২৮ অক্টোবর রাজধানীতে আ.লীগ বিএনপির মহাসমাবেশের ঘোষণা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক প্রস্তুতি পুলিশের
২৮ অক্টোবর রাজধানীতেস বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যেমন উৎকণ্ঠা বাড়ছে তেমনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। একই দিনে ঢাকায় সমাবেশ করবে জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো। ওই দিনই বিএনপির কর্মসূচিস্থল থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে গুলিস্তানে মহাসমাবেশ ডেকেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সব মিলিয়ে ওই দিনটিতে কি ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
একই দিন বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আর সমমনাদের মাঠে থাকা, সব মিলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও করণীয় নির্ধারণে দফায় দফায় জরুরি বৈঠক করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিশৃঙ্খলার গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে সতর্ক অবস্থানে থেকে পুলিশ নিচ্ছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি।
সমাবেশ সামনে রেখে বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের তালিকা ধরে ওয়ারেন্টভুক্তদের গ্রেফতারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপি নেতাদের রাত্রিকালীন অবস্থান চিহ্নিত করে গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার একদিনেই গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ২২৯ নেতাকর্মীকে।
সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ডিএমপির সব পর্যায়ের সদস্যদের ছুটি নিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের পর যাতে সমাবেশস্থলে কোনো নেতাকর্মী অবস্থান করতে (বসে পড়তে) না পারে সেজন্য পুলিশ নিচ্ছে বিশেষ প্রস্তুতি। সহিংসতা করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এসব বিষয় জানিয়ে ডিএমপি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালন করা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ঢাকার দুই কোটি নাগরিককে অবরুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই। অবরুদ্ধ কাউকে করতে দেওয়া হবে না।
যদিও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ হবে। সেদিন ঢাকায় বসে পড়ার কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে না। তবুও সতর্ক পুলিশ। কারণ কর্মসূচি ঘোষণার দিনই মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, মহাসমাবেশে বাধা সৃষ্টির জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকে পুলিশ গণগ্রেফতার শুরু করেছে। এলাকাভিত্তিক তালিকা ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে তারা। এমনকি হোটেলে থাকা নেতাকর্মীদেরও হয়রানি করছে। প্রতিদিনই শহরের কোনো না কোনো প্রান্তে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অথবা হয়রানি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশই নিজ বাসায় অবস্থান করতে পারছেন না। আটক করে পুরোনো মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। ২৫ অক্টোবরের পর থেকে ব্যাপক গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, তারা স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সমাবেশ ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির বিষয়টি সঠিক নয়। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং ওয়ারেন্টভুক্ত তাদের গ্রেফতার করা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সমাবেশ ঘিরে তিন স্তরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সমাবেশের আগের দিন থেকে ঢাকায় প্রবেশের সময় তল্লাশি জোরদার করা হবে। ঢাকার প্রতিটি হোটেল ও মেসে নিয়মিত তল্লাশি চালাবে পুলিশ। কারণ নাশকতা কিংবা সহিংসতার জন্য কেউ আগ্নেয়াস্ত্র অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য রাখতে পারে। সর্বশেষ বসে পড়ার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হবে।
প্রয়োজন হলে আমরা অবশ্যই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করবো। চেকপোস্ট প্রয়োজন হলে করা হবে। ঢাকাবাসীর নিরাপত্তায় যা যা দরকার তাই করা হবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রস্তুত।
জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর পুঙ্খানুপুঙ্খ তল্লাশি নিশ্চিত করতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ চেকপোস্টগুলোতে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হবে। নিরাপত্তা জোরদারে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে থাকবেন কর্মকর্তারাও। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসানোর পাশাপাশি ঢাকার প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে মেটাল ডিটেক্টরসহ অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসাবে।
পুলিশ বলছে, প্রায় দুই কোটির বেশি ঢাকার জনগণের নিরাপত্তায় প্রস্তুত ডিএমপি। যে কোনো নাশকতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠেকাতে গোয়েন্দারা মাঠে সর্বদা কাজ করছে। রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, সে অনুযায়ী মাঠে পুলিশ কাজ শুরু করছে। এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যানজট পরিস্থিতি মোকাবিলা, নাশকতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মোকাবিলার কৌশলে পুলিশ আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। সাইবার স্পেসেও মনিটরিং করবে পুলিশ।
২৮ অক্টোবর সমাবেশ কেন্দ্র করে নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি নেই। অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিরাপত্তা প্রদানে কাজ করবে র্যাব। সাইবার ওয়ার্ল্ডে ঝুঁকি মোকাবিলায় ও গুজব রোধে র্যাবের সাইবার ইউনিট কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, মহাসমাবেশ ঘিরে কেউ কেউ অস্ত্র ও বিস্ফোরক সঙ্গে আনতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারে গোয়েন্দাদের নেতৃত্বে অভিযান চালানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।