ্ট হয়নি। ২০ বছরে জবা কতটা মুটিয়ে গেছে দেখে অবাক হওয়ার কথা। জবা দিবাকে চিনতে পেরেই ‌দিবা তুই' বলে চিৎকার করে ওঠে। মেয়ের এই সমস্যার মধ্যে কি করে জবা এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো তা দেখতে পেয়ে আঁৎকে ওঠে দিবা। নিশ্চিত হয় নিশিকে খুব একটা ভালবাসে না জবা। কেনই বা বাসবে, সেতো নিশির প্রকৃত মা নয়।
জবার উচ্ছ্বাস দেখে দিবার কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি। বিষয়টা বুঝতে পেরে চমকে যায় জবা। তা হলে কি দিবার আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই দিবা কি সেই দিবা। যে সারাক্ষণ কথা বলতে পছন্দ করতো। কখনো কখেনা জবা বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে বলতো-
মানুষ তোকে বাঁচাল বলবে।
বলুক। বাঁচাল হলে কি হয়। সবাইতো আর তোর মতো গুমরোমুখো থাকবে না।
দুই বান্ধবীর মধ্যে এনিয়ে মাঝে মধ্যে ঝগড়া হতো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ঝগড়া মিটে দু'জনে মিলে যেতো। সপ্তাহে দু'তিনদিন দিবাদের বাসায় যাওয়া পড়তো জবার। তা না হলে দিবার মা খুব রাগ করতেন। দিবার মা না খাইয়ে ছাড়তো না কোনো দিন। দিবাকেও যেতে হতো জবাদের বাসায়। তাদের দু'জনের ঘনিষ্ঠতা দেখে হিংসে হতো অনেকের।
একবার দিবার মা বাবা জবাদের বাড়ি গিয়েছিল। তারা দুই বান্ধবীর ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে তারাও আলোচনা করেছিলেন। এক পর্যায়ে দিবার মা বলছিলেন- একটাকে ছেড়ে আরেকটা কিভাবে থাকবে তা নিয়ে তিনি চিন্তিত। তখন জবার মা রসিকতা করে বলছিলেন- 
এদের দু'জনকে একজনের কাছে বিয়ে দিতে হবে। তা হলেই এক সঙ্গে থাকতে পারবে। তাদের কথাগুলো পাশের কক্ষ থেকে ষ্পষ্ট শুনতে পেয়িছিল দিবা ও জবা। তারা দু'জন তখন মুখ টিপে হাসছিল। ড্রয়িং রুমে বসে যখন মুরুব্বীরা কথা বলছিল তখন দু'বান্ধবী পাশের রুমে চলে গিয়েছিল। আর তাদের বিষয়ে কথা শুরু হতেই কান খাড়া করে দু'জন। 
এ কথা শোনার পর থেকে দু'জন দুষ্টুমি করে বলতো, চল একজনকেই দু'জন বিয়ে করবো। জবা বলছিল-
বিষয়টা মন্দ হয় না। তা হলে আমাদের দু'জনকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। 
ঠিকই বলেছিস। তবে সমস্যা কি জানিস?
কি?
হাজব্যান্ড কিন্তু আমাকেই বেশি ভাল বাসবে। তাতে তোর হিংসে হবে। 
মোটেও না। আচ্ছা যদি এর উল্টোটা হয় তা হলে? 
কিছুক্ষণ ভাবে দিবা। বলে-
মনে হয় আমি হিংসে করবো।
কেন ছাড় দিবি না?
সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে
তাদের দু'জন এর পর থেকেই এক স্বামী নিয় গল্পে মশগুল হতো। নাহিদের সঙ্গে জবার বিয়ের পরও বিষয়টি  ভােলেনি তারা। জবাই বলেছিল-
নাহিদকে বলবো নাকি তোকেও নিয়ে আসার জন্য। সেদিন সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিল দিবা।
শোন সময়টা কিন্তু বদলে গেছে। এখন এসব কথা বলিস না। এসব কথা বললে নাকি সংসারের অমঙ্গল হয়।
দিবার কথা শুনে সেদিন জবা অবাক না হয়ে পারেনি। কার মুখ থেকে সে এসব কথা শুনছে। যে কোন ধরনের কুসংস্কার বিশ্বাস করে না, তার কাছ থেকে। 
এরপর থেকে জবাও আর এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেনি দিবার সঙ্গে। দিবাও না। জবার বিয়ের চার বছর পরই দিবা দেশ ছাড়ে। যাওয়ার বছর খানেক আগে থেকেই কেমন যেন বদলে যেতে থাকে দিবা। জবাকে ফোনতো করতই না বরং জবা তাকে ফােন করলে বিরক্ত হতো। কেন এমন করতো তা জানার চেষ্টা করে কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছে জবা। জাবাও এক সময় জেদ করে তাকে আর ফোন করেনি। উচিত মনে করেনি। তার আত্ম সম্মানেও বাঁধে। দিবা তখন একটি শপিং মলে চাকরি করতো। শপিং মলের চাকরিটাকেও জবা ভালো চোখে দেখেনি। তাকে কয়েকবার পরামর্শ দিয়েছে এটা ভালো কাজ না। তার মতো শিক্ষিতা সহজেই ভালো চাকরি জুটিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু দিবা জবার কথায় গুরুত্ব  দেয়নি। এর পর থেকেই দু'জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।

চলবে...