Main Logo
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১১:১৬

ধারাবাহিক উপন‍্যাস (অষ্টবিংশ পর্ব)

গহীনে নীল

বেলায়েত হোসেন

  গহীনে নীল
দ্বীপের মোহনা ছেড়ে প্রত্যাবর্তনের মূল ঘাটে পৌঁছানো পর্যন্ত অনেকটা পথ। যে পথের পুরোটাই শ্রাবণীর মা ভিষণ মন খারাপের মধ্য দিয়ে পার করে এসছে। কারণ, এই দ্বীপের এক অংশে  ছিলো শ্রাবণীর মায়ের নিজ হাতে গড়া সোনার সংসার। যে সংসারে ছিলো পরম সুখ আর অনাবিল শান্তি। যার ছোঁয়ায় রঙিন হতো শ্রাবণীর মায়ের প্রতিদিনের স্বপ্নের মলাট। সুখ আর বেশিদিন সাইলো না তার কপালে। সমুদ্র কন্যার উশৃঙ্খল যৌবনের উন্মাদনার উন্মত্ততায়  বিলীন হয়ে যায় তাদের স্থাবর অস্থাবর সবকিছু। দ্বীপের বেষ্টনীতে দাঁড়িয়ে যখন সমুদ্রের তলদেশে বিলীন হয়ে যাওয়া স্থাবর অস্থাবর জমিনের সীমানা খুঁজছিল শ্রাবণীর মা! তখন জলের বুকে জলের অজস্র ঢেউ, অপারে ভাসমান নিরাশার নূপুরে আর্তনাদের আওয়াজ তোলে,শ্রাবণীর মায়ের স্বপ্নহারা চোখের পাতায় অতীত স্মৃতির পায়রাগুলো মন খারাপের বায়না নিয়ে মাথা ঠুকছিলো । তাই ফেরার পথে শ্রাবণীর মা, তুফানী ও শ্রাবণীর মধ্যে চুপচাপ ভাব দেখেও দু'একটা কথা ছাড়া পুরোপথে তিনজনের মধ্যে কেউ আর কথা বলেনি। তিনজনই ভিন্ন ভিন্ন ভাবনায় নিমগ্ন থেকে পথের সময় পার করে এসেছে। 
জলযান থেকে নেমে বাড়ি ফেরার বাহনের অপেক্ষায় অপেক্ষমাণ সবাই। শ্রাবণী ও তুফানীর চুপচাপ ভাবের লাগব হয়নি এখনো। তাদের এমন ভাব দেখে তুফানীকে শ্রাবণীর মায়ের জিজ্ঞাসা - ভ্রমণ কেমন লেগেছে মা'মনি? তুফানী একটু রেষ টেনে জানায়- ভালোই...। শ্রাবণীর মা জানতে চায়- তাহলে এমন গম্ভীর হয়ে আছো যে? শরীর খারাপ? তুফানীর উত্তর - না আন্টি? শ্রাবণীর মা মুখে তাকিয়ে বলে উঠে- তাহলে মন খারাপ কেনো ? এবার তুফানী একটু বিব্রত হয়ে যায়। তার মন খারাপের কথাটা কীভাবে শ্রাবণীর মা'কে সরাসরি জানাবে? তাই তুফানী কথা না বলে একটু মাথা নেড়ে শ্রাবণীর মায়ের জিজ্ঞাসার চাপ থেকে সরতে কথাটা অন্যদিকে ঘুরানোর চেষ্টা করে। বলে-আন্টি আমি দোকানটা ফেলে আসছি কর্মচারীদের উপর আমাকে চলে যেতে হবে আজই। আমি পথিমধ্যে নেমে যাবো। তুফানীর চলে যাওয়ার কথা শোনার পরও শ্রাবণীর মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ দেখতে না পেয়ে শ্রাবণীর মায়ের মনে রহস্যের জট বাঁধতে শুরু করে। ভাবে, যে মেয়ে দুটির মাঝে কোনোদিনও মন খারাপের লেশমাত্র দেখা যায়নি, যে মেয়ে দু'টি হাসি আনন্দে প্রাণচঞ্চল দিন কাটাতো হঠাৎ তাদের মধ্যে এমন রহস্যের কারণ কি? ভাবনার পাল্লাটা ক্রমশই ভারী হতে থাকে শ্রাবণীর মায়ের মনে। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি স্কুটার পেয়ে  সেটিতে চড়ে ফিরে যায় তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে। 
 
চলবে...
 
 
 
 
উপরে