লকডাউন পরিস্থিতিতে রাজধানীতে মামলা কমেছে ৮৩ শতাংশ
করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন পরিস্থিতি বিরাজ করায় রাজধানীতে মামলার সংখ্যা ৮৩ শতাংশ কমেছে। এপ্রিলের ৩০ দিনে নগরের ৫০টি থানায় মামলা হয়েছে সর্বমোট ৩৪৯টি। অথচ এই সংখ্যা মার্চ মাসে ছিল ২ হাজার ৫৫। ভাইরাসের কারণে মানুষের যাতায়াত ও চলাফেরা কম হওয়ায় সংখ্যাটি কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, মামলার সংখ্যা দিয়ে কখনো অপরাধের সঠিক চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। ভোগান্তির ভয়ে মানুষ এমনিতেই পুলিশের শরণাপন্ন হতে চায় না। আর পরিবর্তিত এই পরিস্থিতে আদৌ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে কি না, এই অনিশ্চয়তা থেকে আরও যাচ্ছে না অনেকে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে অফিস, আদালত, দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তায় মানুষের চলাচলও ছিল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক কম। এর একটি ভালো প্রভাব পড়েছে শহরের অপরাধ চিত্রেও।
বিভিন্ন থানা থেকে মামলার হিসাব নিয়ে প্রতিমাসেই তালিকা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এপ্রিল মাসে হওয়া ৩৪৯টি মামলার মধ্যে অপরাধ খাতে মামলা হয়েছে ১১৭টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয়েছে ৪৯টি। এই ৪৯টির মধ্যে ১৪টি ধর্ষণ মামলা। এরপর সবচেয়ে বেশি ৪৬টি মামলা হয়েছে চুরির। এ ছাড়া ডাকাতি আইনে একটি মামলা, দস্যুতা পাঁচটি, খুন আটটি, দ্রুত বিচার আইনে পাঁচটি, প্রতারণার পাঁচটি মামলা হয়েছে। পুলিশের ওপর আক্রমণের কারণে মামলা হয়েছে দুটি। মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারজনিত কারণে মামলা হয়েছে ১২৩টি। বাকি ১০৭টি মামলা হয়েছে অন্যান্য আইনে।
ভাইরাসের কারণে মানুষের যাতায়াত ও চলাফেরা কম হওয়ায় সংখ্যাটি কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অপরাধ খাতে হওয়া মামলাগুলোর একটি বড় অংশ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে হওয়ার বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, করোনার
কারণে মানুষ লাগাতার ঘরে থাকছে। এর মধ্যে অনেকেরই বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয়ে টান পড়েছে। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। এ কারণে অসহিষ্ণুতা বেড়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বেড়েছে, যা অনেক সময় নির্যাতনের পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। এই চিত্র এখন সারা বিশ্বেই দেখা যাচ্ছে।
নূর খান মনে করেন, মামলার পরিসংখ্যান কখনই অপরাধের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে না। এই পরিস্থিতেও বিষয়টা একই। যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত থাকায় অনেকেই স্থানীয়ভাবে অপরাধের মীমাংসা করে ফেলেছেন।
ডিএমপির হিসাব অনুযায়ী, মার্চ মাসে ডিএমপিতে সর্বমোট মামলা হয়েছিল ২ হাজার ৫৫টি। এর মধ্যে অস্ত্র আইনে ১৪টি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১ হাজার ১২৭টি মামলা হয়েছিল। ডাকাতির ঘটনায় ২, বাসায় চুরির ঘটনায় মামলা ৫১, খুনের ঘটনায় ১৭, দ্রুত বিচার আইনে ১৪, ধর্ষণের ঘটনায় ৫৬ এবং নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা ১৩২টি মামলা করা হয়েছিল। এ ছাড়া প্রতারণার ঘটনায় ৬৭, মোটরসাইকেল ও গাড়ি চুরির ১টি করে এবং অন্যান্য চুরির ঘটনায় ১১৭টি মামলা হয়েছিল। তবে মার্চ মাসেও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
এদিকে ফেব্রুয়ারিতে মামলা হয়েছিল ২ হাজার ১৩১টি। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনায় ৪৫, নারী নির্যাতনে ১২০, শিশু নির্যাতন ২৯, প্রতারণায় ৬১, বাসায় চুরির ঘটনা ৭৪, মোটরসাইকেল চুরি ১৬, গাড়ি চুরি ১৪, অন্যান্য চুরির ঘটনায় ৮৩টি মামলা হয়। মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় ফেব্রুয়ারিতে মামলা হয়েছিল ১ হাজার ২০৫টি।
গত জানুয়ারিতেও মোট ২ হাজার ২৪৭টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে খুনের ঘটনায় ২১টি, ডাকাতির ঘটনায় দুটি, ধর্ষণে ৪২, নারী নির্যাতনের ঘটনায় ৮৬, প্রতারণায় ৬১, বাসায় চুরি ৬৫, মোটরসাইকেল চুরি ৩০, গাড়ি চুরি সাতটি, অন্যান্য চুরির ঘটনা ঘটেছে ১০১টি, অস্ত্র আইনে ১৩টি এবং মাদকদ্রব্য আইনে ১ হাজার ৩২৩টি মামলা হয়েছিল।
গত চার মাসের মামলার তুলনামূলক পর্যালোচনা করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অন্যান্য সময় হওয়া মামলার ৬০ শতাংশই থাকে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের। করোনাভাইরাসের কারণে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ থাকায় মাদকের সরবরাহও কমেছে। এ ছাড়া মানুষের চলাফেরা কম হওয়ায় অন্যান্য অপরাধও কমে গেছে।