Main Logo
আপডেট : ৩০ জানুয়ারী, ২০২৪ ১০:০৩

ধারাবাহিক উপন‍্যস (ঊণবিংশ পর্ব)

গহীনে নীল

বেলায়েত হোসেন

গহীনে নীল
তুফানী প্রস্তুত হয়ে দোকানের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়। প্রত্যাশা জুড়ে শুধুই সুমন। দেখা হলে এবার তার ভালোলাগার কথাটা সুমনকে জানাবে সে। ভাবনার ঝোলাটা বেশ ভারী হতে থাকে ভেতরে ভেতরে। কিছুটা সংশয়ও দানা বাঁধে তুফানীর 
মনে । ভালোলাগার কথা জানালে সুমন যদি প্রত্যাখ্যান করে! এই ভয়ে। এসব আবোলতাবোল ভাবনা নিয়ে তুফানী দোকানের সার্টার খুলতেই পেছন থেকে আওয়াজ আসে-শুভ সকাল তুফানী! এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। তুফানী পেছনে ফিরে তাকাতেই সুমনের হাস্যোজ্জ্বল মুখটি ভেসে ওঠে। তুফানীর মনের গহীনে তখন খুশির দোল খেলতে শুরু করে। প্রত্যুত্তরে কিঞ্চিৎ মুচকি হাসির রেশ উড়িয়ে  সুমনকেও শুভ সকাল জানায় তুফানী। 
সুমন তুফানীর চোখে তাকায়-কেমন আছেন তুফানী!
তুফানীর উত্তর- জ্বী ভালো, আপনি? 
সুমন বলে ওঠ - এতক্ষণ ভালো ছিলাম না, তবে এখন ভালো।
তুফানী আশ্চর্য হয়- তার মানে? 
সুমন রাখঢাক না রেখেই বলে -তার মানে হলো, কাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি।
-কেনো, কী হয়েছে? 
- চুরি হয়েছে।
- ইয়া রাম,কী চুরি হয়েছে? 
- হৃদয়। 
- বুঝলাম না, হৃদয় আবার চুরি হয় কেমন করে?
- আপনি কীভাবে বুঝবেন! আপনার চুরি হলেতো বুঝতেন। যার চুরি যায় সেই বুঝে চুরি হওয়ার ব্যথা।
- চোর কে চিনতে পারেন নি? 
- আলবাত পেরেছি! 
- তবে ধরেননি কেনো? 
- ধরা দিলেতো ধরবো।
- কে সেই চোর শুনতে পারি কি? 
- যদি বলি তুমি? 
তুফানী কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে যায়। মনের কথাটা মনেই হজম করে ভেবে নেয়, সুমন তুমিতো জানোই না প্রথম দেখাতেই আমার মনটা চুরি করে নিয়েছিলে তুমি। আজ বলছো আমার চুরি যায়নি, আমি এর ব্যথা কী বুঝি! তুমি কী অনুভব করতে পেরেছিলে মন হারিয়ে কেমন ছিলাম? তুফানীকে চুপ থাকতে দেখে সুমন মনে মনে একটু ঘাবড়ে যায়। মুখমণ্ডলে তার ভয়ের ছাপ পরিষ্কার হয়ে ওঠে। কপাল ঘেমে একাকার হয়ে যায় সুমনের। ভাবে তুফানী নিশ্চয়ই মাইন্ড করেছে। কারণ তার পারমিশন ছাড়া তাকে তুমি বলে সম্মোধন করেছি। এ অবস্থায় সুমন বারবার সরি বলতে থাকে। তুফানী ভেতরে ভেতরে বেশ খুশি। একটু মুচকি হেসে সুমনের মুখ চেপে ধরে বলে- ঠিক আছে কোনো সমস্যা নাই। সুমনের মনে তখন একটু স্বস্তি ফিরে আসে।
দোকানের কর্মচারীগণ ততক্ষণে ধুপ, আগড়ের কাজ সেরে ফেলে। তুফানী দোকানে ঢুকেই সুমনকে আমন্ত্রণ জানায়-ভেতরে আসুন। সুমন তুফানীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বলে-আসুন নয়, বলো ভেতরে আসো। তুফানীর গোলাপ রাঙা ঠোঁট দুটিতে তখন লজ্জা মাখা একটুকরো হাসির রেখা ফোটে ওঠে। তুফানী সুমনের কথায় সম্মতি জানিয়ে বলে - ঠিক আছে ভেতরে আসো। সুমন ভেতরে গিয়ে তুফানীর পাশে বসে। তুফানী সুমনকে উদ্দেশ্য করে বলে-কী খাবে বলো, চা নাকি কফি! সুমন জানায়- এক কাপ র' টি হলেই চলবে। তুফানী জানতে চায়- নাস্তা করেছো? সুমন- না এখনো করিনি। তুফানী একজনকে ডেকে সুমনের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করে। নাস্তার ফাঁকে আলাপচারিতায় দুজন দু'জনের সম্পর্কে জানার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে দু'জনই সবকিছু খুলে বলে তাদের পেছনে ফেলে আসা নিজ নিজ জীবন কাহিনি। উভয়ে তখন অবাক। কারণ দু'জনের জীবন কাহিনি একই সূত্রে গাঁথা। দু'জনই তখন একে অপরের প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। আলাপে আলাপে তুফানীর পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চায় সুমন। তুফানী জানায় টাকার অভাবে ফরম ফিলাপ করতে না পেরে ইন্টারমেডিয়েট ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারিনি। সুমন বলে- এখনতো আর টাকা পয়সার সমস্যা নেই এখন সেরে নাও। তুফানী প্রশ্ন ছুড়ে দেয় - দোকানের ঝামেলার মধ্যে কী এটা করা সম্ভব? প্রত্যুত্তরে সুমনের পাল্টা প্রশ্ন -কেনো নয়? এখনতো সুযোগ আছে। উন্মুক্ত থেকে করে নিবা! 
-হ্যাঁ ঠিক আছে,তুমি যখন এতো করে বলছো দেখি কী করা যায়।
 - তুমি চাইলে আমি ভর্তির ব্যবস্থা করি?
-না আমিই পারবো তোমার কষ্ট করতে হবে না। 
এদিকে সুমনের অফিসের সময় পার হয়ে যাচ্ছে, তাই আর দেরি না করে ওঠে পড়ে সুমন। তুফানীও তার দোকানের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।
 
 চলবে...
 
 
 
উপরে