Main Logo
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১১:২১

ধারাবাহিক উপন‍্যাস (ঊনত্রিংশ পর্ব)

গহীনে নীল

বেলায়েত হোসেন

গহীনে নীল
পথিমধ্যে স্কুটার থেকে নেমে যায় তুফানী। নেমে যাওয়ার সময় শ্রাবণী একবারও বলেনি তাকে, আজ থেকে যা। তুফানী ভেবেছিলো শ্রাবণী যদি একবারও বলে আজ থাক, তাহলে, যতো ঝামেলাই থাকুক, তুফানী কোনো অমত করবে না। থেকে যাবে সে। শ্রাবণীর পক্ষ থেকে কোনো সারা না পেয়ে অবশেষে বাড়ির পথে হাঁটা ধরে তুফানী। বেলা ডুবে সন্ধ্যা নেমেছে। গন্তব্যের বাকি পথ একাই যেতে হবে তাকে। মনের মাঝে হানা দেয় পথের ভয়। একা একজন যুবতী মেয়ে,পথিমধ্যে কতোরকম সমস্যাই হতে পারে। এসব জল্পনা-কল্পনা যখন মনের গভীরে ওজন বাড়ায়! তখন মনের সাথে দেহের ওজন বেড়ে গিয়ে হাঁটার গতিও ভারী হয়ে যায়। 
শ্রাবণীর ব্যবহারে তুফানী খুবই মর্মাহত। তার মনে বয়ে চলে অমানিশার মৌন মিছিল। তুফানী জানে না এই মিছিলের শেষ কোথায়। ভাবনার ঘোরে পড়ে তুফানী  টের-ই পায় না কখন এসে বাড়ির সীমানায় পা রাখে। সন্ধ্যা পেরিয়ে এখন বেশ রাত। রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে  বাড়ছে সুনসান নীরবতা। আজকে তার একাই থাকতে হবে। তাই ঘরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না। এই মুহুর্তে আর কোনো উপায়ও তো নেই। অন্যান্য দিন দোকানের এক জনৈকা কর্মচারী এসে তুফানীর সাথে থাকতো। কিন্তু তুফানি দুদিন বাইরে থাকায় আজ সে-ও  আসেনি। 
এদিকে তুফানীর প্রতি শ্রাবণীর মনের আঙিনা জুড়ে অভিমানের কুঁড়িগুলো প্রস্ফুটিত হয়ে থাকলেও লগ্নভাঙা ঘোরসন্ধ্যায় তুফানীকে রাস্তায় একা ছেড়ে দিয়ে শ্রাবণী বিবেকের দংশনে জর্জরিত। তুফানীর যদি রাস্তায় কোনো অঘটন ঘটে যায়? এমনিতে তুফানীদের এলাকার মাতব্বর নিরঞ্জন বাবু তার পিছনে লেগে আছে। সুযোগ পেলেই একটা ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। এসব নানারকম চিন্তা তাকে ঘিরে ফেলে। চলতি পথে শ্রাবণীর মা শ্রাবণীকে জিজ্ঞেস করে- হ্যাঁ রে মা! আসার পথে তুফানীকে দেখলাম মেয়েটার মন খারাপ হয়ে আছে, কী হয়েছে বলতো দেখি! তোর সাথে কিছু হয়েছে? শ্রাবণী কিছুক্ষণ চুপ থেকে পরক্ষণেই জানায়, না মা! আমার সাথে কিছু হয় নাই। শ্রাবণীর মা- তাহলে কার সাথে হয়েছে। শ্রাবণী উত্তরে বলে- তুফানীর কার সাথে কী হয়েছে আমি কী করে বলবো! শ্রাবণীর মা- বা'রে, তুই তার বান্ধবী, তুই জানবি না তো কে জানবে? শ্রাবণী পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে তার মাকে- বান্ধবী হলেই কী সবকিছু জানতে হবে? তুই এভাবে কথা বলছিস ক্যান! আমার ভালো লাগতেছে না মা! শ্রবণীর মা, মেয়ের কণ্ঠে একটু অভিমানের গন্ধ খুঁজে পায়। তাই আর বিরক্ত না করে শ্রাবণীর মা বলে, ঠিক আছে তোকে কিছু বলতে হবে না। বাকি পথে মা মেয়ের মধ্যে আর কোনো কথা হয়নি, চুপচাপ গিয়ে বাসায় প্রবেশ করে।
 
চলবে...
 
 
 
 
উপরে