logo
আপডেট : ১৮ জুন, ২০২৪ ১৭:৫২
জার্মানির একটি বৃদ্ধাশ্রমে বয়স্কদের সঙ্গে রোবট
অনলাইন ডেস্ক

জার্মানির একটি বৃদ্ধাশ্রমে বয়স্কদের সঙ্গে রোবট

জার্মানির একটি বৃদ্ধাশ্রমে বয়স্কদের সঙ্গে রোবটছবি: ডয়চে ভেলের ভিডিও থেকে নেওয়া

পেপার, জেমি ও ইয়ানি নামের রোবট বেশ ব্যস্ত। জার্মানির এরলেনবাখ শহরে কারিটাসের সেন্ট জন্স বৃদ্ধাশ্রমে মানুষের মতো দেখতে এই হিউম্যানয়েড রোবটগুলো কাজ করে।

সুসানে ক্যোনিশের মতে, এটা বড় একটা সুবিধা। কারণ, এভাবে তারা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের হৃদয় জয় করতে পারে। তিনি বলেন, ‘শারীরিক গঠনের সুবিধাও রয়েছে। কিছুটা শিশুর মতো। আমাদের বৃদ্ধ মানুষগুলো সব সময়ে বসে থাকেন। উচ্চতার দৌলতে রোবটগুলো তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে।’

প্রায় চার বছর ধরে পেপারকে সেখানে কাজে লাগানো হচ্ছে। সে সময়ে এই রোবটের দাম পড়েছিল প্রায় ৪০ হাজার ইউরো। সকালে ব্যায়ামের সময়েও সেই অর্থ উসুল হয়ে যায়। পেপার নির্দেশনা দেওয়ার সময়ে নার্সিং কর্মীরা বয়স্ক মানুষদের ব্যায়াম করতে সাহায্য করেন। পেপার না থাকলে সেটা সম্ভব হতো না।


পেপার ও অন্যান্য রোবট বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের ব্যস্ত রাখে। দুপুরে ঘুমের সময়েও রোবট তাঁদের ওপর নজর রাখে। কেউ ঘুম থেকে উঠে গেলে রোবট জেমি নার্সিং কর্মীদের সংকেত পাঠায়। ফলে মানুষ কর্মীরা কিছুটা বিশ্রাম পান। সুসানে ক্যোনিশ বলেন, সহকর্মীরাও অবশ্য বয়স্ক বাসিন্দাদের ওপর নজর রাখেন। কিন্তু এরই মধ্যে অনেক সময় তাঁদের অন্য কাজও সারতে হয়।

রোবট ইয়ানি শুধু নাচের মাধ্যমে মনোরঞ্জন দেয় না, ওষুধ খাওয়ার কথাও মনে করিয়ে দেয়। নার্সিং কর্মীদের সাধারণত সে সময়ে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন হয় না। সুযোগ পেলে ইয়ানি একাই সেই কাজ সামলাতে পারে। সেন্ট জন বৃদ্ধাশ্রমের কর্মী নিকোল স্ট্রেল-আবট বলেন, ‘আমরা এমনটা করি না। কারণ, যন্ত্র মানুষের বিকল্প হোক, আমাদের কাছে তা একেবারেই কাম্য নয়। কোনো না কোনো কর্মী সঙ্গে উপস্থিত থাকেন।’


বয়স্ক মানুষের সেবায় রোবট
পেপার, জেমি ও ইয়ানি কাগজে–কলমে নার্সিং রোবট হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। তাদের ক্ষমতা আসলে সীমিত।

ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রে কী সম্ভব হতে পারে, গার্মিশ-পার্টেনকিয়ার্শেন শহরে সে বিষয়ে গবেষণা চলছে। গার্মি নামের রোবট এমন সব মানুষকে দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করে, যাঁদের সহায়তা দরকার।

জেরিয়াট্রনিক্স গবেষণাকেন্দ্রের গ্যুন্টার স্টাইনেবাখ বলেন, ‘আমরা সেই লক্ষ্যই পূরণ করতে চাই। আমরা রোগীদের এমনভাবে সাহায্য করতে চাই, যাতে তারা যত দিন সম্ভব নিজেদের মর্জিমাফিক বাসায় থাকতে পারেন। সঙ্গে শুধু যান্ত্রিক সাহায্যের ব্যবস্থা থাকবে।’

বাসার কাজে রোবটের পুরোপুরি ব্যবহার সম্ভব করতে আরও অনেক সময় লাগবে। গার্মি এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি সেই রোবট টেলিমেডিসিনের ক্ষেত্রেও সহায়তা করতে পারবে, এমনটা আশা করা হচ্ছে।

ড. আবদেলজলিল নাসেরি প্রায় চার বছর ধরে নিজের টিম নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। রোবোটিকস ও এআই কীভাবে স্বাস্থ্য ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে সার্থকভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটাই তাঁদের গবেষণার বিষয়। ধারাবাহিকভাবে গার্মির উন্নতি ঘটানো হচ্ছে। সেই রোবট, এমনকি রোগীর প্রয়োজনও শনাক্ত করতে পারছে।

ড. নাসেরি বলেন, ‘এই রোবট মুখের অভিব্যক্তি চিনতে পারে। আনন্দ, ব্যথা ইত্যাদি টের পায়। রোগী কেমন বোধ করছেন, রোবট তা বুঝতে পারে। সেই অনুযায়ী রোবট পদক্ষেপ নিতে পারে। এ ছাড়া পড়ে যাওয়ার মতো দৃশ্যমান ঘটনাও সে বুঝতে পারে।

রোবট সরাসরি প্রশ্নও করতে পারে। রোগী যদি বলে পিপাসা পাচ্ছে, গার্মি তখন প্রশ্ন করে, তুমি কি এক বোতল পানি নাকি গরম চা পান করতে চাও? কেউ যদি বলে ঠান্ডা লাগছে, তখন গার্মি বলে, আমি কি একটা চাদর নাকি জ্যাকেট নিয়ে আসব?’
খুদে সাহায্যকারীরা নার্সিং কর্মীদের কাজের বোঝা কিছুটা কমাচ্ছে এবং অবশ্যই সবার মনে বেশ আনন্দ দিচ্ছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে