মুগদা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের নির্দেশদাতা ও তার সহযোগীসহ গ্রেফতার ২
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের একটি টিম মুগদা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের নির্দেশদাতা ও তার সহযোগীসহ ০২ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের নাম- মোঃ আমির হোসেন রকি (২৫), ও মোঃ সাকিব @ আরোহান (২১)।
গতকাল ০৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে কেরানীগঞ্জের ঢাকা সেন্ট্রাল জেলগেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের নিকট হতে ০২ (দুই) বোতল পেট্রোল ও ০১(এক)টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি তাদের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা এবং বর্বরতা প্রদর্শন করে তা ইতিহাসে বিরল। এ ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত ও প্রায় শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হন। এদের মধ্যে কয়েকজন এখনো জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসারত আছেন। এ ঘটনার পর গত ৩১ অক্টোবর থেকে ০২ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি ও জামাত অবরোধে ডাকা দেয়। এ সময় বিএনপি জামাত আবার তাদের স্বচরিত্রে ফিরে এসেছে। তিন দিনের এ অবরোধে ঢাকা মহানগরীতে ২৩টি সহ সারা দেশে মোট ৫২টি গাড়ি অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর ধারাবাহিকাতায় রাজনৈতিক সহিংসতার অংশ হিসেবে গত ০১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ সকালে মুগদা থানাধীন অতীশ দীপঙ্কর রোডের মুগদা বিশ^রোডের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মুগদা শাখার রাস্তার বিপরীত পাশের্^ পাকা রাস্তার উপর মিডলাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে কতিপয় বিএনপি দলীয় দুষ্কৃতিকারীরা যাত্রীবেশে উঠে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। পালানোর সময় জনগণের সহযোগিতায় পুলিশ হাতে-নাতে আল আমিন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। এ সংক্রান্তে বাসের মালিক মুহাম্মদ দুলাল হোসেন বাদী হয়ে ০১ নভেম্বর মুগদা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর পরই সিটিটিসির ইন্টেলিজেন্স টিম ঘটনায় জড়িত ও আর্থিক সহযোগীতা দাতাদের গ্রেফতার করার জন্য কাজ শুরু করে। জানা যায়, আল আমিন স্থানীয় বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতাদের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় তাদের দলীয় নেতা মিজানসহ তার অপারাপর সদস্যগণ যাত্রীবেশে টিটিপাড়া থেকে বাসে উঠে এবং বর্নিত ঘটনাস্থলে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। তার দেওয়া তথ্য বিশ্লেষন করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ও মুগদা থানার একটি যৌথ দল গত ০৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ ভোরে গাজীপুরের বাসন হতে অগ্নিসংযোগকারী গ্রæপের মূল সমন্বয়কারী মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাসে আগুন দেওয়ার বিষয়ে বিএনপি’র সক্রিয় কর্মী মিজানুর রহমান জানায়, অবরোধের প্রথমদিন তার নেতা সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আমির হোসেন রকি তাকে ফোনে বাসে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেয় এবং বলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ও তাদের নির্দেশমতেই তারা কাজ করছে। সে আরও বলে, যদি সে আগুন দিতে পারে তবে বিএনপি আর কয়দিন পর ক্ষমতায় এসে তাকে এমন টাকা পয়সার ব্যবস্থা করবে যে, তার আর কোন অভাব থাকবে না। ঐ দিন সন্ধ্যা অর্থাৎ গত ৩১ অক্টোবর ২০২৩ মোটরসাইকেল নিয়ে উক্ত নেতা গুলিস্থান এলাকায় এসে তাকে পাশে ডেকে নিয়ে পর দিন কমলাপুর থেকে মুগদা পর্যন্ত স্থানে বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে এক হাজার টাকা ও এক বোতল পেট্্েরাল প্রদান করে। এ প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত মিজান তার অন্য সহযোগী আল আমিনসহ আরও দুইজন ০১ নভেম্বর ২০২৩ সকালে মুগদা থানাধীন অতীশ দীপঙ্কর রোডস্থ মুগদা বিশ^রোডের আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, মুগদা শাখার রাস্তার বিপরীত পাশের্^ পাকা রাস্তার উপর উপর মিডলাইন পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়।
তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিটিটিসির একটি টিম কাজ শুরু করে। গোপনসূত্রে জানা যায় যে, রকি গতকাল ০৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ সকালের দিকে দয়াগঞ্জ এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ এবং স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে। এর প্রেক্ষিতে ঐ এলাকায় পুলিশী তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুষ্কৃতিকারীদের ধরার জন্য পুলিশ কাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে সিটিটিসির গোয়েন্দা তথ্যের প্রেক্ষিতে রকির নির্দেশে আগুন দেওয়ার পূর্বেই যাত্রাবাড়ী থানা তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পুলিশী তৎপরতায় ঐ এলাকায় কিছু করতে না পারায় রকি তার এক নেতার সাথে আগুন দেওয়া সংক্রান্তে পরামর্শ করে এবং তার অপর সহযোগী সাকিবকে নিয়ে আরামবাগ পাম্প থেকে পেট্রোল নিয়ে কেরানীগঞ্জের এলাকায় তার সাথে দেখা করতে রওয়ানা করে। সিটিটিসির ইন্টেলিজেন্স টিমটি তাকে অনুসরণ করে বাবু বাজার ব্রিজের উপর থেকে মোঃ আমির হোসেন রকি ও তার সহযোগী সাকিব @ আরোহানকে দুই বোতল পেট্রোল ও তাদের ব্যবহৃত একটি মোটর সাইকেলসহ গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আমির হোসেন রকি জানায় , সে সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র শীর্ষ এক নেতার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও আর্থিক সহযোগীতায় সে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রেখেছে। উক্ত নেতারা তাকে বিএনপি দলীয় ক্যাডারদের সমন্বয় করে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলো এবং এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করেছিল। এ ধারাবাহিকতায় সে বিএনপি কর্মী মিজানকে টাকা ও পেট্রোল সরবরাহ করে যার ভিত্তিতে মিজান, আল আমিন ও তাদের অপর দুই সহযোগী মুগদা থানা এলাকায় মুগদা বিশ^রোডের আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, মুগদা শাখার রাস্তার বিপরীত পাশের্^ পাকা রাস্তার উপর যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়। আগুন দেওয়ার পরপরই মিজান তাকে ফোন দিয়ে আগুন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে সে তার ব্যবহৃত মোবাইলের বিকাশ নম্বর থেকে মিজানের বিকাশে তিন হাজার টাকা প্রেরণ করে। এ সময় সে অপর সহযোগী সাকিব @ আরোহানকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলের পাশেই মোটর সাইকেল নিয়ে উপস্থিত ছিলো। জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও জানায়, ৩১ অক্টোবর থেকে ০২ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপির ডাকা প্রথম ধাপের অবরোধের চেয়ে ৫-৬ নভেম্বরের দ্বিতীয় ধাপের অবরোধে যাত্রীবাহী বাসে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে দ্বিগুন টাকার ঘোষণা এসেছে।
গ্রেফতারকৃত রকি প্রথম ধাপের বিএনপির ডাকা অবরোধে মুগদার বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে শাহবাগ ও কোতয়ালী থানায় আরও দুটি মামলা রয়েছে।
উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সর্বাত্মক কাজ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ । গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।