স্ত্রীর বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ নয়, বলল এলাহাবাদ হাই কোর্ট
সম্প্রতি এক মামলার প্রেক্ষিতে বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে এলাহাবাদ হাই কোর্ট পর্যবেক্ষণ করে, 'স্ত্রীর বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ নয়'। উল্লেখ্য, স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক এবং মৌখিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে এলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক মহিলা। অভিযোগ ছিল, ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন তাঁর স্বামী। সেই মামলা চলাকালীনই বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে এহেন পর্যবেক্ষণ করল এলাহাবাদ উচ্চ আদালত।
বিচারপতি মিশ্রের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে যে আবেদনগুলি করা হয়েছে, তা এখনও বিচারাধীন। দেশে এখনও বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়নি। এই আবহে স্ত্রীর বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হলে বৈবাহিক ধর্ষণের জন্য কোনও ফৌজদারি শাস্তির বিধান নেই।
উল্লেখ্য, বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার দাবি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা হয়েছে। এই আবহে বৈবাহিক ধর্ষণ ইস্যুতে 'ব্যতিক্রমে'র সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে দাখিল করা পিটিশনের জবাব দিতে বলা হয়েছিল কেন্দ্রকে। তাতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেছিলেন, এই ইস্যুটির প্রভাব পড়বে সমাজে।
এর আগে ২০১৭ সালে আদালতে হলফনামা দিয়ে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার বিরোধিতা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। পরে আবার কেন্দ্র জানায়, বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে মত পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও প্রস্তাবিত ভারতীয় ন্যায় সংহিতাতে এই সংক্রান্ত কোনও ধারা বা আইন নেই বলেই জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭৫ ধারায় বৈবাহিক ধর্ষণ সংক্রান্ত ‘ব্যতিক্রমে’র আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে দেশের বহু উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছিল। বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার আবেদনের প্রেক্ষিতে দিল্লি হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি ভিন্ন রায় দিয়েছিলেন। এরপরই সুপ্রিম কোর্টে একটি আপিল দায়ের করা হয়েছিল এই নিয়ে।
এর আগে বহুদিন ধরেই দিল্লি হাই কোর্টে বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে মামলা চলেছিল। তবে উচ্চ আদালতের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে কোনও রায় দিতে পারেনি। মামলার রায়ে উচ্চ আদালতের বিচারপতি রাজীব শকধেরের বলেন, ‘ভারতীয় দণ্ডবিধিতে এটি ব্যতিক্রম। স্ত্রীদের অসম্মতিতেও স্বামীরা যে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারেন, এই বিষয়টির নৈতিকভাবে মৌলিক অধিকার বিরোধী।’
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারার ২ নং ব্যতিক্রম তুলে ধরে বিচারপতি শকধের নিজের রায়ে বলেন, ‘যৌনকর্মীরা আইনত না বলতে পারেন, তবে বিবাহিত স্ত্রী তা পারেন না। যদি কোনও মহিলার স্বামী তার স্ত্রীর গণধর্ষণে যুক্ত থাকে, তাহলে সে সম্পর্কের খাতিরে পার পেয়ে যাবে। অন্য অভিযুক্ত ধর্ষণের সাজা ভোগ করলেও ধর্ষণকারী স্বামীর কিছুই হবে না।’
তবে বেঞ্চের অপর বিচারপতি সি হরিশংকর বলেন যে বৈবাহিক সম্পর্কে থাকা কোনও পুরুষ বলপূর্বক স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে তা কোনও আইন লঙ্ঘন করে না। তিনি সংবিধানের ৩৭৬বি ও ১৯৮বি-র কথা তুলে ধরেন। এবং তিনি বলেন, বৈবাহিক ধর্ষণ অসাংবিধানিক নয়।
এদিকে এই সংক্রান্ত মামলার প্রেক্ষিতে কর্ণাটক হাই কোর্টের তরফে বলা হয়েছিল, ‘এই ধরনের অসাম্যের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করার দায়িত্ব আইন প্রণেতাদের। যুগে যুগে স্বামীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষ নিজেদের স্ত্রীর দেহ, মন ও আত্মার শাসক হিসেবে দেখে আসছে। প্রচলিত এই চিন্তাধারা ও প্রথা মুছে ফেলা উচিত। এই পুরনো, পশ্চাদপসরণমূলক এবং পূর্বকল্পিত ধারণার উপর ভিত্তি করেই এই ধরণের ঘটনাগুলি দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।’
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা