আপডেট : ২১ নভেম্বর, ২০২৩ ১১:৫৬
বাসে আগুন দেয়া চার জন গ্রেপ্তার
রেকি করে কিভাবে বাসে আগুন দেয়া হলো জানাল গ্রেপ্তারকৃতরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ১৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ রাজধানীর মিরপুরের কালশী এলাকায় বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ০৪ জন অগ্নিসংযোগকারীকে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাব জানায়,গত ১৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী রাজধানীর মিরপুর কালশী সড়কে ‘বসুমতি পরিবহনের’ একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী দল কর্তৃক এ সকল অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও সহিংসতার সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। র্যাব এসকল অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও সহিংসতার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায়, গত রাতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুর কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহনের বাসে অগ্নিসংযোগকারী ১। আল মোহাম্মদ চাঁন (২৭), পিতা- মান্নান, কাউনিয়া, বরিশাল, ২। মোঃ সাগর (২৫), পিতা- মোঃ মহিউদ্দিন, আদিতমারী, লালমনিরহাট, ৩। মোঃ আল আমিন @রুবেল (২৯), পিতা-মোঃ ইমরান, বোয়ালমারি, ফরিদপুর ও ৪। মোঃ খোরশেদ আলম (৩৪), পিতা-মৃত তসির উদ্দীন পঞ্চগড়’দেরকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। তাদের দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নিদের্শনায় গ্রেফতারকৃত আল মোহাম্মদ চাঁন রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবীর আশপাশের এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ করার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় গ্রেফতারকৃত চাঁন ও তার সহযোগী সাগর ও আলামিন @রুবেল সহ রাজধানীর মিরপুর-১১, তালতলা নাভানা, কালশী রোড, সিরামিক রোড এলাকায় সুবিধা জনক স্থানে সুবিধামতো সময়ে যানবাহনে আগুন দেয়ার জন্য রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত রেকি করে। গ্রেফতারকৃত আল মোহাম্মদ চাঁন যানবাহনে আগুন দেয়ার জন্য তার বন্ধুর মোটরসাইকেল থেকে ২৫০ এমএল পরিমাণ পেট্রোল বের করে টাইগার এনার্জি ড্রিংক এর বোতলে ভরে ঐদিন সন্ধ্যায় আল আমিনের নিকট দেয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা ঐ দিনেই পুনরায় রাত আনুমানিক ১১ টায় বাসে অগ্নিসংযোগ করার জন্য রাজধানীর কালশী সড়কে রেকি করে। এসময় কালশী সড়কে মসজিদের পাশে পার্ক করা বসুমতি পরিবহনের একটি বাস সুবিধাজনক হওয়ায় গ্রেফতারকৃত চাঁনের নির্দেশে গ্রেফতারকৃত সাগর ও আল আমিন বাসের নিকট যায় এবং গ্রেফতারকৃত আল আমিন বাসের মাঝের জানালা খুলে পেট্রোল ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে সাগরের সাথে পালিয়ে যায়। এসময় গ্রেফতারকৃত চাঁন রাস্তার আইল্যান্ডের উপরে দাঁড়িয়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের নির্দেশনা প্রদান ও ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে। অন্য কোন বিরোধী দলের সদস্যরা যাতে এ ঘটনার ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নিকট প্রেরণ করে কৃতিত্ব নিতে না পারে সেজন্য গ্রেফতারকৃত চাঁন বাসে আগুন দেয়ার সাথে সাথেই গ্রেফতারকৃত খোরশেদকে ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ধারণ করে তাৎক্ষণিক তাকে পাঠাতে বলে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত চাঁন ধারণকৃত ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নিকট প্রেরণ করেছে বলে জানায়। উক্ত কাজের জন্য গ্রেফতারকৃত চাঁন প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পেলেও সে গ্রেফতারকৃত সাগর ও আল আমিনকে ৭ হাজার টাকা করে প্রদান করেছে বলে জানা যায়। মূলত দলের নিকট নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও দলের প্রতি নিজেদের আস্থার প্রতিদান দিতে তারা এ সকল নাশকতা ও সহিংসতার ভিডিও ধারণ করে তাদের দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের নিকট প্রেরণ করতো বলে জানা যায়। এছাড়াও নাশকতার এসকল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রæপে শেয়ার করে তাদের সমমনা অন্যান্য অনুসারীদের নাশকতা সৃষ্টিতে প্ররোচিত করতো। পরবর্তীতে স্থানীয় শীর্ষ নেতারা গ্রেফতারকৃত চাঁনকে পুনরায় অদ্য ২১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ সন্ধ্যায় একইভাবে সুবিধাজনক স্থানে গাড়ি পোড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃতরা গত ২৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ রাজধানীর পল্টনে বিরোধী একটি দলের মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করে পল্টন এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহন, সরকারি পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নাশকতা ও সহিংসতার সাথেও জড়িত ছিল বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আল মোহাম্মদ চাঁন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নির্দেশে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় যানবাহনে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা এবং নেতৃত্বে দেয়। এছাড়াও সে নাশকতা ঘটানোর জন্য সমর্থকদের কাজ ভাগ করে দিতো ও টাকা সংগ্রহ করে সকলের মাঝে বিতরণ করতো বলে জানা যায়।
৬। গ্রেফতারকৃত মোঃ সাগর গ্রেফতারকৃত চাঁন এর সহযোগী। সে গ্রেফতারকৃত চাঁনের নির্দেশে নাশকতার জন্য সুবিধাজনক টার্গেট ও স্থান রেকি করে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত মোঃ আল আমিন @রুবেল গ্রেফতারকৃত চাঁনের সহযোগী ও গ্রেফতারকৃত সাগরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে গ্রেফতারকৃত চাঁনের নির্দেশে রাজধানীর কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্লবী থানায় মাদক সংক্রান্ত ০২টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত খোরশেদ আলম গ্রেফতারকৃত চাঁনের সহযোগী। সে গ্রেফতারকৃত চাঁনের নির্দেশে রাজধানীর কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহনের বাসে অগ্নিসংযোগের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে গ্রেফতারকৃত চাঁনকে প্রেরণ করে। এছাড়াও সে রাজধানীর মিরপুর এলাকার যেকোন প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন নাশকতা এবং সহিংসতার ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং এসকল ভিডিও গ্রেফাতরকৃত চাঁনের মাধ্যমে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের নিকট প্রেরণ করে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।