মিয়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সেনা রয়েছে ৫০ হাজারের বেশি
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠির ৫০ হাজারের বেশি সেনা রয়েছে। যারা সবাই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। ফলে জান্তা সরকার কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এবারই সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধ আক্রমণের মুখে পড়েছে সামরিক সরকার।
এই তুমুল প্রতিরোধের পেছনে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাওয়া জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী যেমন রয়েছে, তেমনি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে একটি জোট সামরিক বাহিনীকে কোণঠাসা করে ফেলেছে বলে জানা যাচ্ছে। এই জোট বলছে, তাদের এখন মূল লক্ষ্য হচ্ছে জান্তা সরকারের পতন। তবে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স ছাড়াও আরো বেশ কিছু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এবং অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিজানুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ''রোহিঙ্গাদের নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ায় তাদের বাদ দিয়ে মিয়ানমারে মোট ১৩৫টি নৃগোষ্ঠী রয়েছে। এদের মধ্যে তুলনামূলক শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে।''
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর(অব:) ইমদাদুল ইসলাম বলেন, ''শান রাজ্যের শান আর্মি, তাং এবং ওয়া আর্মিরাই প্রধান বিদ্রোহ গোষ্ঠী যারা দীর্ঘদিন ধরে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে।''
তবে এদের সাথে এখন যুক্ত হয়েছে ব্রাদারহুড। যেখানে একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী জোটবদ্ধ হয়েছে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে।
ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট-এনইউজি কী?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাম্প্রতিক সংঘাত বুঝতে হলে আসলে সেখানকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট-এনইউজি কে বুঝতে হবে।
এনইউজি বা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট হচ্ছে একটি বেসরকারি প্রশাসন।
সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনীতিবিদরা মিলে এটি গঠন করেছে। এনইউজি’র পক্ষে মিয়ানমারে জনসমর্থন রয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিনিধিত্বমূলক কার্যালয় রয়েছে এদের।
ইউনাইটেড ইন্সটিটিউট অব পিস এর তথ্য অনুযায়ী, কারেন, কাচিন, কারেন্নি ও শিন-এরা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রশাসন ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট-এনইউজি এর সাথে সম্পৃক্ত।
মিজানুর রহমান বলেন, এনইউজি হচ্ছে মিয়ানমারের এক ধরনের ‘নির্বাসিত সরকার’। অর্থাৎ বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর সমন্বয়ে এমন একটি সরকার গঠন করা হয়েছে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থাকলেও জান্তা সরকারের বিরোধীপক্ষ হিসেবে কাজ করছে। “এটাকে অ্যাকাডেমিকরা বলি ‘গভর্নমেন্ট ইন এক্সাইল’ বা যে সরকার নির্বাসনে আছে। আগে নির্বাচিত সরকারের কিছু সংসদ সদস্য ও আইনপ্রণেতা মিলে ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই সরকার গঠন করে।”
থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স কারা?
কোকাং এমএনডিএএ- মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, তাং টিএনএলএ- তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মি - তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিলে একটি জোট গঠন করেছে যাকে বলা হয় থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। এটি ৩বিএইচএ নামেও পরিচিত।
২০১৯ সালে তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী জোটবদ্ধ হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা এমএনডিএএ এবং আরাকান আর্মির শক্ত ঘাঁটি শান ও রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর উপর হামলা চালানোর উপর জোর দেয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এবং অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিজানুর রহমান বলেন, এই তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট-এনইউজি-কে সমর্থন দিচ্ছে।
“এই থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স বা মিয়ানমারের সশস্ত্র এথনিক আর্মড গ্রুপগুলোর কোয়ালিশনটা তৈরি হয়েছে সেটা আসলে এনইউজি এর ছত্রছায়ায় বা এনইউজির সমর্থন পাচ্ছে। আবার এনইউজিও তাদের সমর্থন পাচ্ছে। সহজভাবে বলতে গেলে তারা পরস্পরকে সমর্থন দিচ্ছে।”
আরাকান আর্মি
আরাকান আর্মি মূলত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা। কিন্তু এরা ব্যাপক আকারে মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং এদের নিয়েই গঠিত হয়েছে আরাকান আর্মি। বর্তমানে মিয়ানমারে এরা সবচেয়ে বেশি অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আরাকান আর্মির ভাষ্য অনুযায়ী, তারা রাখাইন রাজ্যে একাধিক জাতিগোষ্ঠীর আরাকানিদের সার্বভৌমত্ব অর্জনের লক্ষ্য লড়াই করে যাচ্ছে। আরাকান আর্মির মধ্যে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরাও অন্তর্ভুক্ত।
,
বিদ্রোহীরা বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
মিয়ানমারের পত্রিকা ইরাবতীর তথ্য অনুযায়ী, আরাকান আর্মির শক্তিশালী অনেকগুলো ব্যাটালিয়ন রয়েছে এবং তাদের অধীনে প্রায় ৩০ হাজার সেনা রয়েছে।
মিজানুর রহমান বলেন, আরাকান আর্মি হচ্ছে রাখাইন নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। এটা মূলত একটি বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ সশস্ত্র বাহিনী। থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় এবং প্রশিক্ষিত সশস্ত্র গোষ্ঠী।
মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ)
চীন সীমান্তের উত্তরাঞ্চলের শান রাজ্যে পরিচালিত হয় মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ। গোষ্ঠীটির মতে, তারা স্থানীয় কোকাং জাতিগোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়ছে।আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, গত ২০ বছর ধরে শান রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এমএনডিএএ।
২০০৯ সালে এই গোষ্ঠীকে রাজ্যটির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়ে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী হওয়ার নির্দেশ দেয়া হলে সামরিক বাহিনীর সাথে তাদের সংঘাত শুরু হয়।
মিয়ানমারের পত্রিকা ইরাবতীর তথ্য অনুযায়ী, এমএনডিএএ এর অধীনে চারটি ব্রিগেড এবং ছয় হাজারের মতো সেনা রয়েছে।
তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)
পাহাড়ের উপর ছোট ছোট গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। টিএনএলএ হচ্ছে রাজনৈতিক সংগঠন পালাউং সেলফ লিবারেশন ফ্রন্টের সশস্ত্র শাখা।
টিএনএলএ এর উত্থান হয় ১৯৯২ সালে এবং তারা বলছে যে, মিয়ানমারে “প্রকৃত ফেডারেলিজম” প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা। মিয়ানমারের পত্রিকা ইরাবতীর তথ্য অনুযায়ী, টিএনএলএ এর অধীনে সাতটি ব্রিগেড ও আট হাজার সেনা রয়েছে।
সব মিলিয়ে তিন বাহিনীর সেনার সংখ্যা ৪৫-৫০ হাজারের মতো। শক্তির দিক থেকে ধরতে গেলে তারা মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরো যেসব বিদ্রোহী গোষ্ঠী
পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)
২০২১ সালে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের পর স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্টদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সশস্ত্র বাহিনী হচ্ছে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স। শান রাজ্যে সামরিক বাহিনীর কোণঠাসা অবস্থার সুযোগ নিয়ে তারা নিজেদের মতো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং জান্তা সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রেখেছে।
ইউনাইটেড ইন্সটিটিউট অব পিস এর তথ্য অনুযায়ী, তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে নিয়ে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স- পিডিএফ তৈরি হয়েছে। এরা হচ্ছে, পিডিএফ, লোকাল ডিফেন্স ফোর্সেস (এলডিএফ) এবং পিপলস ডিফেন্স টিম (পিডিটি)।
ইউনাইটেড ইন্সটিটিউট অব পিস জানায়, পিডিএফ এর অধীনে প্রায় ৬৫ হাজার সেনা রয়েছে। এদের মধ্যে ২০ শতাংশের হাতে মিলিটারি গ্রেডের অস্ত্র রয়েছে এবং আরও ৪০ শতাংশের হাতে দেশি অস্ত্র রয়েছে।
২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, পিডিএফ এর ৩০০টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে যার প্রতিটির অধীনে ২০০-৫০০ পর্যন্ত সেনা রয়েছে। আরও ৬৩টি ব্যাটালিয়ন এনইউজি এর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
পিডিএফ এর বেশিরভাগ বাহিনী এনইউজি এর প্রতি অনুগত। তবে চিনল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), কারেন্নি ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স এবং কাচিন পিপলস ডিফেন্স ফোর্স জাতিগত সশস্ত্র বাহিনী (ইএও)এর অধীনে পরিচালিত হয়।
লোকাল ডিফেন্স ফোর্স-এলডিএফ
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্সটিটিউট অব পিস এর তথ্য অনুযায়ী, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট জানিয়েছে যে, মিয়ানমারে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৪০১টি লোকাল ডিফেন্স ফোর্স-এলডিএফ সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫৪টি এনইউজি এর সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছে। একশটি দল যোগ দিয়েছে পিডিএফ এর সাথে। আর বাকিগুলো পিডিটি এর সাথে যুক্ত হয়েছে।
স্থানীয় এসব প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে বেশিরভাগই ২০২১ সালের মার্চের পর গঠিত হয়েছে। এলডিএফ এর অধীনে প্রায় ৩০ হাজার সেনা রয়েছে।
এলডিএফ মূলত সাম্প্রদায়িক এবং ডায়াসপোরা জনগোষ্ঠীর দেয়া তহবিলের মাধ্যমে অর্থায়ন করে থাকে।
পিপলস ডিফেন্স টিম-পিডিটি
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্সটিটিউট অব পিস বলছে, পিপলস ডিফেন্স টিম গঠন করেছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা এনইউজি। এরা মূলত শহরাঞ্চলে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে। তবে বর্তমানে তারা গ্রামীণ এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে।
শান রাজ্যে নামসান এলাকায় যুদ্ধরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরা। এনইউজি এর তথ্য অনুযায়ী, ৩৩০টি শহরের মধ্যে ২৫০টি শহরে পিডিটি গঠন করা হয়েছে।
পিডিটি মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে বেশি সক্রিয়। বিশেষ করে সাগাইং এবং মাগওয়ে এলাকায় এদের তৎপরতা বেশি। এরা মূলত দেশি হালকা অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে।
ওয়া
ওয়া হচ্ছে একটি শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী যাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র ও ২০ হাজারের মতো সেনা রয়েছে। এদের সমর্থন দেয় চীন।
১৯৮৯ সালে তারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি সই করেছিল। এরপর থেকে তারা সাধারণত সশস্ত্র সংঘাত এড়িয়ে চলে।
জান্তা ও বিদ্রোহীদের চলমান সংঘাতে তারা নিজেদেরকে নিরপেক্ষ দাবি করে। কিন্তু দেশের অন্যান্য এলাকায় সরকার বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছে যে অস্ত্র সরবরাহ করা হয় তার বেশিরভাগই এরাই করে থাকে বলে মনে করা হয়।
চিন জাতিগোষ্ঠী
ভারতের সাথে সীমান্ত এলাকায় চিন জাতিগোষ্ঠীর অবস্থান। তারা তাদের রাজ্যে বেশ প্রভাবশালী এবং সম্প্রতি তারা রিখাওদার নামে সীমান্ত শহর দখল করে নিয়েছে।
কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন
মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন। তারা থাইল্যান্ডের সাথে সীমান্তে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুটগুলোতে থাকা সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে অভিযান জোরদার করেছে।
সর্ব দক্ষিণের রাজ্য তানিথারি-তে বর্তমানে সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে নিয়মিত হামলা চালানো হয় বলে বিবিসির খবরে বলা হচ্ছে।
কারেন্নি বিদ্রোহী গোষ্ঠী
থাইল্যান্ড সীমান্তের কায়াহ রাজ্যে কারেন্নি নৃগোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনী রাজ্যটির বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
তারা রাজ্যের প্রধান শহর লইকাও দখলে নিতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং শহরটির বাইরে থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয় এরইমধ্যে দখল করে নিয়েছে।
অস্ত্র কারা দিচ্ছে?
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) ইমদাদুল ইসলাম বলেন, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো স্থানীয়ভাবেই নিজেরা নিজেরদের রসদ যোগাড় করে নেয়। তবে অস্ত্র আসলে তাদেরকে বৃহৎ কোন শক্তি সরবরাহ করে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, “অস্ত্র যোগানের বিভিন্ন সমর্থিত ও অসমর্থিত সূত্রে বলা হচ্ছে, চীন থেকে অস্ত্রের সরবরাহ পায়। আর এটা আসে তান এবং ওয়া, কাচিন এবং আরাকান আর্মির মাধ্যমে।”
কালোবাজারে অস্ত্র বেচা-কেনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে চীনের চেয়ে থাইল্যান্ডের জড়িত থাকার সম্ভাবনা বেশি।
ইউনাইটেড স্টেটস ইন্সটিটিউট অব পিস এর এক আর্টিকেলে বলা হয়, বেশিরভাগ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো প্রথম হাতে তৈরি অস্ত্র দিয়ে লড়াই শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে বন্দুক, গ্যাস রাইফেল এবং হাতে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র।
এই সংস্থাটি বলছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোন অস্ত্র সহায়তা দেয়নি। এর পরিবর্তে এসব গোষ্ঠী স্থানীয় সশস্ত্র নৃগোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র এবং কালো বাজার থেকে কেনা অস্ত্রের উপরই বেশি নির্ভর করে।
এনইউজি এর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইন্সটিটিউট অব পিস তাদের আর্টিকেলে জানায়, এনইউজি প্রায় ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে এবং এর বেশিরভাগ অংশই সশস্ত্র প্রতিরক্ষা বাহিনীর অর্থায়নে ব্যয় করা হয়েছে।
সংস্থাটির একজন গবেষক ইয়ে মিও হাই এক প্রতিবেদনে বলেছেন, সারা দেশে ৭০টিরও বেশি অস্ত্র কারখানা রয়েছে যেগুলো থেকে উৎপাদিত অস্ত্র স্থানীয় চাহিদার ৩০ শতাংশ মেটায়।
পিডিএফ এর ৬০ শতাংশ সেনা সশস্ত্র হলেও প্রতিরক্ষা বাহিনীর মাত্র ৫০ শতাংশ সেনার হাতে অস্ত্র রয়েছে। আর এদের বেশিরভাগই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত নিম্নমানের অস্ত্র। বেশিরভাগ সেনার কাছে কৌশলগত অস্ত্র যেমন গোলাবারুদ, আকাশ প্রতিরক্ষা অস্ত্র এবং সাঁজোয়া যান বিধ্বংসী কোন অস্ত্র নেই।
আকাশ প্রতিরক্ষা অস্ত্রের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সীমিত আকারে যুদ্ধে জড়ানোর মতো সক্ষমতা রয়েছে। যে কারণে গ্রামীণ বা দুর্গম এলাকায় গেরিলা কৌশলে যুদ্ধে জয় পেলেও শহরাঞ্চলে জান্তা বাহিনীর মোকাবেলা করা কষ্টকর হয়ে পড়বে বিদ্রোহীদের পক্ষে।