logo
আপডেট : ১৯ জুন, ২০২৪ ১২:৩১
আশীর্বাদ বিভ্রাট
তফিল উদ্দিন মণ্ডল

আশীর্বাদ বিভ্রাট

আমি বরাবরের মতই বাড়ির সামনে আমগাছের নিচে টঙের উপর পা দুলিয়ে বসে হাওয়া সেবন করছিলাম। পাশের রাস্তা দিয়ে ছাতায় মুখ আড়াল করে কে একজন হেঁটে যাচ্ছিলো। আমি কৌতূহল বশত তাকে ডাক দিলাম, কে ও।
সে ছাতাটা ঘুরিয়ে আমাকে দেখলো। আস্তে আস্তে আমার কাছে চলে এলো। রোদে ঘেমে গেছে। পাতলা হাওই শার্টটা চপচপে ঘামভেজা।
বললাম - সদরুল, তোমার এ অবস্থা কেন? বসো বসো। একেবারে ঘেমে নেয়ে গেছো তো দেখছি।
সদরুল বসলো, আমি বললাম, পানি খাবে? সে মাথা নেড়ে না করলো।
বললাম,  বলো তো, কোথায় গিয়েছিলে? কেন গিয়েছিলে?
 সদরুল বললো, চাচা, সে কথা আর বলবেন না। তবে পুছ  করছেন যেহেতু সেহেতু কোথায় এবং কেন গিয়েছিলাম তা আপনাকে তো বলতেই হয়।
আমি বললাম,  গুরুতর কিছু?
সদরুল বললো, না, তেমন নয়। গিয়েছিলাম আমাদের হেড স্যারের কাছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা শুরু হবে তাই ভাবলাম স্যারকে সালাম করে দোয়া নিয়ে আসি।
- সে তো ভাল কথা। এর মধ্যে সমস্যা কোথায়?
- চাচা, সমস্যা কিছু না। আবার বিরাট সমস্যা।
আমি কৌতূহলী হয়ে উঠলাম। বললাম,  বিরাট সমস্যাটার মানে বুঝলাম না।
সদরুল বললো, চাচা, আমি হেড স্যারের বাড়িতে গেলাম। স্যার আমাকে পরম আদরে কাছে ডেকে নিলেন। আমি স্যারের পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। স্যার স্নেহভরে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, কামিয়াব হও বাবা। আমার মাথায় যতচুল তোমার তত পরমায়ু হোক।
আমি বললাম-একজন স্যার তো তাঁর ছাত্রের জন্য এমনটিই দোয়া করবেন। এটাই তো স্বাভাবিক। 
সদরুল বললো, সেটা ঠিক আছে চাচা।  কিন্তু 
-কিন্তু আবার কি?
- আমাদের হেড স্যারের মাথায় তো একটি চুলও অবশিষ্ট নেই। তাঁর দোয়া যদি আল্লাহ কবুল করেন তাহলে তো আমাকে স্যারের আঙিনাতেই ঠাস করে পড়ে মরার কথা। তাই ভয়ে ভয়ে রাস্তা চলছি আর মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, হে আল্লাহ!  কত বান্দার দোয়াই তো তোমার দরবারে কবুল হয় না। তুমি আমার হেড স্যারের এই দোয়াটা অন্তত কবুল করো না। তাঁর টেকো মাথার চুলের শূন্য সংখ্যার সমান যদি  আমার পরমায়ু হয় তাহলে আমার ম্যাট্রিক পরীক্ষাও তো দেয়া হবে না। আমার জীবনের সকল সাধ আহ্লাদের এখনই পরিসমাপ্তি ঘটবে।
আমি সদরুলের এহেন বোধ ও বিবেচনা শক্তিতে বিস্মিত হয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম।