Main Logo
আপডেট : ৯ জুলাই, ২০২৪ ২১:০১

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পাশে থাকবে চীন, দু'দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক খাতে ১৬ সমঝোতা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পাশে থাকবে চীন, দু'দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক খাতে ১৬ সমঝোতা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থেকে  চীন সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে। মঙ্গলবার বিকেলে বেইজিংয়ের গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চাইনিজ পিপল'স  পলিটিক্যাল কনসাল্টেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিং (Wang Huning) এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 

প্রধানমন্ত্রীর চলমান চীন সফর নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেইজিংয়ের সেন্ট রেজিস (St. Regis) হোটেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ড. হাছান মাহমুদ। 

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সিপিপিসিসি'র জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যানের অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে এ বৈঠকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করেন তারা। দলীয় নেতৃবৃন্দের পারস্পরিক সফরের বিষয়েও ঐক্যমত হয়। ওয়াং হুনিং বলেন, চীনের কম্যুনিস্ট পার্টি এবং আওয়ামী লীগ উভয়েরই অভিন্ন লক্ষ্য জনগণের কল্যাণ। 

এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং নিবাস সেন্ট রেজিস হোটেলের পার্লার রুমে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের (Jin Liqun) সৌজন্য সাক্ষাতের ওপর আলোকপাতকালে হাছান মাহমুদ জানান, প্রধানমন্ত্রী এআইআইবি-কে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ উপযোগী খাতে বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন। এআইআইবি'র প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়য়ন-অগ্রগতিকে অভূতপূর্ব বলে বর্ণনা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিংয়ের সাংগ্রিলা সার্কেলে 'সামিট অন ট্রেড, বিজনেস এন্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ এন্ড চায়না' সম্মেলনে যোগদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন,  বাংলাদেশের প্রায় ৯০ জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও চীনের শতাধিক ব্যবসায়ী এ সম্মেলনে যোগ দেয় এবং বাংলাদেশ ও চীনের বেশ কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর  হয়েছে।

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান। অবকাঠামো, আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাত, জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট ফার্মিং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ প্রযুক্তি ও উন্নয়ন খাতে বৃহত্তর বিনিয়োগের আহবান জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ও সেখানে চীন রিয়েল এস্টেট এবং হসপিটালিটি খাতে বিনিয়োগের সুযোগের কথা উল্লেখ করলে চীনারাও এ বিষয়ে যথেষ্ট উৎসাহ দেখান। বাংলাদেশ দূতাবাস, বিআইডিএ, বিএসইসি ও চায়না ওয়ার্ল্ড সামিট উইং আয়োজিত এ সম্মেলনে চীনের ভাইস মিনিস্টার অব কমার্স জনাব লি ফেই, চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান জনাব ওয়াং টং ঝু, এইচএসবিসি চায়নার প্রেসিডেন্ট এবং সিইও জনাব মার্ক ওয়াং, হুয়াওয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব সাইমন লিন তাদের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া সম্মেলনে বক্তব্য দেন এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল ইসলাম বিনিয়োগ বিষয়ে উপস্থাপনা পেশ করেন। 

এদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআনমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সন্ধ্যায় বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেন। 

চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, আমাদের ঔষধ বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে, চীনেও আমরা এটি প্রসারিত করতে চাই। পাশাপাশি পাট ও চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক, আম প্রভৃতি চীনে রপ্তানির উদ্যোগের মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সকল অনুষ্ঠান অপরিবর্তিত রয়েছে। শুধু ১১ তারিখ সকালের পরিবর্তে ১০ জুলাই রাতে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। 

উল্লেখ্য, চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল লি ছিয়াংয়ের (Li Qiang) আমন্ত্রণে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটযোগে চীনের স্থানীয় সময় বিকেল ৬টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনারসহ যথাযথ সম্মাননায় অভ্যর্থনা জানানো হয়। 

১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হলে  চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল লি শিয়াংয়ের (Li Qiang) সাথে সাক্ষাৎ করবেন ও দু'দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলসহ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। 

এরপর প্রায় ২০ থেকে ২২টির মতো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণার কথা রয়েছে। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন।

বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের (Xi Jinping) সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। 

অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, অন্যান্য সচিববৃন্দসহ উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাগণ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।

উপরে