হোমায়রা হিমুর মৃত্যুকালে পাশে থাকা কে এই মিহির?
অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর মুত্যুর খবর সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ‘মিহির’ নামটিও আলোচনায় আসেন। মিহির হিমুর মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন। ফলে তাকে তিনি বিভিন্ন কথা ওঠার সঙ্গত কারণ রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২২ মে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ মারা যাওয়ার সময়ও এই মিহির পাশে ছিলেন। তাজিন আহমেদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে অভিনয় শিল্পী সংঘ জানতে পারে তাজিন আহমেদের মৃত্যু সাধারণ ঘটনা ছিল না। কারণ তাজিন আহমেদকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে রেখে কেউ একজন পালিয়ে যায়। জানা যায়, তাজিনের সঙ্গে সেদিন তার এক বন্ধু ও একজন মেকআপ আর্টিস্ট ছিলেন। তার নাম ‘মিহির’। ফলে হিমুর রহস্যজনক মৃত্যুর পরে মিহিরের নাম আলোচনায় এসেছে সঙ্গত কারণেই।
হোমায়রা হিমুর মৃত্যুর পরও এই মিহিরের নাম দ্রুত আলোচনায় এসেছে। শুধু তা-ই নয় মিহিরের দিকে সন্দেহের তীর ছুড়েছেন অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।
মিহির হোমায়রা হিমু মৃত্যুর আগে তার বাসায় ছিলেন। এ প্রসঙ্গে অভিনয় শিল্পী সংঘের একটি সূত্র জানায়, ‘এই মিহির কেন বারবার কাজ থেকে দূরে থাকা অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন? যার উত্তর মিলছে না।’ এরপর মিহিরকে নিয়ে আলোচনা আরও বেগবান হয়।
জানা গেছে, এই মেকাপআপ আর্টিস্ট মিহির দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়ায় কাজ করেন। তার বাড়ি সিলেটে। বিভিন্ন কারণে মিহিরকে এড়িয়ে চলতেন অনেক শিল্পী–কলাকুশলীরা। পরে তার কাজ কমে যাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
প্রথম দিকে কাজ কম থাকলেও শুটিংয়ে পরিচয় হওয়া বিভিন্ন অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ান। এভাবেই তার সঙ্গে করোনার আগে হোমায়রা হিমুর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে বলে জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান বলেন, ‘মিহির অনেক আগে নিয়মিত কাজ করত। কিছু সমস্যার কারণে তাকে কাজে তেমন ডাকা হতো না। কোনো অভিনয়শিল্পী প্রস্তাব করলে হয়তো তার ডাক পড়ত। মিহিরের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, অল্প সময়ে সে সবার সঙ্গে মিশতে পারত।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে পরিবারের সদস্যদের মতো হয়ে যেত। একবার ভালো সম্পর্ক হলেই যেকোনো প্রয়োজনে যে কেউ সহজেই তাকে পেত। এই কারণে একসময় সে সম্পর্ক গড়ে তোলা অভিনয়শিল্পীদের বাসাতেই থাকা শুরু করে। ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পাশে থাকত। এমনটাই জানতে পেরেছি।’
প্রয়াত অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ অনেকটাই একাকী জীবনযাপন করতেন। তার বাবা মারা গিয়েছিলেন। পরে মায়ের কাছ থেকে তিনি আলাদা হয়ে যান। এই অভিনেত্রী সেই সময় কাছের কয়েকজনকে ঋণ নিতে সহযোগিতা করেন।
পরে সেসব মানুষের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক হলে তিনি নিজেই ঝামেলায় জড়িয়ে যান। কাজ থেকেও তিনি দূরে ছিলেন। একাকী এই সময়ে মিহিরের সঙ্গে তাজিনের বন্ধুত্ব হয়। অর্থনৈতিক লেনদেন থেকেই এই সম্পর্ক।
পরিবারের একজনের মতো ছিলেন এই মিহির। হোমায়রা হিমুর মৃত্যুর পর আবার মিহিরের নাম আলোচনায় এলে বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী চিন্তিত হন ও বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন তোলেন।
মিহির প্রসঙ্গে অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম বলেন, ‘হোমায়রা হিমু কিছুদিন কাজ করেননি। কিছুটা বিরতির পর সম্প্রতি সে দু–তিনটা ধারাবাহিক নাটকে যুক্ত ছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে আমাদের শিল্পীদের বড় আয়োজন ছিল। সেখানে তার প্রাণবন্ত উপস্থিতি ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে অনেকেরই যোগাযোগ ছিল। এমন না যে তার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল বা কাজ পাচ্ছিল না। অনেকেই বলছেন, কেউ মারা গেলেই তাকে সবাই স্মরণ করেন, বিষয়টা এমন না। কেউ দূরে থাকলে অন্যদের কী করার আছে?’
অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। তার মা–বাবা কেউ বেঁচে নেই। ফলে তিনি প্রায়ই একাকিত্ব ভুগতেন বলে সহকর্মীরাদের সূত্রে জানা গেছে। নিজের মতো করেই চলতে পছন্দ করতেন তিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় ছিলেন।
পরিবারের কেউ না থাকায় মৃত্যুর পরে হিমুর সব দায়িত্ব অভিনয় শিল্পী সংঘ পালন করেছেন। তখন তারা স্বাভাবিক মৃত্যু মনে করেই পাশে ছিল। কিন্তু পরে সবার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। অভিনেতা আহসান হাবিব নাসিম আরও বলেন, ‘এর আগেও একইভাবে তাজিনকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে একজন পালিয়ে যায়। এবারও হিমুকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে একজন পালিয়ে যায়। পরে জানা যায়, তার বাসায় সেই মিহিরই ছিল। এই নিয়ে ঘটনা কী, কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, সেটা পোস্টমর্টেম হওয়ার পরেই জানা যাবে। কেউ দায়ী থাকলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলব। কিন্তু এখন আমরা কোনো কিছু বলতে পারছি না।’
সূত্র : জাগো নিউজ