logo
আপডেট : ১৮ মে, ২০২৪ ০৯:৪৩
ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব- ২৭
নিশিকথা
ওমর ফারুক

নিশিকথা

তারিক আর সইতে পারলো না। মনের মাঝে যে ঝড় বইছে তাকে আর আটকানো উচিত মনে করলেন না তিনি। এই ঝড় শুধু তার মন নয়, ছিঁড়ে ফেলতে পারে সম্পর্কের সমস্ত বন্ধনও। হয়তো সব কিছু জানার পর জবা আর জীবনে কখনো তারিকের সঙ্গে কথা বলবে না। এমনকি নাম শুনলেও থুথু ছিটাবেন। এরপরও তিনি ঘটনাটা বলেই ফেললেন। বলতে গেলে এক দমেই শেষ করেছেন পুরো ঘটনা। অবশ্য সংক্ষিপ্ত অকারে। কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত আকার থেকেই সবাই বুঝে গেছেন নিশির জন্ম রহস্য।

ঘটনাটা শোনার পর জবা মিনিট দুয়েক পৃথিবীতেই ছিলেন না। যেমনটা প্রিয় কারাে মৃত্যু সংবাদ শুনলেও  হয়তো হয় না। নিশিও ঘটনাটা শুনছিল দরজার ওপাশ থেকে। সে যা শুনেছে, তা শুনে ভালো মন্দের মাঝামাঝি একটা জটিল অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। এই শুনে তার কি করা উচিৎ ভেবে পাচ্ছিল না। কিন্তু সে নিজের অজান্তেই নাহিদের রুমে ঢুকে পড়ে। তারিকের কাছে জানতে চায়-
আঙ্কেল, আপনি যা বললেন তা আমি আবার শুনতে চাই। স্পষ্ট করে শুনতে চাই। বার বার শুনতে চাই। আমি নিশ্চিত হতে চাই আমি রাস্তার মেয়ে নই। কুড়িয়ে পাও য়া মেয়ে নই।
নিশির গলায় ঝাঁজ আর গাল বেয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরতে শুরু করে। চোখ ভেঙ্গে পানি বইতে চাচ্ছে নাহিদ ও  তারিকের। কান্না নেই দিবা ও  জবার মাঝে। তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছেন। যেন কত অপিরিচিত একে অপরের। চেনা মুখ বড় অচেনা লাগছে। নতুন করে পরিচয় জানতে ইচ্ছে করছে। জবার জানতে ইচ্ছে করছে সত্যিই কি দিবা তার বান্ধবী না অন্য কিছু।
কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তারিক বলতে শুরু করেন পুরাে ঘটনা। বলেন, জবা ও  নাহিদের বিয়ের পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কোন সন্তান হচ্ছিল না। এ কারণে অস্বস্থিতে পরে জবা। একের পর এক ডাক্তার দেখিয়েও  কোনো ফল হয়নি। জবার সন্তান জন্ম দেওয়ার অক্ষমতার কথা ডাক্তারের কাছ থেকে নাহিদ তারিক দু'জনই শুনেছিলেন। কিন্তু তা জবাকে জানানো হয়নি। কারণ জবা সন্তানের জন্য একদিন আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে চেয়েছিল। যদি সে জানতে পারে সে কোনোদিন মা হতে পারবে না, তা হলে তাকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে। এই ভেবে তারা দু'জন সেদিন বিষয়টি চেপে যান। তবে জবা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন। এ কারণেই এতিমখানা থেকে একটি সন্তান আনার জন্য বারবার নাহিদকে চাপ দিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত মায়ের স্বাদ পাওয়ার জন্য জবার কোলে একটি শিশু এনে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন নাহিদ আহমেদ। পুরো বিষয়টি জানতেন দিবাও ।
বান্ধবীর দুঃখ ঘােচাতে এগিয়ে আসেন দিবা। তিনিই প্রস্তাব করেন যদি তার গর্ভ থেকে একটি সন্তান নিয় নাহিদ জবার কোলে তুলে দেয় তা হলে হয়তো সমস্যার সমাধান হতে পারে। কথা মনে ধরে তারিকের। এর পর তারিকই তাদের দু'জনের চুক্তিভিত্তিক বিয়ের আয়োজন করেন। সন্তানের জন্য বিয়ে মেনে নিয়েছিলেন দু'জনই। তাদের সন্তান আসতেও সমস্যা হয়নি। মাসখানেকের মধ্যেই দিবার পেটে বাসা বেধেছিল সেই সন্তান। সন্তান পেটে আসার পরই ইচ্ছে করে জবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল দিবা।
নয় মাস সাত দিন পর সন্তান জন্ম দিয়েই দিবা সেই সন্তানকে তুলে দিয়েছিলেন নাহিদের কোলে। নাহিদ ক্লিনিক থেকে এ্ই কন্যা সন্তানকে কিনে এনেছেন বলে তুলে দিয়েছিলেন জবার কোলে। সেদিন সন্তান পেয়ে জবা কি খুশি! নিজেকে মা বানানোর জন্য কত নাটকই না সাজিয়েছিলেন জবা। তার আত্মী স্বজনকে জানিয়েছিলেন তিনি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বিশ্বাসও  করেছিল তারা।
সেই কন্যার নাম নিয়েও  কম বিপত্তি হয়নি। যখন তাকে জবা আহমেদের কোলে দেওয়া হয়েছিল তখন জবা তার নাম রাখতে চেয়েছিলেন কিংকর। যুক্তি দেখিয়েছিলেন বিশ্বসুন্দরী  ক্লিওপেট্রার প্রথম অক্ষরের সঙ্গে মিলিয়ে তার নামটি রাখবেন তিনি। কিন্তু বাঁধা দেন নাহিদ আহমেদ। তিনি বলেছিলেন মেয়ের নাম বাবার নাম অনুযায়ী রাখা হয়। তখন জবা আহমেদ বলেছিলেন- 
সেতাে তােমার মেয়ে না, যে তোমার নাম অনুযায়ী রাখতে হবে। যদি কখনো আমাদের সন্তান হয় তাহলে রেখো।
যুক্তি তর্ক শেষে নাহিদ আহমেদই জয়ী হয়েছিলেন। তার নামের অনুযায়ীই মেয়ের নাম হয় নিশি। অবশ্য এ ঝামেলা মিটাতেও তারিকের মধ্যস্থতা প্রয়োজন পড়েছিল। তারিকেরও  নিশি নামটি খুব পছন্দ হয়েছিল। কারণ নিশির মায়ের নাম দিবা। তার মেয়ে নিশি। দিবা -নিশি। চমৎকার হয়। তারিকের কাছ থেকে এ নাম শুনে লন্ডনে থেকে দিবাও  খুশি হয়েছিলেন।  নিশিকে কোলে দিয়েই মাস দুয়েক পর দিবা চুক্তি অনুযায়ী ডিভোর্স দিয়েছিলেন নাহিদকে। এরপর স্টুডেন্ট ভিসায় পাড়ি জমান ই্ংল্যান্ডে।

চলবে..