গোপাল ভোগ, হাড়িভাঙ্গা, ল্যাংড়া, ফজলি কত ধরনের আমই না পাওয়া যায় বাংলাদেশে। জাত ভেদে রয়েছে আমের মিষ্টতা ও পুষ্টিগুন। এক ধরনের আমের সঙ্গে অন্য ধরনের মিল থাকায় অসাধুৃ ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ঠকানোর সুযোগ পায়। অন্যদিকে বাংলাদেশে যে সব নামের আম রয়েছে সেগুলোর নাম করণও বেশ মজার। যেমন ফজলি বিবি নামের এক বৃদ্ধার নাম অনুসারে আমের নাম রাখা হয় ফজলি। খিরসাপাত আমকেই ঢাকা সহ সারাদেশে হিমসাগর আম নামে বিক্রি করা হয়। আর ভারতের বেনারসের ল্যাংড়া ফকিরের নামে নামকরণ করা হয়েছে ল্যাংড়া আমের। ল্যাংড়া আমকে ভারতে ‘বানারসী আম’ হিসেবে ডাকা হয়।
দেশের বাজারে সাধারণত এপ্রিল মাস থেকেই কাঁচা আম পাওয়া যায়। তবে পাকা আম বাজারে উঠতে শুরু করে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই, যা চলে একদম অগাস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত।
কিন্তু মে থেকে অগাস্ট, এই চার মাসের কোন মাসে কোন আম বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, সে সম্বন্ধে কি আমরা জানি? অথবা, এত এত আমের মাঝে কোনটি কোন জাতের আম, সাদা চোখে তা কোন কোন বৈশিষ্ট্য দেখে চিহ্নিত করবো আমরা?
অনেক সময় অভিযোগ ওঠে যে বাজার থেকে ফজলি আমের নামে অনেক ক্রেতাদের হাতে আশ্বিনা আম ধরিয়ে দেওয়া হয়। আবার, জানাশোনার অভাব থাকায় ক্রেতারা হরহামেশা বাজার থেকে হিমসাগর আম কিনছেন ঠিকই। কিন্তু আদতে তা মোটেও হিমসাগর নয়, বরং অন্য জাতের আম।
বাহ্যিক দিক দেখে আম চিহ্নিত করার উপায় কী এবং সেই সাথে, কোন আমের পুষ্টিগুণ কেমন ও স্বাদের দিক থেকে কোন আম এগিয়ে ইত্যাদি বিষয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা হয়েছে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলীম ও ল্যাবএইড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিমের সঙ্গে।
গোপালভোগ : ড. আব্দুল আলীম জানান, প্রচলিত ভালো জাতের আমের মধ্যে বাজারে প্রথম যে আম পাওয়া যায়, তা হল গোপালভোগ। আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুনের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে গোপালভোগ আম পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সব জেলাতেই এই আমের চাষ হলেও বৃহত্তর রাজশাহী এলাকা গোপালভোগ আমের জন্য বেশি প্রসিদ্ধ। “আমের জন্য যেমন আবহাওয়া উপযুক্ত, তা রাজশাহীতে বিদ্যমান। পুষ্পায়নের জন্য শুষ্ক ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া লাগে। আর পরিপক্কতার জন্য শুষ্ক ও গরম আবহাওয়া লাগে। এটা এই এলাকায় আছে। তাই এখানকার আম বেশি সুস্বাদু,” তিনি বলেন।
এই আম চেনার উপায় হল, এর গায়ে ছোট ছোট হলুদ ছোপ ছোপ দাগ থাকে এবং নীচের অংশ কিছুটা সরু। আর, পাকার পর এর গায়ে একটি হলদে ভাব আসে।
স্বাদের কথা বললে এই আম আশহীন, ঘ্রাণযুক্ত ও অনেক মিষ্টি। তবে এর খোসা তুলনামূলক মোটা এবং আঁটি পাতলা হয়। আকারে এটি কিছুটা ছোট ও লম্বাটে। বৈশিষ্ট্য ও আকারের দিক থেকে গোপালভোগের কাছাকাছি ধরনের আরেকটি আম হল রানী পছন্দ। এটির গায়েও হলুদ দাগ আছে।
কিন্তু আকারের দিক থেকে এটি গোপালভোগ আমের চেয়েও ছোট ও গোলাকার।
তবে “গোপালভোগ ও রানী পছন্দ একসাথে রাখলে চেনা কঠিন হয়ে যায়। তাই অনেকেই গোপালভোগের সাথে রানী পছন্দ মিশিয়ে বিক্রি করে,” বলেন ড. আলীম।
এই আম চেনার উপায় হল, এতেও কোনও আঁশ নেই। খোসা পাতলা। আমের বোঁটা শক্ত এবং খোসা গোপালভোগের চেয়ে তুলনামূলক মসৃণ। বৈশিষ্ট্য ও আকারের দিক থেকে রাণী পছন্দ আম গোপালভোগের কাছাকাছি।
খিরসাপাত আম : উৎপাদনের জন্য রাজশাহী, চাঁপাইগঞ্জে বেশি বিখ্যাত। আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, মে মাসের শেষে বা জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আসে।
গোলাকৃতির এই আম আকারে একটু বড় হয়। আর, এটির গায়ে হালকা দাগ আছে। এছাড়া, আম পাকলে বোঁটার চারদিকে হলুদ রং ধারণ করে।
মিষ্টি সুগন্ধ ও স্বাদের জন্য এই আমের কদর আমপ্রেমীদের কাছে অনন্য।
তবে মজার বিষয় হল, এই খিরসাপাত আমকেই ঢাকা সহ সারাদেশে হিমসাগর আম নামে বিক্রি করা হয়।
হিমসাগর আম সম্বন্ধে ড. আলীম বলেন, “হিমসাগর আমের একটি আলাদা জাত। রাজশাহীতে আদতে হিমসাগর আম উৎপাদন হয় না। এটি বাজারেই নাই।”
হিমসাগরের উৎপাদন ভারতে বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশেও দুই একজনের কাছে এটির গাছ আছে, কিন্তু চাষ হয় না। বাগান নাই এর কোনও।”
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “হিমসাগরের ফলন কম এবং এটি খিরসাপাতের মতো অত ভালো না। শুধুমাত্র সাইজ (আকার) খিরসাপাতের মত।”
ল্যাংড়া : এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার, যার ল্যাংড়া আম পছন্দ নয়। কথিত আছে, বেনারসের ল্যাংড়া ফকিরের নামে এর এমন নামকরণ হয়েছে।
সেজন্য ল্যাংড়া আমকে ভারতে ‘বানারসী আম’ হিসেবে ডাকা হয়। আম ক্যালেন্ডার ২০২৪ অনুযায়ী, ১০ই জুন থেকে এই আম সংগ্রহ করা শুরু হবে।
ল্যাংড়া আম চিহ্নিত করার কথা বললে বলতে হয়, অন্য আমের চেয়ে এই আম চেনা অনেকটাই সহজ। কারণ এই আমে এক ধরনের ঝাঁঝ থাকে, যা এটিকে আলাদা করে।
সেইসাথে, এটি দেখতে গোলাকার এবং এর খোসা একইসাথে পাতলা ও মসৃণ। চামড়া পাতলা হওয়ার কারণে পোকাদের এই আম পছন্দ। চামড়ার ভেতরে ডিম পেড়ে দেয়। ভেতরে পরে পোকা হয়।
এছড়া, ল্যাংড়া আমের গায়ে এক ধরনের নাক থাকে। এর বোঁটা চিকন আর আঁটি পাতলা হয়। সেইসাথে, পাকা আমের গায়ে পাউডারের মতো গুঁড়া থাকে।
বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ অঞ্চলে এই আম বেশি হয়। এই আমও সুগন্ধযুক্ত ও রসালো। পাকা আমের রঙ অনেকটা সবুজাভ হলুদ।
গুটি বা আঁটি আম : আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশের বাজারে গুটি বা আঁটি আম সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে।
তবে বাস্তবে গুটি আম বলতে আলাদা কিছু নেই। মানুষ আম খাওয়ার পর তাদের ঘরের আঙ্গিনায় বা এখানে-সেখানে আমের আঁটি ফেলে দেয়।
সেই আঁটি থেকে যে গাছ, পরবর্তীতে আম হয়, সেগুলোকেই গুটি আম বলে।
কিন্তু মজার বিষয় হল, যে আমের আঁটি থেকে গাছ হয়েছে, সেই গাছে আদৌ একই ধরনের ও মানের আম হবে কি না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
“এই আমের কোনও নাম নাই। বিভিন্ন ধরনের আঁটি থেকে গাছ হয় এবং তখন সেটি মাতৃচরিত্র বহন করে না। আম অন্যরকম হয়ে যায়। ভালোও হতে পারে, খারাপও হতে পারে। সাধারণত খারাপই বেশি হয়,” বলেন ড. আলীম।
বিষয়টিকে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “যেমন, গোপালভোগের আঁটি থেকে যদি গাছ হয়, তবে সেটি গোপালভোগ আমের মতো আম দিবে না। গোপালভোগ থেকে যদি কলম করি, তাহলে একই স্বাদযুক্ত হবে।”
অর্থাৎ, মাতৃগাছের গুণাগুণ পেতে হলে অবশ্যই কলম করতে হবে। “আঁটি থেকে হলে খারাপই বেশি হয়। দেখা যাচ্ছে যে আম হিসেবে গোপালভোগ, কিন্তু স্বাদ টক।”
গুটি আমের আকারও সুনির্দিষ্ট নয়। কোনও আমের আকার ছোট, কোনোটির বড়।
হাড়িভাঙ্গা : বাংলাদেশে যেসব আমের জনপ্রিয়তা আছে, তার মাঝে হাড়িভাঙ্গা আমও আছে। তবে রংপুর অঞ্চলে হাড়িভাঙ্গা আমের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়।
জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে হাড়িভাঙ্গা আম বাজারে আসবে।
হাড়িভাঙ্গা আমের সাথে আঁটি আমের সম্পর্ক আছে বলে কথিত আছে। শোনা যায়, কেউ কোনও একটি আম খেয়ে তার আঁটি একটি হাড়ির মাঝে ফেলে দিয়েছে।
“সেখান থেকেই যে গাছ হয়েছে, সেই গাছের আমের নাম দেওয়া হয়েছে হাড়িভাঙ্গা আম,” বলেন সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলীম।
হাড়িভাঙ্গা আম চেনার উপায় হল, এর বোঁটার দিকের অংশ চওড়া এবং নীচের দিকটা চিকন। এছাড়া, এই আমের আঁশ নেই বললেই চলে।
“সেজন্য এই আম বেশি পেকে গেলে খাওয়া যায় না। ভেতরে জেলির মতো…মানে অনেক বেশি নরম নরম হয়ে যায়। তাই এটি শক্ত অবস্থায় খেতে হবে।”
তিনি জানান, হাড়িভাঙ্গা ও আম্রপালি আম বেশি পাকলে খেতে সমস্যা হয়।
আম্রপালি বা বারি-৩ : জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আম্রপালি আম বাজারে আসবে। বাংলাদেশের নওগাঁতে এই আম বেশি চাষ হয়।
এটি একটি হাইব্রিড আম, যার মিষ্টতা অন্য আমের চেয়ে অনেক বেশি।
এই আমের আকার নীচের দিকে একটু সূঁচালো এবং উপরের দিকটা অনেকটা গোল। আকারের দিক থেকে এটি কিছুটা ছোট এবং এর খোসা মসৃণ বা তেলতেলে।
অন্য আমের চেয়ে এই আমে মিষ্টি বেশি। এর স্বাদও অন্যরকম।
ড. আলীম বলেন, “হাইব্রিড হওয়া এই আমের আকার অনেকটা এর পরিচর্যার ওপর নির্ভর করে। পরিচর্যা বেশি হল আকার বড় হবে, কম হলে ছোট হবে।”
এছাড়া, গাছে যদি আমের ফলন বেশি হয়, তাহলেও আমের আকার কিছুটা ছোট হবে এবং ফলন কম হলে আকারও বড় হবে বলে তিনি জানান।
অন্য আমের চেয়ে আম্রপালি আম বেশি মিষ্টি।
আশ্বিনা : মৌসুমের শেষ আম হল আশ্বিনা আম। জুলাইয়ের ১০ তারিখ থেকে এটি সংগ্রহ করা শুরু হবে এবং অগাস্ট পর্যন্ত বাজারে এই আম পাওয়া যায়।
তবে এই আম দেখে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। কারণ আশ্বিনা আম আকারে বেশ বড় হওয়ায় অনেকেই এটিকে ফজলি আমের সাথে মিলিয়ে ফেলেন।
আশ্বিনা আম চিহ্নিত করার উপায়, আশ্বিনা আম দেখতে একটু বেশি সবুজ। এটি সাধারণত হলুদ হয় না। এছাড়া, এই আম পেটের দিক থেকে একটু মোটা।
এছাড়া, আশ্বিনা আমের খোসা অনেকটা মোটা এবং এর স্বাদ অনেকটা টক-মিষ্টি। আশ্বিনা ও ফজলী আম দেখতে অনেকটা একই রকম।
ছবির ক্যাপশান,আশ্বিনা ও ফজলী আম দেখতে অনেকটা একই রকম।
ফজলি :ফজলি আমের রঙ হলুদ হয় এবং আকারে লম্বা ধরনের হয়। ফজলি আম যখন বাজারে আসা শুরু করে, তখন আর অন্য আম খুব একটা বাজারে থাকে না।
আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এটি জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসে।
এই আম আকারে বেশ বড় হলেও ল্যাংড়া বা গোপালভোগ আমের মতো মিষ্টি না। এই আমের আকার এত বড় যে মাত্র একটি বা দু’টো আমেও এক কেজি হয়। এই আমে একদিকে যেমন অনে বেশি আঁশ, অপরদিকে এটি বেশ মিষ্টি।
কথিত আছে, ফজলি বিবি নামক এক বৃদ্ধার নাম অনুসারে এর নাম ফজলি রাখা হয়। কারণ এটিও ওই আঁটি আমের মতো। ফজলি বিবির বাড়িতে এই গাছ প্রথম দেখা যায়।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের অনেক স্থানে ফজলি আম হয়ে থাকে।
বারি আম-২ বা লক্ষণভোগ : এই আম চেনার একমাত্র উপায় হল, এটির গায়ে এক ধরনের নাক আছে। এই আম যখন পাকে, তখন এটি হলদে রঙ ধারণ করে।
চলতি বছরের ২৫শে মে থেকে রাজশাহীতে লক্ষণভোগ আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এই আমের মিষ্টতা অনেকটা কম হওয়ায় অনেকে এটি ডায়াবেটিস আমও বলে।
লখনা আম নামেও পরিচিত এই আমের খোসা কিছুটা মোটা, তবে আঁটি পাতলা। লক্ষণভোগ আমের গায়ে এক ধরনের নাক আছে।
বারি-৪ আম : বারি-৪ আম বাংলাদেশের কৃষি গবেষকদের উদ্ভাবন। আশ্বিনা আমের সঙ্গে বিদেশি একটি আমের সংকরায়নে এটি উদ্ভাবন হয়েছে। সাধারণত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই আম সংগ্রহ করা শুরু হয় এবং জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এই আম বাজারে আসা শুরু করে।
এই আম চিহ্নিত করা খুব সহজ। কারণ পাকা আমের রঙ একদম হলুদ বা সোনালি।
আঁশহীন এই আম খেতে খুব একটা মিষ্টি না। তবে এর আঁটি ছোট ও পাতলা হয়। বাংলাদেশের নওগাঁ জেলায় বারি-৪ আমের চাষ বেশি হয়। এছাড়া, এই আমের কাঁচা মিঠা স্বাদ থাকায় কাঁচা বারি-৪ আম অনেকের প্রিয়। একটি আমে অনেক ভিটামিন রয়েছে।
বারি-১৪ বা রঙিন আম :এটি দেশের বাইরে থেকে সংগ্রহ করা একটি আমের জাত। এর রঙ লালচে ধরনের। এই আম চেনার উপায়, এর গায়ে এক ধরনের মোমের আস্তরণ থাকে।
এর মিষ্টতা বারি-২ বা বারি-৪ আমের কাছাকাছি।
সূর্যডিম আম : এই আমের রঙও লাল, বলা হয়ে থাকে যে এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামী আম।
বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত আমের দাম জাতভেদে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ১০০ টাকা। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই আম ৫০০০-৬০০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।
বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে চাষ হচ্ছে।
জাপানি ভাষায় আমটিকে বলা হয় 'মিয়াজাকি'। বিশ্ববাজারে এটি 'রেড ম্যাঙ্গো' বা 'এগ অব দ্য সান' নামেও পরিচিত।
এই আমের গড়ন সাধারণ আমের চাইতে বড় ও লম্বা, স্বাদে মিষ্টি এবং আমের বাইরের আবরণ দেখতে গাঢ় লাল অথবা লাল-বেগুনির মিশ্রণে একটি রঙের।
এর স্বাদ মিষ্টি, তবে তা বারি-১৪ আমের তুলনায় বেশ কম বলে জানান ড. আলীম।
টকটকে লাল রঙ ও আকারে বড় হওয়ায় এই আমি এগ অব দ্য সান' বা সূর্যডিম নামে পরিচিত। কাটিমন আম আসলে থাইল্যান্ড থেকে আনা একটি বারোমাসি আমের প্রজাতি।
একে সুইট কাটিমনও বলে। বছর জুড়ে এই আম উৎপাদিত হয় বলে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এই আমের চাষ বাড়ছে।
এর স্বাদ ভালো, বেশ মিষ্টি হয় এবং এই আমে কোনও আঁশ থাকে না।
কাটিমন আম গাছে ফেব্রুয়ারি, মে ও নভেম্বর মাসে মুকুল আসে এবং মার্চ-এপ্রিল, মে-জুন ও জুলাই-অগাস্ট মাসে আম পাকে।
তবে মে থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশীয় নানা জাতের আম থাকার কারণে ফেব্রুয়ারি মাসে মুকুল ভেঙ্গে দেয়া হয়।
জাতভেদে আমের পুষ্টিগুণ আলাদা? উপরে বর্ণিত আমগুলো বাংলাদেশের বাজারে বেশ জনপ্রিয়। তবে এগুলোর বাইরেও বাংলাদেশে আরও অনেক আম আছে। যেমন- গৌড়মতী, ইছামতী, বোম্বাই ইত্যাদি।
এখন প্রশ্ন হল, জাতভেদে কি আমের পুষ্টিগুণও আলাদা?
এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম ও পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম, দু’জনেই জানিয়েছেন যে জাতভেদে পুষ্টিগুণে খুব একটা পার্থক্য নেই।
ড. আলীম বলেন, “সব আমের পুষ্টিগুণই মোটামুটি একইরকম। শুধু মিষ্টতায় প্রধান পার্থক্য। আর কাঁচা আমে ভিটামিন সি বেশি থাকে।”
এর আগে পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, শর্করা, আমিষ, ভিটামিন এ, বিটা ক্যারটিন, পটাশিয়াম ইত্যাদি থাকে।
তাই, কাঁচা আমের তুলনায় আঁশযুক্ত পাকা আম শরীরের জন্য বেশি ভালো।
তিনি বলেন, “পাকা আমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ জাতীয় উপাদান পেকটিন থাকে, যা পাকস্থলিতে থাকা খাদ্যকে ভালোভাবে পরিপাক হতে সাহায্য করে।”
এছাড়া, আমের বিশেষ কিছু এনজাইম খাদ্য উপাদানের প্রোটিনকে ভালোভাবে ভেঙে ফেলতে কাজ করে। যা সামগ্রিকভাবে পরিপাক ক্রিয়ায় অবদান রাখে।
আমে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও অন্যান্য ২৫ ধরনের ক্যারোটেনয়েডস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, আমে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ও চোখের চারপাশের শুষ্কভাবও দূর করে।
“ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে আম”, তিনি যোগ করেন।
কেন মৌসুমের আম মৌসুমেই খাবেন? : সব আম-ই পেকে গেলে কিছুটা হলদে বর্ণ ধারণ করে। আর আম পাকা কিনা তা বোঝার আরও একটি উপায় আছে। পাকা আম পানিতে রাখলে তা ডুবে যায়।
এখন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন যে আম পাকবে, তখন যদি সেই আম খাওয়া যায়, তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা আর ক্রেতাদের ঠকাতে পারবেন না।
ড. আব্দুল আলীম বলেন, ““ভোক্তাকে চিন্তা করতে হবে, কোন আম আগে খাবো, আর কোন আম পরে খাবো।”
“এখন গোপালভোগ আম খাওয়ার কথা চিন্তা করতে হবে, কারণ এই আম এখন এমনিতেই পরিপক্ক হয়ে গেছে। কোনোকিছু দিয়ে পাকানোর সুযোগ নাই।”
তিনি আরও বলেন, “এখন যদি কেউ বলে যে আমি ল্যাংড়া আম খাবো, তাহলে যারা অসাধু, তারা কেমিক্যাল দিয়ে ল্যাংড়া আমকে পাকিয়ে দিবে।”