বাবার মৃত্যু নিয়ে সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদের আবেগঘন স্ট্যাটাস
[ আজ ৭ ডিসেম্বর সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদের বাবা আব্দুল ওয়াদুদের মৃতু্ বার্ষিকী। তার বাবা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর সেনা বাহিনীতে কর্মরত থাকা সত্বেও বাবার চাওয়া অনুযায়ী বাবাকে সিএমএইচ-এ ভর্তি করাতে পারেননি। সেই কষ্টের কথাই আজ ফেসবুকে পোষ্ট করেছেন। নিচে তার স্ট্যাটাসটি হুবহু দেয়া হলো।]
আমার বাবার আজ মৃত্যুবার্ষিকীঃ একটি মৃত্যু এবং কিছু বেদনাদায়ক স্মৃতি।
আজ ৭ই ডিসেম্বর। আমার বাবা আব্দুল ওয়াদুদের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী। 1993 সালের এই দিনে আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যান।
কিছু মর্মান্তিক ঘটনা আজও আমাকে তাড়া করে। আজকের এই পোস্টের উদ্দেশ্য আমার মন হালকা করা।
আমার বাবা জুনিয়র প্ল্যানিং অ্যান্ড প্রভিশনিং অফিসার হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি শ্বাসকষ্ট ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন।
05 ডিসেম্বর 1993 আমি স্কুল অফ আর্টিলারির একজন প্রশিক্ষক গানারি (আইজি) এবং কোর্স ইনচার্জ হিসাবে হাটহাজারী ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে ছাত্র অফিসারদের সাথে ছিলাম। সেখানেই খবর আসে আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ। রাতেই ঢাকায় পৌঁছে বাবাকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। ভাইবোনেরা আমার বাবাকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাবার অবস্থা খুবই নাজুক দেখে কেউ তাকে ভর্তি করেনি। অবশেষে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি পৌঁছলে বাবা আমাকে একটাই কথা বললেন- “বাবা, সম্ভব হলে আমাকে তোমাদের সিএমএইচে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাও”। বাবাকে কথা দিয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। একজন চাকরিরত মেজরের বাবার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সিএমএইচে ভর্তি হতে পারেননি। সেনাবাহিনীর পরিচিত কয়েকজনের সাহায্য চেয়েছিলাম। সেদিন কেউ আমাকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি হতে সাহায্য করেনি। চাকুরীরত মেজর হিসেবে বাবাকে সিএমএইচে ভর্তি করতে না পারায় লজ্জায় বাবাকে দেখতে আর ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যাইনি। সেদিন ভোরবেলা বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এই অসহায়ত্ব আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে।
আল্লাহর অসীম রহমতে এবং আমার কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্পে আমি ধীরে ধীরে চাকরিতে উঠেছি। জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) থেকে শুরু করে মহাপরিচালক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (ডিজি বিজিবি) এবং সবশেষে সেনাপ্রধান, যিনি তার বাবা-মায়ের চিকিৎসার জন্য আমার কাছে এসেছিলেন, আমি আমার বাবার মৃত্যুর আগের মুহূর্তগুলি এবং আমার অসহায়ত্বের কথা মনে করি এবং আমি বিজিবিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেই বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ। এমনকি আমি এমন অনেকের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি যাদের আমি জানতাম না বা কোন রেফারেন্স ছিল না। হয়তো কেউ আমার ফোন নম্বর সংগ্রহ করে আমাকে মেসেজ করে তাদের বাবা/মায়ের জন্য তাদের অসহায়ত্বের কথা বলেছে।আজ হয়তো আল্লাহ তাদের কারো দোয়ায় আমার বাবা ও মাকে জান্নাতবাসী করেছেন।
আমার আব্বু আম্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করবেন।
জেনারেল আজিজ (সাবেক সেনাপ্রধান)