Main Logo
আপডেট : ৯ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:১৮

ভারতে চিকিৎসা নিতে গেলে সাবধান থা্কবেন যে সব বিষয়ে

মোল্লা জালাল

ভারতে চিকিৎসা নিতে গেলে সাবধান থা্কবেন যে সব বিষয়ে

বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা করাতে আসার আগে কিছু বিষয়ে সাবধান...থাকলে ভাল হবে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন শতশত লোক ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য আসেন। গত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশ এবং ভারতে একটি ভয়াবহ মেডিকেল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।  এটা আগে ছিলনা। আমি ২০১২ সাল থেকে কোলকাতা, চেন্নাই এবং ভেলোরে চিকিৎসার জন্য আসা যাওয়া করি। কোলকাতার ফর্টিস হাসপাতালে ২০১৩ সালে আমার বাইপাস সার্জারি করা হয়। ফর্টিসের প্রখ্যাত কার্ডিও সারার্জন কেএম মান্দানা খুবই যত্ন সহকারে শতভাগ পেশাদারিত্বের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে  আমার 

অপারেশন করেন। অপারেশনের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার কোন ধরনের অসুবিধা হয়নি।আমি খুবই ভাল ছিলাম। ২০১৩ সালের পর আমি যতবার কোলকাতা এসেছি ততবারই ড. মান্দার সাথে দেখা করেছি। আমাকে চেকাপ করে তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে আমার ডায়াবেটিস থাকার কারনে শরীরের বিভিন্ন অংশে মাঝে মধ্যেই প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে আমি সব সময়ই ইন্ডিয়া চলে আসিএবং  চিকিৎসা করিয়ে দেশে ফিরে যাই। ২০১২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমি কোন হাসপাতালে কোন দালাল এর খপ্পরে পড়িনি বা দালালদের দৌরাত্ম দেখিনি। কিন্তু ইদানিং কোলকাতা এবং চেন্নাইয়ের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা বাংলাদেশের লোকদের অবস্থা দেখে এবং তাদের অনেকের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারলাম তাদের মধ্য অনেকেই মহাবিপদে পড়েছে। এ চক্রটি ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভারতে চিকিৎসা করাতে আগ্রহী লোকদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের মেডিকেল ভিসার জন্য ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার সংগ্রহ করে দেওয়ার সময় যে যে হাসপাতালের মার্কেটিংবিভাগের লোকদের সাথে তাদের যোগাযোগ আছে  তাদের পরামর্শে ডাক্তার ঠিক করে ওই ডাক্তারের কাছে রোগী পাঠায়। অপারেশনের রোগীদের কতটাকা লাগবে সেটাও তারা আলোচনা করে কমিশন ভাগাভাগির শর্তে নির্ধারন করে নেয়। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর অপারেশনের খরচ এবং রোগীর স্বজনদের থাকা খাওয়ারর ব্যয় বাড়তে থাকে।এমতাবস্থায় রোগীকে ভয়াবহ সমস্যায় পড়ে দেশ থেকে বাড়িঘর জমিজমা বিক্রি করে একসময় নি:শ্ব হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।এঅবস্থা আগে ছিলনা। আমি গত ১২ বছরে দেখিনি কোন হাসপাতালের মার্কেটিং বিভাগের লোকদের রোগী হ্যান্ডেল করতে।এখন এটাই নিয়মে পরিনত হয়েছে। বিশেষ করে চেন্নাই, বেঙ্গালুর,হায়দ্রাবাদ ও ভেলোরের সিএমসি বাদে প্রায় সব হাসপাতালে এখন এ অবস্থা।এর কারন মূলত: ভাষাগত সমস্যা। এসব হাসপাতালের খুব সংখ্যক লোক হিন্দিভাষা জানে বা বুঝে। এরা তামিল ভাষী।টুকটাক ইংরেজি বুঝতে পারে।এই সুযোগটা নেয় হাসপাতালগুলোর মার্কেটিং বিভাগের লোকজনএরা বাংলা ইংরেজি হিন্দি সব ভাষাতে কথা বলে পারে।আমারমতে এক্ষেত্রে রোগীর উচিৎ হবে হাসপাতালের ওয়েবসাইটে  সার্চ করে সঠিক ডাক্তারের সাথে কনট্রাক করে চিকিৎসা করাতে আসা। নইলে অনেক সময় বিভিন্ন উপায়ে গলাকাটার শিকার হতে হবে। আমি দেখেছি ১ থেকে দেড়লাখ টাকা খরচের অপারেশনের জন্য রোগীকে  শোধ করতে হয়েছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা।আজকের বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা অনেক ফাস্ট। তারা নেটে সমগ্র দুনিয়া ঘুরে বেড়ায়। সুতরাং আপনি নিজে না পারলে ছেলেমেয়েদের বলুন তারা আপনার রোগের সঠিক ও অভিজ্ঞ ডাক্তার খুঁজে দিতে পারবে। কারন সব হাসপাতালেই একই বিষয়ের একাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছে। তাদের প্রোফাইল দেখলেই বুঝতে পারবেন এবং তার সম্পর্কে সব কিছুজানতে পারবেন। সুতরাং ডাক্তার ঠিক করা বা তাদের সাথে যোগাযোগ করাও কঠিন কোন কাজ নয়। অনলাইনে এ্যাপয়েন্টমেন্ট করে চলে আসলে কোন সমস্যা হবে না। ভারতের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভাল। তবে আসার আগে সব কিছু জেনে বুঝে আসবেন। বিশেষ করে কোথায় থাকবেন,কি খাবেন। হাসপাতাল থেকে থাকার হোটেলের দূরত্ব কত, হোটেলে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে কিনা, হোটেল থেকে হাসপাতাল একটু দূরে হলে কিভাবে যাতায়ত করতে হবে। তবে চেন্নাইয়ের কোন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসলে থাকার জন্য  এ্যাপলোর আশপাশের কোন হোটেলে থাকলে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে।  কারন এ্যাপলোর আশপাশে প্রচুর বাংলাদেশীএবং বাংলাভাষী মানুষ পাওয়া যায়। এখানকার অনেক হোটেলে বাঙ্গালী খাবারও পাওয়া যায়।  মনে রাখবেন কোন হাসপাতালে রোগীর সাথে কোন এ্যাটেনডেন্ট এলাও করা হয়না।হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগেই এবিষয়গুলো ঠিক করে নিবেন।পাশাপাশি পারত: কেউ বাংলা টাকা আনবেন না। কোলকাতার বাইরে বাংলা টাকা রুপিতে চেঞ্জ করতে গেলে রেট দিবে অনেক কম। সেক্ষেত্রে ডলার বা কার্ডে লেনদেন করায় সুবিধা বেশি। বিশেষ করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করা এবং বিমান ও রেলের টিকিট কেনার ক্ষেত্রে। বাজার খরচের টাকা এয়ারপোর্ট থেকে চেঞ্জ করে নিলে সব চেয়ে ভাল হয়। আমার অভিজ্ঞতার বিষয়গুলো আলোচনা করলাম। কারো কাজে লাগলে লাগতেও পারে....।

উপরে