শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ ছাড়লেন কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীরা তারা বলছেন সংসদে আইন পাস না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে চার ঘণ্টা রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে এই ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভ মিছিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা এবং আন্দোলনে বাধা দেওয়ার নিন্দা জানানো হবে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ থেকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিকেল ৫টার দিকে শাহবাগ অবরোধ করেন তারা। পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগেই অবস্থান নেন।
বিক্ষোভ মিছিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা এবং আন্দোলনে বাধা দেওয়ার নিন্দা জানানো হবে।
রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমম্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামীকাল (শুক্রবার) বিকেল ৪টায় দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হবে। কোটা সরকারের নীতির বিষয়। কোন জনগোষ্ঠী কত শতাংশ কোটা পাবে, তা সরকারের নির্ধারণ করবে। ২০১৮ সালের পরিপত্রে ত্রুটি ছিল বলেই তা হাইকোর্টে অবৈধ বলে ঘোষিত হয়েছে। সরকারই সে সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা শুরু থেকেই দেখছি, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা হাইকোর্ট দেখিয়ে আন্দোলন নিয়ে টালবাহানা করছেন। তারা হাইকোর্টের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিচ্ছেন।
সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইন পাস করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। কর্মসূচি ঘোষণার সময় নাহিদের সঙ্গে ছিলেন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদ প্রমুখ।
শিক্ষার্থীরা গত কয়েকদিন ধরে এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। তা হলো- সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটা ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা সংস্কার করা। সেক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান, প্রতিবন্ধী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটার প্রস্তাব করেছেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। কোটা সংস্কারের দাবির পাশাপাশি এই হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল বিকেল চারটায় সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হবে।
হামলা চালিয়ে ও ভয় দেখিয়ে আন্দোলন দমন করা যাবে বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করে চূড়ান্তভাবে কোটা সমস্যার সমাধান করতে হবে। শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি নয়, সব সরকারি চাকরিতে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা রেখে বাকি সব পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
আন্দোলনকারীদের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, কোথাও আন্দোলনে বাধা দেওয়া হলে সম্মিলিতভাবে তা মোকাবিলা করা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে জনগণের যে ভোগান্তি হচ্ছে, তার দায় সরকারের। সরকার কোটার যৌক্তিক সংস্কার করলে তাদের এই আন্দোলন করার প্রয়োজন পড়ত না। তাঁদের আন্দোলনে জনগণের সমর্থন রয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত রোববার ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করেছেন তাঁরা। প্রথম দুই দিন রবি ও সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার গণসংযোগ কর্মসূচি পালনের পর গতকাল বুধবার আবার সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। তাঁদের এ কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে রাজধানী অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অবরোধে সড়কে যানবাহন আটকে থাকায় দিনভর চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় রাজধানীবাসীকে।
আজ বেলা সাড়ে তিনটা থেকে আবারও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। অন্যান্য দিনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসার কথা ছিল তাঁদের। তবে দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি হওয়ায় এই জমায়েত কিছুটা পিছিয়ে যায়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে গ্রন্থাগারের সামনে থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে আসেন।
আজ সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করতে আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও এ বিষয়ে কথা বলেন। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দেওয়ায় কোটা এখন কার্যকর হচ্ছে না। তাই জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মতো কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তাঁরা।
এই পরিস্থিতিতে বিকেলে শাহবাগ এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করতে দেখা যায়। সেখানে পুলিশের জলকামান ও সাঁজোয়া যানও রাখা হয়েছিল। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে যাওয়ার পথে বাধা তৈরি করেছিল পুলিশ। তবে পুলিশের প্রতিবন্ধকতা ভেঙে চলে আসেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা শাহবাগ মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনের সড়কে অবস্থান নেন।
পুলিশের বাধায় ঢাকা কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শাহবাগের এই অবস্থানে যোগ দিতে পারেননি। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সেখানে যোগ দেন। রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে নানা স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ‘বাধা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘একসঙ্গে লড়াই করো বৈষম্য দূর করো’, ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীদের এই অবস্থানে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হলেও পাশের ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় সচল ছিল। তা ছাড়া আজ শাহবাগ ছাড়া ঢাকার অন্য কোথাও অবরোধ হয়নি। সে কারণে জনদুর্ভোগ গতকালের তুলনায় কম হয়।