আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১০:১৭
ধারাবাহিক উপন্যাস ( দ্বাত্রিংশ পর্ব)
গহীনে নীল
বেলায়েত হোসেন
শ্রাবণীর ঘর থেকে তার মা বেরিয়ে গেলেও পার্সটির উপর সন্দেহ থেকেই যায়। মনের মাঝে প্রশ্ন জাগে,আমাকে দেখতে না দিয়ে শ্রাবণী এভাবে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলো কেন?পার্সের ভেতরে এমন কী আছে? যা আমি দেখতে বা জানতে পারবো না? শ্রাবণীর মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেও গোপনে খেয়াল রাখে। শ্রাবণী পার্সটি কোথায় কী করে।
শ্রাবণী মোটেও জানতো না তারই বিছানায় বালিশের নীচে এই পার্সটি পড়েছিলো। তুফানীও তাকে বলেনি।
সেদিন ভ্রমণ থেকে এসে ক্লান্ত শ্রাবণী বিছানা যেভাবে ছিলো সেভাবেই শুয়ে পড়েছিলো । তাই শ্রাবণীর নজরে পড়েনি।
তুফানী যেখানেই যায় পার্সটি সাথেই রাখে। সুমনের কথা মনে হলে বের করে দেখে মাঝেমধ্যে পড়ে। খানিক বুকে চেপে শান্তির পরশ অনুভব করে। সেদিন তুফানী, শ্রাবণীর বিছানায় শুয়ে তার সাথে যখন সুমনের কথা বলছিলো তখন ভেবেছিলো কথা শেষে শ্রাবণীকে দেখাবে। কিন্তু কথার মাঝখানে এসে কেনো যেনো ঘুমের ভান করলো শ্রাবণী। সুমনের কথা শুনতে আর ভালো লাগছিলো না তার। কেমন একটা অনীহা এলো শ্রাবণীর মাঝে! শ্রাবণীর এমন ভাবের কারণে তুফানী আর কথা শেষ করতে পারেনি। শ্রাবণীর ভাব দেখে কিছুটা কষ্ট পেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তুফানী। পরদিন সকালে তড়িঘড়ি করে তাদের সাথে ভ্রমণে যাওয়ার সময় আর পার্সের কথা মনে থাকেনি তুফানীর।
এদিকে শ্রাবণীর মা ঘর ত্যাগ করার সাথে সাথে শ্রাবণী পার্সটি খুলে এবং দেখতে পায় তাতে একটি চিঠির খাম রয়েছে। খামের ভেতরে রয়েছে সুমনের হাতে তুফানীকে লেখা একটি চিরকুট এবং চিঠি।
চিরকুট আর চিঠি দেখে শ্রাবণী লোভ সামলাতে পারেনি। এদিক সেদিক তাকিয়ে খুব সতর্কতার সাথে দু’টোই পড়ে নেয় শ্রাবণী। কারণ, তার মা দেখে ফেললে ঝামেলা হবে তাই। চিঠির ভাষায় শ্রাবণীর হৃদয় ফেটে কান্না শুরু হয়। চোখের জলে বুক ভেসে যায়। ভেতরে তার চরম অস্থিরতা কাজ করে। কী করবে কী করবে না সে কিছুই বুঝতে পারে না। চিঠি আর চিরকুট বুকে চেপে পাগলের মতো বিড়বিড় করতে থাকে। এ কী করলে সুমন? কেনো এমন করলে, বেঁচেই রইলে, তবে কেনো আমাকে খুঁজলে না! তুমি কী আমাদের ছোটবেলার সব স্মৃতি ভুলে গেছো? আমার কথা কী তোমার একটুও মনে নেই! এমন কেনো করলে তুমি! সেইতো আসলে ফিরে,তবে কেনো আমার আকাশ আঁধার করে অন্য আকাশে জোছনা বিলিয়ে চলেছো! এখন আমি কি করবো সুমন! আমি যে আর তোমাকে নিজের করে কোনোদিন পাবো না, তোমাকে স্পর্শ করতে পারবো না, তোমাকে দূর থেকে অনুভব ছাড়া কিছুই রাখলে না আমার জন্য! কেনো এমন করলে তুমি? তোমাকে কতোবার কতো জায়গায় খুঁজেছি পাইনি।
তবু এখনো তোমার স্মৃতি বুকে ধারণ করে বসে আছি তুমি ফিরে আসবে?
এভাবে একা একা বিড়বিড় করেই চলছে সে। বাইরে থেকে শ্রাবণীর মা অনুমান করতে পারছিলো। ভেতরে কিছু একটা হচ্ছে। তাই হাতের কাজ ফেলে রেখে শ্রাবণীকে ডাকতে ডাকতে আবারও ঘরে প্রবেশ করে। শ্রাবণী তার মাকে আসতে দেখে তড়িঘড়ি করে চিঠির খাম আর পার্সটা ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে লুকিয়ে ফেলে। শ্রাবণীর মায়ের চোখে একটু ধান্ধা লাগে। মুহুর্তেই শ্রাবণীর মা আন্দাজ করে নেয় ড্রয়ারে কিছু একটা রেখেছে শ্রাবণী।
চলবে...