logo
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০২৪ ০৯:১৩
আহত পুলিশদের বয়ান : পুলিশ দেখেই হামলা করেছে বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক

আহত পুলিশদের বয়ান : পুলিশ দেখেই হামলা করেছে বেশি

পুলিশ সার্জেন্ট সৈয়দ মাসুদুর রহিম ও পুলিশ সদস্য মো. মোতালেব

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়েছে। খবর শুনে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মহিউদ্দিন মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটে যান উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকায়। একদল লোক তাঁকে ধাওয়া দিলে তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের দিকে যান। হাসপাতালের কাছে আসতেই মহিউদ্দিনকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু হয়।

দৌড়ে পালিয়ে এসে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের রান্নাঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেন। সেটির দরজা ভেঙে ঢুকে আবার মারধর করা হয়। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন মহিউদ্দিন। তখন বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাঁকে হাসপাতালে পাঠান। অ্যাম্বুলেন্সটি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সামনে আসতেই পুলিশ পরিচয় জেনে আবার হামলা চালানো হয়। সেখান থেকে দৌড়ে হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি।
রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মহিউদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার  এভাবেই ১৮ জুলাই তাঁর ওপর হামলার বর্ণনা দেন। মহিউদ্দিন বলেন, ‘কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ভেতরেও আমার ওপর হামলা হয়। আমার চিকিৎসা করলে হাসপাতালে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, হামলাকারীরা তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে রাখা বিক্ষোভকারীদের লাশের পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল।
হামলায় মাথায় আঘাত পেয়েছেন মহিউদ্দিন। ভেঙে গেছে ডান হাত ও দুই পা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি বলেন, ‘প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে পড়ে ছিলাম।’
শুধু এএসআই মহিউদ্দিন নন, ১৬ থেকে ২০ জুলাই সংঘর্ষে আহত ২৫৯ জন পুলিশ সদস্য কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসা শেষে অনেকেই বাসায় ফিরে গেলেও এখনো চিকিৎসাধীন ৫৮ জন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।

গতকাল কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় হামলায় আহত ছয় পুলিশ সদস্যের সঙ্গে। সংঘর্ষ চলাকালে তাঁরা কেউ যাত্রাবাড়ী, কেউ রামপুরা ও উত্তরায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে, কেউ দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হন। আহত পুলিশ সদস্যদের বেশির ভাগই মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তাঁরা বলছেন, হেলমেট খুলে রড, পাইপ ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে।
রামপুরার বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন খিলগাঁও থানার পুলিশ কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম। ১৮ জুলাই রামপুরা ব্রিজের ওপর পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় রাস্তায় পড়ে যান তিনি। তাঁর মাথায় রড, পাইপ দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। মাথায় ৬০টি সেলাই লেগেছে।
ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় কাজ করেন উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ আল কাইয়ুম। রাত্রিকালীন দায়িত্ব পালন (নাইট ডিউটি) শেষে ১৯ জুলাই সকালে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার বাসায় ফিরছিলেন। পরনে ছিল পুলিশের প্যান্ট। সেই প্যান্ট দেখেই তাঁর ওপর হামলা করে একদল লোক। মাথায় গুরুতর আঘাত পান কাইয়ুম। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কাইয়ুম বলেন, বাঁশ-লাঠি দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। ৪৫টি সেলাই পড়েছে তাঁর মাথায়।
একজন ভিআইপির নিরাপত্তাবহরে দায়িত্ব পালন শেষে ১৮ জুলাই বাসায় ফিরছিলেন পুলিশ কনস্টেবল মো. মোতালেব। যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় তাঁর বাসা। কোমরে থাকা পিস্তল দেখে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। মো. মোতালেব বলেন, চায়নিজ কুড়াল দিয়ে তাঁর মাথার বাঁ পাশে কোপ দেওয়া হয়। অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। এরপর আর কিছু তাঁর মনে নেই।
ঢাকার আফতাবনগর থেকে কর্মস্থল ওয়ারীতে যাচ্ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সৈয়দ মাসুদুর রহিম। পথে তাঁর ওপর হামলা হয়। তাঁর ডান হাত, ডান পা ভেঙে যায়। মাথায় লেগেছে আটটি সেলাই। ব্যান্ডেজে মোড়ানো দেখে মাসুদুরের ছোট দুটি মেয়ে ভয়ে তাঁর কাছে আসতে চাইছিল না।
আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা নিয়ে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক ও উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শেখ মো. রেজাউল হায়দার  বলেন, মেরে ফেলার ‘টার্গেট’ নিয়ে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করা হয়েছে। হাসপাতালে আসার দেড় থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই আহত সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেরি হলে অনেককে বাঁচানো যেত না বলেও জানান তিনি।
সূত্র : প্রথম আলো