আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১৪:২২
ধারাবাহিক উপন্যাস ( ষড়বিংশ পর্ব)
গহীনে নীল
বেলায়েত হোসেন
বেলায়েত হোসেন
এই দ্বীপে জড়িয়ে আছে শ্রাবণীদের ভিন্নরকম স্মৃতি। এখানে বসবাসকালীন সময়ে শ্রাবণীর জীবন পল্লবের স্বপ্নবাগে ফোটেছিল সুমন নামক স্বপ্নকুসুম। যার সৌরভে সুরভিত হয়ে দিনের সূচী খুলতো শ্রাবণীর। মায়ের হাতে তিলে তিলে গড়া সাজানো গোছানো সোনার সংসার সবকিছুই সাগরকন্যার হেয়ালিতে বিলীন। সেখানে এখন সাগর কন্যার হেয়ালিপনার উন্মাদনায় উশৃঙ্খল ঢেউয়ের মহড়া চলে। অতীতের সেই স্বপ্নমধুর স্মৃতির পাতায় যখন আপন খেয়ালের দৃষ্টি মেলে, তখন নোনাজলের ঢেউগুলো হৃদয়ের পাড় ভাঙে- পীড়া দেয় পার্থিব জীবনে। এসবের মাঝে দৃষ্টি বিলিয়ে মা মেয়ের দু'জনারই মন খারাপ। তার মাঝে আবার দ্বীপের নাম জানার পর থেকে হঠাৎ তুফানীর মুখচ্ছবিতে মলিনতার ছাপ ভেসে উঠায় তাদের মধ্যে মন খারাপের বোঝাটা আরো ভারী হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে ফিরে আসার বাকি পথে তেমন কোনো কথাবার্তা হয়নি তাদের মাঝে। তা ছাড়া শ্রাবণীর মায়ের চিন্তাধারায় তুফানী মেয়েটি বড়োই দুঃখী। পৃথিবীর বুকে পা রেখে মা বাবার মুখ দেখেনি কখনো। বড় হয়েছে অন্যের ঘরে। মা বাবার আদর পায়নি কোনদিন। যদিও সে, সেই ঘরে যত্ন সোহাগে বড় হয়েছে। তবুও তো বাবা মায়ের আদরের মাঝে ভিন্নতা থাকে, ভিন্ন স্বাদ আহ্লাদের পরিপূর্ণতা থাকে। পৃথিবীর সমস্ত আদরের চেয়ে মায়ের আদরে স্বর্গ সুখ নিহিত। সেখান থেকে বঞ্চিত তুফানী। শ্রাবণীর বন্ধু হিসাবে তুফানীকেও তার সন্তানতুল্যে স্থান দিতে চেষ্টা করে শ্রাবণীর মা। ইদানীং তুফানী শ্রাবণীদের বাসায় আসা-যাওয়ার ঘনত্ব দেখে শ্রাবণীর মায়ের হৃদয় জুড়ে আপনত্বের পরিধি আরো বেড়ে ওঠে। বেড়ে যায় মমত্বমাখা দায়িত্ববোধ। দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে প্রত্যেক মা-ই চায় তার সন্তানগুলো সবসময় আনন্দ উল্লাসে সর্বোপরি উৎফুল্ল থাকুক। শ্রাবণীর মায়ের উদ্দেশ্য হলো তুফানী বর্তমান সময়ে যে একাকিত্বের ভার বহন করে চলেছে, সেখান থেকে তাকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ দেওয়া। তাই শ্রাবণীর মা সহ সবাই মিলে তাকে সঙ্গ দিয়ে তুফানীর একাকিত্বের ভার ভাগ করে নেওয়া। সেই লক্ষ্যেই শ্রাবণীসহ শ্রাবণীর মা তুফানীকে নিয়ে একত্রে কিছু সময় কাটাতে গভীর সমুদ্রের একটি দ্বীপে ভ্রমণে যায়। ভেবেছিলো সবাই মিলে একত্রে ঘুরেফিরে আসলে, তুফানীর একাকিত্ব ভাব কিছুটা লাগব হয়ে আনন্দ উৎসাহে পরিপূর্ণতা পাবে। কিন্তু হয়েছে তার বিপরীত। তুফানীর মাঝে বিপরীতমুখী ভাবের সঞ্চার ঘটতে দেখে শ্রাবণীর মা একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে। ভাবতে থাকে কী এমন ঘটনা ঘটেছে! যার জন্য তুফানীর মুখচ্ছবিতে এমন বিষণ্ণতার ছাপ লগেছে? তা নিয়ে শ্রাবণীর মায়ের মনের গাঙে ভাসমান ভাবনার তরীটি যখন দোদুল্যমান তখন তাদেরকে বহন করা দ্রুতগামী জলযানটি গিয়ে পাড়ে ভিড়ে।
দ্বীপ থেকে ফেরার পথে এতক্ষণ ধরে শ্রাবণীও একরকম ভাবনামুখো হয়ে বসে আছে। তার মনের ভেতরে ব্যপক একটা যন্ত্রণা তোলপাড় করে চলছে সারাক্ষণ। তুফানীর সাথে সুমনের মন দেয়া-নেয়া শ্রাবণী সেটি আমলে নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তার মুখ থেকে যখন মন দেয়া নেয়ার কথাটা শুনেছে শ্রাবণী তখন থেকেই হৃদয় গহ্বরে ঘুষঘুষে তুষের আগুন জ্বলছে। যে আগুন সহজে নিভবার নয়। একদিকে সুমন, অন্যদিকে তুফানী। দু'জনই তার অতি আপন। কারোর থেকে কেউ কম নয় তার কাছে। একজন তার স্বপ্ন অপরজন চলার পথে সর্বসাথী।
সুমন তার প্রথম জীবনের স্বপ্ন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হারিয়ে গিয়ে কালের ফেরে রঙ বদলিয়ে এখন অন্য আসমানে সৌন্দর্য বিলায়। তাতে শ্রাবণীর ভাবের ধারায় প্রতিহিংসার নোঙর ফেলে। সে এখন কোন্ পথে এগোবে?
চলবে...