কারাগারে ২৭ জন করোনা আক্রান্ত
আক্রান্ত রোধে নানা পদক্ষেপ

করোনা ভাইরাস রোধে দেশের কারাগারগুলোতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের কারনে কারাগারে বন্দির মধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়ায়নি। এখন পর্যন্ত ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন চিকিৎসক, একজন বন্দি ও বাকিরা কারারক্ষী। অন্যেিদক পুরনো ঢাকার পুরনো কারাগারের ব্যারাকে থাকা ২৩ কারা রক্ষি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে গতকাল রবিবার পর্যন্ত ৫ জন সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। অন্যরাও সুস্থতরার পথে। নারায়নগঞ্জ কারাগারে এক কারাক্ষী গতকাল করোনা পজিটিভ হয়েছে। তাকে আইসোলোসনে রাখা হয়েছে। দেশের ৮ টি কারাগারের ৩৭০ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে বন্দি রয়েছেন ৩০১ জন। ৬৯ জন কারারক্ষী।
কারা সূত্র জানায়, ক’দিন আগে পঞ্চগড় কারাগারে একজন বন্দির করোনা পজিটিভ হওয়ার পর ১৮৭ জন বন্দি ও ৬ জন কারারক্ষীকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। তবে দু’দিন আগে দ্বিতীয়বার টেস্টে তার করোনা নেগেটিভ ধরা পড়ে। ফলে কারা কর্মকর্তাদের স্বস্থি ফিরে এসেছে। সিলেটে একজন বন্দি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কারনে সিলেট করাগারের ৮৬ জন বন্দি ও ২৬ জন কারারক্ষীকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। কারাবন্দিদের মাঝে যাতে করোনা ভাইসরাস ছড়াতে না পারে সে জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন,‘কারাগারকে করোনা মুক্ত রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা। ভার্র্চুয়াল কোর্ট চালু হওয়ার কারণে বন্দিদের আদালতে পাঠানোর দরকার হচেছ না। এতে বন্দিদের ক্ষোভ যেমন কমেছে তেমনি জামিন পেয়ে অনেকে চলে যাওয়ায় বন্দির সংখ্যও হ্রাস পাচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, গত বছর ডেঙ্গুর ভংঙ্কর রূপ লাভ করলেও সঠিক পদক্ষেপ নেয়ায় কারো ডেঙ্গু হয়নি এবারো আমরা করোনার বিষয়ে আগে ভাগেই পদক্ষেপ নেই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কারোনা ভাইরাস রোধে।’
কারা সূত্র জাানায়, করোনায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কারাগারে অনেক বন্দি আক্রান্ত হয়েছে। সে তুলনায় বাংলাদেশের কারাগারগুলো এখ নপর্যন্ত নিরাপদ রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি কারা কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয় করোনা রোধে। ফলে এখ নপর্যন্ত তারা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বন্দি শ^াস কষ্টে ভোগারপর তাকে হাসপতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ মে তার মতৃ্যু হয়। পরে পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ ধরা পরে। এরপর এই কারাগারের রর ৮৬ জন বন্দি ও ২৬ জন কারারক্ষীকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
কারা সূত্র জানায়, সিলেটের যে বন্দি মারা গেছেন তার সঙ্গে দুইমাস আগে থেকে কারো সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। ফলে করোনা অক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এরপরও করোনা ভাইরাস পজিটিভ আসায় আবাক হয়েছেন কারা কর্মকর্তারা। সিলেট কারাগার ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্য কোন কারাগারের কোন বন্দি আক্রান্ত হয়নি বলে কারা সূত্র জানায়।
যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে : সকল কারা কর্মকর্তা কর্মচারির যাবতীয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। নিতান্তই অপরিহার্য প্রয়োজন ব্যতীত কারা স্টাফদেও কারা এলাকার বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ বা তাদের কোন আত্মীয় স্বজন বাহির থেকে কারাগার এলাকায় প্রবেশ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। মুভমেন্ট সিমিত রাখার সা¦ার্থে যাবতীয় স্বাভাবিক বদলী কার্যক্রম স্বগিত রাখা হয়েছে। প্রত্যেক বিভাগ ও প্রত্যেক কারাগাওে করোনা সংক্রান্ত উদ্বত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। বন্দিদের সম্ভাব্য অসন্তোষ বা দাঙ্গা মোকাবেলায় তাদেরকে মোটিভেশন করার পাশাপাশি আকস্মিক তল্লাসিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা। দেশের প্রত্যেক বিভাগে বিভাগীয় আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। কারা কর্মকর্তা কর্মচারিদের অসুস্থতা কোন লক্ষন দেখাদিলে সাথেসাথে কোয়েরান্টাইন করা এবং প্রয়োজন বোধে আইসোলেশনে পাঠাানো ও পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা। নিতান্ত অপরিহার্য চিকিৎসা প্রয়োজন ব্যতীত কারাগার থেকে কোন বন্দিকে বাহিরের হাসপাতালে প্রেরণ না করা. যেন বন্দিগণসুরক্ষিত থাকে।
কারাগারের অভ্যন্তরে ডিউটিতে গমন কারী প্রত্যে কর্মকর্তা কর্মচারিকে জীবানুনাশক দ্রবণে যেমন পটাশিয়াম পারম্যাঙানেট দ্রবন ইত্যাদিতে পদার্পস করে কারা অভ্যন্তরে প্রবেশকরার ব্যবস্থা চালু করা। আদালতে বন্দিদের জামিন বা মামলা শুনানীর জন্য গমানাগমন হ্রাসে উদ্যোগ নেয়া। বন্দির আত্মীয় স্বজন দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ করা যেন বাইওে থেকে ভাইরাস ছড়াতে না পারে। দেখা সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ হওযার আত্মীয় স্বজচনের সাথে পারিবারিক বন্ধন অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে দেশের সকল কারাগারে মোবাইল ফোন বুথ চালু করা। বন্দিও আত্মীয় স্বজন কারাগারে আসতে পারছেন না বিধায় বন্দিদেও পিসি (প্রিজনার ক্যাশ) এখনো টাকা জমা দেয়ার প্রয়োজন হলে তা মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম যেমন সরকারি সার্ভিস নগদ বা বেসরকারি সার্ভিস বিকাশের মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। কারাগারে সংখ্যাধিক্যা হ্রাসে বন্দি মুক্তির উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে ২৮৮৪ জন বন্দি মুক্ত হয়েছেন।