ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছেই। তিন ঘণ্টায়ও থামেনি সেখানকার সংঘর্ষ। ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা রাত ৮টার পরেও হলের বাইরের সড়কে অবস্থান নিয়ে আছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কেউ হলের বাইরে বের হলে তার ওপর হামলা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে হলের ভেতর অবস্থান নিয়ে আছেন আন্দোলনকারীরা।
আজ সোমবার বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সড়ক, মল চত্বর এবং এর উত্তর দিকের হলগুলোর সামনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হটলে তাদের ধরে ধরে মারধর করা হয়।
আহত শতাধিক শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকেল ৪টার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ মেডিকেলের আশপাশে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে সেখানে আবার দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।
এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে গিয়ে অবস্থান। আর হলের বাইরে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দুই পক্ষ নিজেদের অবস্থান থেকে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। বিকেল ৫টার ওই এলাকায় অন্তত দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
সংঘর্ষ হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এলাকায়ও।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় দোয়েল চত্বরে দেখা যায়, শহীদুল্লাহ হলের ছাদ থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এ কারণে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা সামনে এগোতে পারছিলেন না। যদিও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা দোয়েল চত্বরে জড়ো হচ্ছিলেন।
শহীদুল্লাহ হল ও বার্ন ইনস্টিটিউটের মাঝামাঝি স্থানে দেখা যায়, সেখানে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা হেলমেট পরে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা হলের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। তবে হলের ফটকে ও ভবনের ছাদে থাকা আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছিলেন।
সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সেখানে পুলিশ সদস্যরা আসেন। এরপরও সংঘর্ষ চলতে থাকে।
রাত ৮টার দিকে শহীদুল্লাহ্ হলের প্রাধ্যক্ষ জাভেদ ইসলাম পাটোয়ারী হলের ফটকের সামনে এসে হাত মাইকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁর উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন৷
প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি শুধু শহীদুল্লাহ্ হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলব। যাঁরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি হলের শিক্ষার্থী যাঁরা আছেন তাদের হলের ভেতরে যেতে অনুরোধ করেন। আর যাঁরা অন্য হল বা অন্য জায়গার আছেন তাদেরকে নিজেদের গন্তব্যে চলে যেতে বলেন।
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলতে থাকেন, বহিরাগত লোকজন এসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। তাঁরা এর বিচার চান।
রাত সোয়া ৮টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শহীদুল্লাহ্ হলের ফটকে অবস্থান করছেন। আর বার্ন ইনস্টিটিউটের মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন৷ দুই পক্ষের মধ্যে ইট ছোড়াছুড়ি চলছে৷
আর পুলিশ সদস্যরা হলের বাইরে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে আছেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষার্থী টিএসসি থেকে পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন তাঁকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। এতে ওই ছাত্রের মাথা ফেটে রক্ত বের হয়। তাঁকে রিকশায় করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।