দেশে ফিরেছে ক্রিকেট দল।অ্যান্টিগা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি, এরপর দুবাই হয়ে ঢাকা—টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে ঢাকায় পৌঁছানো বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের চোখেমুখে স্বাভাবিকভাবেই ছিল ভ্রমণক্লান্তির ছাপ। সঙ্গে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষটা ভালো না হওয়ার হতাশা তো আছেই। দেড় মাসের দীর্ঘ সফর শেষে আজ সকালে ঢাকায় ফেরা বেশির ভাগ ক্রিকেটারকে দেখে এমনই মনে হচ্ছিল। দলের সঙ্গে আজ ঢাকায় ফেরেননি লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। সাকিব গতকালই ঢাকায় এসেছেন। সৌম্য ও লিটন আসবেন আগামীকাল। এ ছাড়া কোচিং স্টাফের সদস্যরা দুবাই থেকে যে যার মতো ছুটিতে গেছেন।
আজ দেশে ফিরে দলের প্রতিনিধি হিসেবে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বারবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার এইট পর্বের শেষ ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনেছেন।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্সের প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তাসকিন প্রথমেই বললেন, ‘না, আসলে সত্যি কথা বলতে, ভালোর তো শেষ নেই। হ্যাঁ, আরও অনেক ভালো হতে পারত। বিশেষ করে শেষ ম্যাচটা, আমরা সবাই একটু হতাশ হয়েছি। আমরা জেতার চেষ্টা করেছি প্রথমে, ১২ ওভারের মধ্যে, যখন বুঝতে পারলাম ১২ ওভারের মধ্যে শেষ করা সম্ভব না, তখন স্বাভাবিকভাবে খেলার চেষ্টা করেছিল সবাই। তাও জিততে পারিনি।’
তাসকিন যোগ করেন, ‘হ্যাঁ, ইতিবাচক দিক আছে। পুরো টুর্নামেন্টে বোলিং যথেষ্ট ভালো করেছে। সুপার এইটে এসেছি। সর্বপ্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা তিনটা জয় পেয়েছি। মানে পজেটিভ আছে। কিন্তু নেগেটিভের সংখ্যাটা একটু বেশি। সবার মতো আমরাও জানি, প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো হয়নি।’
বোলিং বিভাগের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স নিয়ে তাসকিনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, ‘বোলিং ইউনিট আগাগোড়াই কয়েক বছর ধরে ভালো করছে। সে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। সামনে আরও ভালো হবে। ভালোর তো শেষ নেই।’
বোলিংয়ের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দলের ব্যাটিং ব্যর্থতার বিষয়টিও এসেছে তাসকিনের কথায়, ‘আর ব্যাটিং, বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রে যখন খেলা হয়েছে, তখন উইকেট ব্যাটসম্যানদের পক্ষে কম ছিল। আপনারা যদি পরিসংখ্যান দেখেন, অন্য দেশের বড় বড় ব্যাটসম্যানকেও সেখানে ধুঁকতে হয়েছে। সেখানে বোলারদের একটু বাড়তি সুবিধা ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়ার পর আমরা কিছুটা ভালো উইকেটে খেলেছি।’ পরে এ কথাও বলেছেন, ‘কিন্তু আমি বাংলাদেশ দলের হয়ে ক্রিকেট খেলার সময়, লাস্ট ১০ বছর ধরে খেলছি, কখনোই এত লম্বা ব্যাডপ্যাচ দেখিনি। আশা করি এটা কাটিয়ে উঠবে।’
এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলারদের তালিকার শীর্ষ দশে আছেন রিশাদ হোসেন ও তানজিম হাসান। দুজনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রথমবারের মতো তাসকিনের মুখে হাসি ফুটল, ‘তানজিম সাকিব, রিশাদ লিডিং উইকেট টেকারদের মধ্যে ছিল, টপ ফাইভে। সব মিলিয়ে ভালো করেছে। এটা খুবই ইতিবাচক যে বাংলাদেশ থেকে ভবিষ্যতের তারকা উঠে আসছে। এর মধ্যে বিশ্বকে বোঝানো হয়েছে, আমাদের মধ্যে সামর্থ্য আছে।’
পরের কথায় আবার আফগানিস্তান ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনেছেন তাসকিন, ‘এখন আসলে আমরা সবাই ব্যথিত, সমর্থকরাও। বিশেষ করে কয়েকটা ম্যাচ আমাদের জেতার কথা ছিল, পারিনি। শেষ ম্যাচটা আমরা ১২.১ ওভারে আমাদের সবারই পরিকল্পনা ছিল জেতার। আমরা সে ইনটেন্ট নিয়েই খেলা শুরু করেছি। একটা পর্যায়ে যখন দেখলাম যে হবে না ১২ ওভারে, তখন স্বাভাবিকভাবে জেতার চেষ্টা করা হয়, তারপর আমরা ওটাও চেষ্টা করে পারিনি।’
বিশ্বকাপজুড়ে দুই অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসানের ফর্মহীনতা দলকে কতটা ভুগিয়েছে,এ বিষয়ে তাসকিনকে জিজ্ঞেস করা হলেও রাখঢাক না রেখে উত্তর দিয়েছেন এই পেসার। তাঁর কথা, ‘দুজন সিনিয়রের ফর্মে না থাকা অবশ্যই প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু মাঠের বাইরে প্রভাব পড়েনি। ৪৭ দিন একসঙ্গে ছিলাম, সবাই একসঙ্গে ছিলাম। অফ দ্য ফিল্ডে সব ভালো ছিল। দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা অফ ফর্মে থাকলে ওই দলে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আশা করছি দ্রুত সামনে এসব কাটিয়ে উঠব।’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সামগ্রিক উন্নতির প্রসঙ্গেও আশার কথা শুনিয়েছেন তাসকিন, ‘ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। টি-টোয়েন্টিতে আমরা আগে থেকেই অনেক পিছিয়ে ছিলাম। সেখান থেকে উন্নতি তো হচ্ছে। শুধু মাইনাস পয়েন্ট দেখলে তো হবে না। এমনিতেই মাইনাসেই আছি। প্লাসে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। করেই যাব। আপনারা হতাশ হচ্ছেন, স্বাভাবিক। আবার আমরা আপনাদের ভালো জয় উপহার দেব। বিশ্বাস রাখেন আমাদের ওপর।’