ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন ইসরায়েলের হামলাকে ‘অতিরঞ্জিত কিংবা কমিয়ে’ দেখা ঠিক হবে না। তিনি তাৎক্ষণিক কোন প্রতিশোধ বা পাল্টা পদক্ষেপের কথাও বলেননি।
প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান অবশ্য বলেছেন ইরান ওই হামলার ‘যথাযথ জবাব দিবে’। তবে তিনি বলেছেন যে তেহরান যুদ্ধ চায়নি। শনিবারের ওই হামলায় ইরানের চার সেনা নিহত হয়েছে।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন যে ইসরায়েলের হামলার খবর তারা কয়েক ঘণ্টা আগেই পেয়েছিলেন।
ইসরায়েল বলছে ইরানের করা হামলার জবাব দিতে তারা দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। গত পহেলা অক্টোবর ইরান ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় দুশো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিলো।
রোববার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সিস্টেম বিকল করে দিয়েছে। তিনি বলেন হামলায় ইরানের প্রতিরক্ষা এবং ক্ষেপণাস্ত্র বানানোর সক্ষমতার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
“হামলাটি ছিলো সুনির্দিষ্ট ও শক্তিশালী এবং লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে,” নেতানিয়াহু এক অনুষ্ঠানে বলছিলেন। গত বছরের সাতই অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহতদের স্মরণে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো।
“সরকারকে (ইরানের) অবশ্যই একটি সহজ নীতি অনুধাবন করতে হবে: যেই আমাদের আঘাত করবে, আমরা তাকে আঘাত করবো”।
ইরানের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে ইসরায়েলের হামলার প্রভাবকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। তারা বলেছেন বেশীরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রকে রুখে দেয়া হয়েছে। আর যেগুলো ঠেকানো যায়নি সেগুলো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সামান্য ক্ষতি করেছে।
ওই হামলার পর প্রথমবারের মতো মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, “এটা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবেন যে তারা কীভাবে ইরানি জনগণের ইচ্ছে ও শক্তিকে ইসরায়েলি সরকারের কাছে পৌঁছে দিবেন এবং দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষায় ব্যবস্থা নিবেন”।
প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানও তার দেশের সর্বোচ্চ নেতার সুরেই কথা বলেছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেছেন: “আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু আমাদের দেশ ও জাতির অধিকারকে সমুন্নত রাখবো”।
তবে পর্যবেক্ষকরা যেভাবে চিন্তা করেছিলেন তার চেয়ে ইসরায়েলের হামলার মাত্রা ছিলো অনেকটাই সীমিত। যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যেই ইরানের তেল ও পরমাণু স্থাপনায় হামলা না করার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ তৈরি করেছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি রবিবার বলেছেন ইসরায়েলের হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই তারা বিষয়টি নিয়ে ‘ইঙ্গিত পেয়েছিল’।
“আমরা সন্ধ্যা থেকেই রাতের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে ইঙ্গিত পাচ্ছিলাম,” আব্বাস আরাঘচি সাংবাদিকদের বলেছেন। তবে এর বিস্তারিত কোন তথ্য তিনি দেননি।
পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের ওই হামলার পাল্টা কোন পদক্ষেপ না নেয়ার জন্য ইরানের প্রতি আহবান জানিয়েছে। তাদের আশংকা পাল্টাপাল্টি হামলার যে চক্র তা ওই অঞ্চলকে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম হামলার পর স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ফুটেজ প্রচার করেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন এটি জনগণকে আশ্বস্ত করার জন্য ইচ্ছে করেই করা হয়েছে।
এদিকে লেবাননে ইসরায়েল ও ইরান সমর্থিত হেজবুল্লাহ এবং গাজায় ইসরায়েলের সাথে হামাসের লড়াই অব্যাহত আছে।
রবিবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত আট জন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পরে লেবানন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে দেশটির দক্ষিণে ওই হামলায় মোট একুশ জন নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে গাজায় আল শাতি শরণার্থী শিবিরের একটি স্কুল-কাম-আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলার নয় জন নিহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের গণমাধ্যম ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে নিহতদের মধ্যে তিনজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক।
অন্যদিকে তেল আবিবে একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে একটি ট্রাক বাসকে আঘাত করলে একজন নিহত ও ত্রিশ জন আহত হয়। তবে কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাকে ‘সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হামলা’ মনে করছে।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি রবিবার গাজায় দুদিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে চারজন ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেছেন দশ দিনের মধ্যে এ ধরনের সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর একে স্থায়ী করার বিষয়ে আলোচনা শুরু করা উচিত।
যদিও বিবিসি আরবি বিভাগকে হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য তাদের দেয়া শর্ত ইসরায়েল কয়েক মাস ধরে নাকচ করে আসছে এবং সে অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি।
সামি আবু যুহরি বলেন তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং বন্দী বিনিময় চুক্তির দাবিতে অটল আছেন।
“এসব শর্ত পূরণের নিশ্চয়তা না পেলে যে কোন চুক্তিই অর্থহীন”।
প্রসঙ্গত গত বছরের সাতই অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় বারশ মানুষ নিহত হয়েছিলো এবং জিম্মি করা হয়েছিলো আরও ২৫১ জনকে।
এরপর গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ৯২৪জনের মৃত্যু হয়েছে বলে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।