Main Logo
আপডেট : ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১০:৩৯

ধারাবাহিক উপনন‍্যাস (সপ্তবিংশ পর্ব)

গহীনে নীল

বেলায়েত হোসেন

গহীনে নীল
তুফানীর মুখমণ্ডলে বিদ্যমান বিষণ্ণতার ছাপ দেখে শ্রাবণী একটু বিস্ময়ের সাথেই চিন্তিত। কারণ, তুফানীর সাথে শ্রাবণীর যতদিনের পরিচয়, তাতে তুফানীকে এই চেহারায় কোনোদিন দেখেনি শ্রাবণী। সুমন ও তুফানীর মধ্যে প্রেম বিনিময়ের কথা শ্রাবণী জানার পর থেকে, তার ভেতরে একটা অস্থিরতা কাজ করছে। শ্রাবণীর মনে সন্দেহ জাগে, সুমন কী তবে কোনো কারণে তুফানীর সাথে তাদের ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করেছে? যে কারণে ভ্রমণে এসে সুমনের বর্ণনার কোনো ক্লু পেয়ে তুফানী মন খারাপ করে বসে আছে? 
 
শ্রাবণী আবার এটাও ভাবে,সুমনের যদি ছোটোবেলার স্মৃতির কথা স্মরণে থাকতো তাহলে এ পর্যন্ত শ্রাবণীকে খুঁজেনি কেন সুমন? কই, তুফানী তো সুমনের কথা বলতে গিয়ে একবারও শ্রাবণীর কথা উচ্চারণ করেনি? তাহলে কোন্ ভিত্তিতে বিশ্বাস করবে শ্রাবণী? সুমন কী তাহলে শ্রাবণীর কথা ভুলে গিয়েছিলো ? 
 
সুমন ও তুফানীর মাঝে এখন পরিমিত যৌবনের ভাব বিনিময় চলছে। তাদের মধ্যে একজন আরেকজন সম্পর্কে নিশ্চয়ই অনেক কিছু জানাশোনা এবং ভবিষ্যৎ বুঝাপড়া হয়েছে। একজন আরেকজনের জীবন সম্পর্কে জানাতে গিয়ে সুমন যদি শ্রাবণী সম্পর্কের ছোটবেলার স্মৃতির কথা তুফানীর সাথে শেয়ার করেই থাকে, তাহলে শ্রাবণীর নিশ্চিত ধারণা, তুফানী আজকে দ্বীপ ভ্রমণে এসে সেই স্মৃতিচারণ স্মরণেই তুফানীর মন খারাপ এবং তার মুখশ্রীতে বিষণ্ণতার দাগ লেগেছে। কারণ, এই স্মৃতির সাথে যে, শ্রাবণীর সম্পর্ক জড়িত?
 
তুফানী সম্পর্কে শ্রাবণীর যতদূর চেনাজানা তাতে শ্রাবণীর ধারণা স্পষ্ট। কারণ তুফানী আগে থেকেই একটু জেদি এবং একরোখা স্বভাবের। একটু চাপা স্বভাবেরও বটে। কিন্তু তুফানী যতো চাপা স্বভাবেরই থাকুক না কেনো, তার যে কোনো বিষয়ে শ্রাবণীকে না বললে তুফানীর পেটের ভাত হজম হতো না। শ্রাবণীর ধারণা হয় তুফানী যদি তাদের সম্পর্কের কথা জানতোই তাহলে নিশ্চয়ই তাকে বলতো! আর তুফানী যদি কোনো সূত্রের অনুমানে তার উপর সন্দেহ করে শ্রাবণীকে ভুল বুঝে থাকে! তাহলে তুফানীর মনের সন্দেহ কীভাবে দূর করবে সেই সূত্র খোঁজার চিন্তায় শ্রাবণী অস্থির।
এদিকে তুফানীর অভিমান,শ্রাবণী তার Best Friend. তার জীবনের এমন কিছু বাকী নেই যা তুফানী জানে না। তুফানীর জীবনে যা কিছু ঘটেছে সবই  শ্রাবণীকে বলেছে সে। তুফানী যখন শ্রাবণীকে সুমনের কথা বললো, সে কী করলো? ঘুমের ছল করে এমন একটা ভাব করলো যেনো ঘুমে তার মাথা ঠুকছে। শ্রাবণী ভাবে, তুফানী কিছুই বুঝেনি। আবার ভোরবেলায় বিছানা ছেড়ে গিয়ে একা একা জানলায় দাঁড়িয়ে ভাবতে শুরু করলো। তখন থেকে তুফানীর মনে একটু একটু করে সন্দেহের দানা বাঁধতে  শুরু করে। তবে তখনো ততো গভীরে ভাবেনি তুফানী।
সন্দেহটা তখনি পাকাপোক্ত হয় যখন তাদের সাথে ভ্রমণ শেষে দ্বীপের নাম জানতে পারে। সুমন ও তুফানীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টিলগ্নে তুফানী সুমনের  জীবনবৃত্তান্ত জানতে গিয়ে সুমনের মুখ থেকেই প্রথম শুনেছিলো গভীর সমুদ্রে অবস্থিত এই কুতুবদিয়া দ্বীপের নাম।
শ্রাবণী এবং তুফানী দু'জনই, একে অপরের প্রতি  নানামুখী ভাবনায় দ্বিধাগ্রস্ত। তাদের দু'জনের ভাবনা যখন সন্দেহের জোয়ারে দোদুল্যমান! তখন অভিমানের ঢেউ এসে পাড় খুঁজে দ্বিধান্বিত মনে।
 
চলবে...
 
 
উপরে