বিপিএলের এবার ১১তম আসর বসবে। এর আগে ১০টি আসর পার করে ফেললেও দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটি এখনো ধুঁকছে। নানা বিতর্ক আর সমালোচনা এর সঙ্গী। বিপিএল মানে যেন ‘বিতর্ক প্রিমিয়ার লিগ’, বিপিএল মানে যেন ‘বকেয়া প্রিমিয়ার লিগ’!
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাহায্য নিয়ে ফারুক আহমেদের বিসিবি এবার চেষ্টা করছে সব বিতর্ক ঝেড়ে ফেলে একটা নতুন বিপিএল উপহার দিতে। তা করতে গিয়ে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে টুর্নামেন্টটির সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোয় এবং সেটি করা হচ্ছে খোদ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিকল্পনা অনুযায়ী।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ ও বিপিএল সামনে রেখে আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সভাপতি ফারুক আহমেদসহ বোর্ডের আরও কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে সভা করেছেন, যেখানে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় নতুন বিপিএলের একটা প্রেজেন্টেশনও বিসিবির বিপিএল বিভাগ থেকে ক্রীড়া উপদেষ্টাকে দেখানো হয়েছে।
সভা শেষে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ক্রীড়া উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পরিবর্তিত সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিপিএলকে কীভাবে মানুষের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত করা যায়, সেটাই আমরা চেষ্টা করছি।’
বিপিএলের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিপিএলকে একটা টুর্নামেন্ট হিসেবে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে চাই। বিসিবি অবশ্যই বড় ভূমিকাটা রাখবে। তবে আমার মনে হয়েছে, আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু অলিম্পিকের মতো ইভেন্টের ডিজাইনে সাহায্য করতেন, তিনি সর্বশেষ অলিম্পিকেও বড় একটা ভূমিকা রেখেছেন, বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টে আমরা যদি তাঁর সেই অভিজ্ঞতা ব্যবহার না করি, সেটা দুর্ভাগ্যজনক হবে।’
এই চিন্তা থেকেই ক্রীড়া উপদেষ্টা সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দেন বিসিবির কর্মকর্তাদের। যেখানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বিপিএলে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর এবং নতুনত্ব আনার তাৎক্ষণিক কিছু ধারণা দেন। সেসব নিয়েই একটা প্রাথমিক প্রেজেন্টেশন দাঁড় করায় বিসিবির বিপিএল বিভাগ। দু–তিন দিনের মধ্যে এটা নিয়ে আবারও প্রধান উপদেষ্টার সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে বিসিবি ঠিক করবে চূড়ান্ত পরিকল্পনা।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিপিএলকে কীভাবে আন্তর্জাতিকভাবে আরও স্বীকৃত করা যায় এবং কী কী নতুনত্ব যুক্ত করা যায়, তা থেকে বিসিবি আজ একটা প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। স্যারও আরও বিস্তারিত আইডিয়া দিয়েছেন। দিন দুয়েকের মধ্যে আমরা আবারও বসব। আমরা চাই এবারের বিপিএলটাকে নতুন করে সাজাতে এবং এবারের বিপিএল যেন আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসে।’
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ ও বিপিএল সামনে রেখে আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম পরিদর্শনে যান ক্রীড়া উপদেষ্টা
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ ও বিপিএল সামনে রেখে আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম পরিদর্শনে যান ক্রীড়া উপদেষ্টাপ্রথম আলো
কীভাবে তা করা হবে, সেটা নিয়ে এখনই বিস্তারিত না জানালেও সামান্য ধারণা দেওয়া হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। ক্রীড়া উপদেষ্টা যেমন বলেছেন, দর্শকদের আগ্রহ ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে দেশের সেলিব্রেটি এবং কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
এ ব্যাপারে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘নতুন শুরু সব সময়ই করা যায়, যেখান থেকে আমরা উত্তরোত্তর ভালো করতে পারি। চমৎকার কিছু আইডিয়া আছে। আমরা চেষ্টা করব সেগুলো বাস্তবায়ন করতে। আপনারা এই বিপিএলে অবশ্যই নতুন কিছু দেখতে পাবেন, যেটাতে আপনাদের সম্পৃক্ততা থাকবে। দর্শক, মিডিয়া…সবাই যেন টুর্নামেন্টটার সঙ্গে সম্পৃক্ততা অনুভব করে।’
স্টেডিয়াম সংস্কার প্রসঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, বিপিএল সামনে রেখে প্রাথমিক কিছু কাজ করা হবে। পরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পরিসর আরও বাড়ানোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হতে পারে।
দেশের অব্যবহৃত স্টেডিয়ামগুলোও সংস্কার করে সেগুলোতে আবার খেলা শুরুর কথাও বলেছেন আসিফ মাহমুদ। নতুন স্টেডিয়াম বানিয়ে অর্থ অপচয়ের চেয়ে পুরোনো স্টেডিয়ামগুলোকেই নতুন প্রাণ দেওয়ার পক্ষে তিনি।
নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রিকেট–সুবিধা দেখে এসেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, ‘সেখানে পুরো স্টেডিয়ামে একই রকম ঘাস। আমাদের এখানে ওরকম না। দুবাইয়ের মাঠে মাত্র ৭ থেকে ৮ জন স্টাফ। আমাদের এখানে ৯০ জন। কিন্তু ফলাফল (কাজের মান) তো ওরকম নয়।’
বাংলাদেশের স্টেডিয়ামগুলোর আরেকটি বড় সমস্যা—এগুলো ঠিক দর্শকবান্ধব নয়। মৌলিক সুযোগ–সুবিধার অভাব আরও প্রকট হয়ে ওঠে যখন খেলার সময় গ্যালারিতে অতি উচ্চমূল্যে নিম্নমানের খাবার কিনে খেতে হয়।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টাপ্রথম আলো
এ ব্যাপারে ক্রীড়া উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘স্টেডিয়ামগুলোকে দর্শক উপযোগী করতে খুব ছোট ছোট কিছু কাজ করা দরকার। এদিকে মনোযোগ দেওয়াটা জরুরি। বিসিবি এটাতে গুরুত্ব দেবে আশা করি। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সবার সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সে জন্য দর্শকদের সুবিধাটাই আগে দেখতে হবে।’
সব ঠিক থাকলে আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা সাত ফ্র্যাঞ্চাইজির বিপিএল। তার আগে আগামীকাল হবে প্লেয়ার্স ড্রাফট।