আপডেট : ৪ মার্চ, ২০২৪ ১০:১৩
ধারাবাহিক উপন্যাস (সপ্তত্রিংশ পর্ব)
গহীনে নীল
বেলায়েত হোসেন
শ্রাবণীর মা চলে যাওয়ার পর থেকে কদিন যাবৎ একই প্রশ্নের অবতারণা ঘটে চলছে তুফানীর মনে। সে ভাবছে,আন্টি কী তাহলে আমার আর সুমনের সম্পর্কের কথা ইঙ্গিত করে গেলেন প্রশ্নের অন্তরালে? কোনোভাবে কী জেনে গেছেন আমাদের সম্পর্কের কথা? নাকি এ বিষয়ে শ্রাবণীর কথা হয়েছে তার মায়ের সাথে? দোদুল্যমান উদ্ভব প্রশ্নগুলো তুফানীর মনের জগতটাকে বিস্মিত করে তুলছে অবিরাম। আন্টি যদি আমাদের বিষয়টিকেই ভেবে নিয়ে কথাগুলো বলে গিয়ে থাকেন, তাহলে তিনিই তো আমাদের বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবেন! সুমনেরও আসার সময় হয়ে গেছে। আন্টি যদি আমাদের চলমান সম্পর্কের বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে কী করবো তখন? আন্টি যে ইঙ্গিত করে গেলো তাতে তো নিশ্চিত সংকট আসন্ন! কী ঘটতে যাচ্ছে সামনে! ভেবে পায় না তুফানী। এসব ভাবনার অবগাহনে উত্তরণের পথ খুঁজে খুঁজে উদ্বিগ্ন হয় তুফানী।
শ্রাবণীর মা তুফানীর এখান থেকে বাড়ি ফিরে গেলে শ্রাবণী তার মাকে জিজ্ঞেস করে তুফানীর সাথে দেখা হয়েছে? শ্রাবণীর মা উত্তরে বলে, হয়েছে। শ্রাবণী আবারও জিজ্ঞেস করে কী বললো তুফানী! শ্রাবণীর মা জানায়, কী আর বলবে! আমি যাওয়াতে সে খুবই খুশি। এমনভাবে জোর করে ধরলো দুপুরের খাবার না খেয়ে আসতে দিবে না। তখন বাধ্য হয়ে খেয়ে আসলাম। শ্রাবণী জিজ্ঞেসকরে - আর কিছু বলেনি! শ্রাবণীর মা বলে, আর কী বলবে! শ্রাবণী বলে বাহ্ রে আমার কথা জিজ্ঞেস করেনি? শ্রাবণীর মা- হ্যাঁ করেছে তো। আমি বলেছি তাকে আমিই আনিনি। শ্রাবণীর মা শ্রাবণীকে আরো বলে, তুফানীর এখানে যাওয়ার পর আমাকে দেখে সে খুব খুশিই ছিলো। তার সাথে কথাবার্তা বলার শেষে আমি ফিরে আসার মুহুর্তে দেখলাম তার মনটা বেশ ভারী হয়ে আছে। এই কথা শোনার পর শ্রাবণী নিশ্চিত ধরে নেয় তার মা তুফানীর সাথে যে কোনো একটা কেলেঙ্কারি করে এসেছে।
শ্রাবণী মনস্থির করে তুফানীর সাথে দেখা করবে। শ্রাবণীর মা এখন আর শ্রাবণীকে কোথাও একা বেরুতে দেয় না। কিন্তু কী বলে বেরুবে কোনো কারণ খুঁজে না পেয়ে সুযোগ সন্ধানের অপেক্ষায় থাকে শ্রাবণী। এরই মাঝে একদিন শ্রাবণীর ঋতু এবং বীথি নামের দুই বান্ধবী এসে হাজির তাদের বাড়িতে। তারা এসে তাকে বলে, তাদের সাথে শপিংয়ে যেতে। কিন্তু শ্রাবণী তাতে অপারগতা জানায়। বলে, মা যেতে দিবে না। এ কথা শুনে তারা দু'জন শ্রাবণীর মায়ের কাছে যায় এবং শ্রাবণীর মায়ের অনুমতি নিয়ে আসে। শ্রাবণীর মা তাদের দু'জনকে বলে দেয় তোমরা যেমন নিয়ে যাচ্ছো! তেমনি আবার তাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাবে। ওরাও শ্রাবণীর মায়ের কথামতো পৌঁছে দিয়ে যাবে বলে সম্মতি জানায়।
ওদের সাথে শ্রাবণী শপিংয়ে যায়। শপিং শেষে শ্রাবণী ওদেরকে প্রস্তাব করে বলে, চল এক জায়গায় যাবো। ওরা জানতে চায় কোথায় যাবি! শ্রাবণী উত্তরে জানায় এখন বলবো না, গেলেই তো দেখবি। তবে একটা কথা, আমরা যেখানে যাচ্ছি ফিরে এসে মাকে বলতে পারবি না। জাস্ট যাবো আর আসবো। ওরা তখন অমত না করে গিয়ে দেখে তুফানীকে। ওরা জনতো না এখানে তুফানীর দোকান। তুফানী দোকানের কাজে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে তখন। ওরা যেমন তুফানীকে দেখে অবাক! তেমনি তুফানীও শ্রাবণীর সাথে ঋতু আর বীথিকে দেখে আরো বেশি অবাক। তুফানী ভাবে, সেদিন বলা নেই কওয়া নেই আন্টি এসে গেলো। আজ আবার শ্রাবণী ঋতু এবং বীথিকে নিয়ে এলো কী কারণে! নানারকম সন্দেহ দোল খেতে শুরু করে তুফানীর মনে। তুফানী ভাবতে শুরু করে, সেদিন আন্টি এসে অনেক কিছু শুনিয়ে গেলো, এখন শ্রাবণী কোন্ কথা শোনাতে আসছে ভগবানই জানে। তুফানীকে উদ্দেশ্য করে শ্রাবণী বলে, কী রে ভেতরে আসতে বলবি না! নাকি বাইরে থেকেই বিদায় করে দিবি? তুফানী কথা না বাড়িয়ে বলে ভেতরে আয়। তুফানী শ্রাবণীকে জিজ্ঞেস করে ওদেরকে কোথায় পেলি! শ্রাবণী একটু মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলে, ওরাই আমাকে নিয়ে আসছে তোর কাছে। তুফানী বলে, ও তাহলে তুই ইচ্ছে করে আসিসনি! শ্রাবণী তুফানীকে বলে দেখ তুফানী খুঁচিয়ে কথা বলিস না তো! ইচ্ছে না থাকলে কী আর আসছি? তুফানী এবার একটু অভিমানী সুরে বলে এতোদিন পরে আসতে মনে হলো তোর! যাক তবু যে এসেছিস তাতেই আমি খুশি। তুফানী ঋতু এবং বীথিকে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করে। সে বলে তোমরা আমার এখানে আসছো দেখে কী যে ভালো লাগছে জানো! ঋতু আর বীথি তুফানী কে অভিযোগ করে বলে এখানে তোমার দোকান কোনোদিন তো বলোনি? তুফানী জানায়, আসলে জানাইনি তোমরা কী না কী ভাবো তাই।
শ্রাবণী,ঋতু এবং বীথিকে বলে তোরা সৈকত পাড়ে একটু ঘোরাঘুরি করে আয়। তুফানীর সাথে আমার কিছু কথা আছে আমি এই ফাঁকে সেরে নিই। কথামতো ওরা ঘুরতে চলে গেলে নীরবে বসে তুফানীর সাথে আলাপে মন দেয় শ্রাবণী। শ্রাবণী তুফানীকে জিজ্ঞেস করে সেদিন মা তোকে কী বলেছে বলতো শুনি? তুফানী শ্রাবণীর মায়ের কথা চাপিয়ে বলে,কই না তো! আন্টি আমাকে কী বলবে। শ্রাবণী বলে, দেখ আমার কাছে লুকাসনে। মা বাড়িতে গেলে আমি যখন মাকে তোর কথা জিজ্ঞেস করেছি, মা তখন ঘুরিয়েপ্যাঁচিয়ে নানাভাবে এড়িয়ে গেছে। মায়ের কথায় আমার মনে সন্দেহ লেগেছে। যাক গে তুই কোনো চিন্তা করিসনে। তোর যে কোনো সমস্যায় আমি আছি। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও সমস্যার সমাধান আমি করবো। কারণ....
চলবে...