Main Logo
আপডেট : ২ মার্চ, ২০২৪ ০৯:৪৯

ধারাবাহিক উপন‍্যাস ( ষটত্রিংশ পর্ব)

গহীনে নীল

বেলায়েত হোসেন

 গহীনে নীল
তুফানী এই কয়দিন বাইরে থাকায় দোকানের অনেক হিসাব নিকাশ আটকে আছে। দোকানে গিয়েই হিসাব-নিকাশ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তুফানী। এমন সময় শ্রাবণীর মা গিয়ে হাজির। তুফানী শ্রাণীর মাকে দেখে তো অবাক। তুফানী মনে মনে ভাবে, কী ব্যাপার আন্টি হঠাৎ এখানে! কোনো সময় তো আন্টি আমার দোকানে আসেনি? আজ কী মনে করে আসলো বুঝতে পারছি না। তুফানী হিসাব নিকাশ ফেলে রেখে দাঁড়িয়ে যায়। বলে, আন্টি আপনি? কেমন আছেন। ভেতরে আসেন আন্টি? শ্রাবণী আসেনি? শ্রাবণীর মা উত্তরে জানায়, না মা? শ্রাবণী আসেনি। সে আসতে চেয়েছিলো আমিই তাকে আনিনি। কারণ, তোমার আঙ্কেল দুপুরে খেতে আসবে তো! তাই তাকে রেখে আসছি। 
তুফানী শ্রাবণীর মাকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। কী করবে কী করবে না বুঝতে পারছে না সে। শ্রাবণীর মাকে জিজ্ঞেস করে তুফানী-কী খাবেন আন্টি? শ্রাবণীর মা তুফানীকে বলে- তুমি এতো ব্যস্ত হয়ো না তো? আমি কিছু খাবো না। আসার সময় বাড়ি থেকে খেয়েই আসছি। না আন্টি এটা হবে না। আমার এখানে এসেছেন, না খেয়ে তো যেতে দিবো না! দুপুরে আমার সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে যাবেন। তুফানীর পীড়াপীড়িতে শ্রাবণীর মা সম্মতি দিয়ে বলে -আচ্ছা ঠিক আছে মা! তুমি যখন বলছো তাই হবে। শ্রাবণীর মায়ের কথায় তুফানী মহা খুশি। এবার বিনয়ের সাথে শ্রাবণীর মাকে তুফানী জিজ্ঞেস করে, বলুন তো আন্টি কী মনে করে এখানে? শ্রাবণীর মা ভণিতা করে বলে, বাহ্ রে, আমি বুঝি আসতে পারি না? কেনো নয় আন্টি! অবশ্যই আসতে পারেন তুফানীর উত্তর।
শ্রাবণীর মা তুফানীকে বলে-শোনো মা, আমি একটা  কাজে বেরুচ্ছিলাম তো! ভাবলাম মেয়েটাকে একটু দেখে যাই, তাই আসলাম। তুফানী বলে- খুব ভালো করেছেন আন্টি,এই না হলে কী আর মা মেয়ের সম্পর্ক? শ্রাবণীর মা বলে-বেশ তো মা! তোমার কী একটু সময় হবে? তুফানী জানায়-কেনো হবে না আন্টি! কী হয়েছে বলেন তো? শ্রাবণীর মা বলে-তোমার সাথে একটু নিরিবিলি বসে কথা বলতে চাই। মুহুর্তেই যেনো  তুফানীর মনের মাঠে সন্দেহের কুঁড়ি জেগে ওঠে। ভাবে, আন্টি নিরিবিলি কী কথা বলতে চায় আমার সাথে! তবে কী চিঠি ও চিরকুট আন্টির নজরে পড়েছে! বিষয়টি জানবার আগ্রহে ভেতরে তার অস্থিরতা শুরু হয়। তুফানী বলে-চলুন আন্টি দোকানের পেছনটায় গিয়ে বসি। 
শ্রাবণীর মা তুফনীকে বলে- আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোনো। 
-জ্বী আন্টি বলেন! 
-আমার কাছে শ্রাবণী যেমন! তুমিও তেমন। তোমাদের ভালো মন্দ এগুলো অভিভাবক হিসেবে আমার দেখার দায়িত্বে পড়ে না? 
তুফানী বলে- জ্বী আন্টি আপনারা না দেখলে কে দেখবে বলেন? শ্রাবণীর মা বলতে শুরু করে- তোমাদের বয়সটা এখন অন্যরকম। তোমরা এখন যা দেখো সবই তোমাদের চোখে ভালো লাগে। এই বয়সটা এমনই একটা বয়স! যে বয়স ভালো-মন্দের তফাৎ খুঁজে না। এ বয়সীদের চোখের সামনে নানানরকম স্বপ্ন উড়ে। চলার পথে প্রত্যেকেরই যেমন একটা স্বাধীনতা রয়েছে! তেমনই ইচ্ছে মতো স্বপ্ন দেখারও অধিকার রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা, সমাজের দায়বদ্ধতা, প্রতিবন্ধকতা। সবকিছু নিয়েই জীবন ব্যবস্থা। তার মাঝে অনেকেই আবার ভালো মন্দ যাচাইয়ের সক্ষমতা হারিয়ে স্বপ্নের মোহে পড়ে ভিন্ন পথে পা বাড়ায়। ফলে, অসময়ে দিক হারিয়ে অনিশ্চিতের দুয়ারে মাথা ঠুকে দিন কাটায়। তোমরা  দু'জনের মধ্যে কেউ এমনটি করেছো এটা আমি বলি না। কেউ করবে এমনটিও ভাবি না। উপস্থিত অভিভাবক হিসেবে তোমাদের কাছে এইটুকু তো আশা করতেই পারি যে, তোমাদের জীবন দুটি খুব বিলাসবহুল না হলেও অন্তত উপভোগ্যময় হয়ে উঠবে! কী বলো পারি না? 
-জ্বী আন্টি অবশ্যই পারেন। 
শ্রাবণীর মা আরো বলেন-এই কথাগুলো শুধু তোমাকেই নয় শ্রাবণীকেও বলে থাকি। জানা মতে শ্রাবণী এবং তুমি, তোমাদের দু'জনের মনের বসবাস এক জায়গায়। হঠাৎ করে তোমাদের মধ্যে এমন কী ঘটনা ঘটে গেলো যে কারণে দু'জনের মাঝে একটু দূরত্বের ছায়া দেখতে পাচ্ছি? বিষয়টি আমার কাছে কেবলই রহস্যময় হয়ে উঠছে। রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু কী একই অবস্থানে বিদ্যমান? 
 
শ্রাবণীর মায়ের এমন প্রশ্নে তুফানী হতচকিত হয়ে পড়ে। তুফানী মনে মনে ভাবে, আন্টি এটা কী বললো! তাহলে সুমনের সাথে শ্রাবণীর কোনোরকমের যোগসূত্র ছিলো? সুমন কী তাদের পরিচিত কেউ? যেটি শ্রাবণীর মা আগে থেকেই জানতো? কই কোনোদিন তো শ্রাবণীর মুখ থেকে ভুলেও শুনিনি? তুফানী একেবারেই চুপ হয়ে যায়। শ্রাবণীর মা তুফানীকে চুপ থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে-কী মা! চুপ করে আছো যে?
তুফানী মনে মনে ভাবে, শ্রাবণীর মায়ের এই প্রশ্নের কী জবাব দেবে সে? কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে বলে-আন্টি আসলে আপনি কী বলতে চাইছেন আমি কিছুই বুঝতে পাচ্ছি না। শ্রাবণীর মা আবারও বলেন-বলতে চাচ্ছি, তোমরা দু'জন কী একই কোনো বিষয় নিয়ে ভাবছো? যে কারণে তোমাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে? তুফানী উত্তরে শুধু এইটুকুই জানায়-আমি কিচ্ছু জানি না আন্টি? শ্রাবণীর মা অত্যন্ত জ্ঞানসম্পন্ন এবং বুদ্ধিমতী মানুষ। তুফানীকে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তরে যখন জানতে পারলো এই বিষয়ে সে কিচ্ছুটি জানে না এবং সাথে সাথেই একরাশ কালো মেঘের ছায়া উড়তে দেখলো তুফানীর চোখেমুখে, তখন আর শ্রাবণীর মায়ের বুঝতে বাকি থাকেনি দু'জনের মাঝে চলমান অভিমানী রহস্যের সূত্র কোথায়!
 
চলবে...
 
 
 
 
 
 
উপরে