আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে শত কোটি টাকা প্রতারণা, এক রোমান্স স্ক্যামার গ্রেফতার
ফেইক ফেসবুক প্রোফাইলের মাধ্যমে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ, বিয়ের প্রলোভন ও পরবর্তী সময়ে সপরিবারে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে শত কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে এক রোমান্স স্ক্যামারকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগ। গ্রেফতারকৃতের নাম মোঃ বেনজির হোসেন। আজ সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম-বার।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃত বেনজির, শাহিদ হাসান নামে আমেরিকা প্রবাসী এক বাংলাদেশী বিমান চালকের প্রোফাইল হুবহু কপি করে একটি ফেইক ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে। ফেসবুক প্রোফাইলটিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য সে নিয়মিত প্রকৃত শাহিদ হাসানের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতো। প্রতারক বেনজির ডিভোর্সী নারী, সিঙ্গেল মাদার ও নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতো। সে ভিকটিমদের কাছে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য আমেরিকার সময় যখন রাত নয়টা বাংলাদেশের সময় তখন সকাল আটটা তা মিলিয়ে কথা বলতো। এক পর্যায়ে প্রেমের ফাঁদ, বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতো। এরপর সে বিভিন্ন সময় বিপদে পড়ার কথা বলে ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা নিতো। গত ৪ মাসে তার ১৩টি নগদ নাম্বারে ১ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, বেনজিরের প্রতারণার স্বীকার এমনই একজন ভিকটিম স্বপ্না (ছদ্মনাম) একজন সিঙ্গেল মাদার। তিনি গত সাত মাসে প্রায় এক কোটি টাকা দিয়েছেন। একই সময়ে অপর একজন ভিকটিম জান্নাত (ছদ্মনাম) প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। এরকম ৫০ জনের অধিক ভিকটিমের তথ্য আমরা পেয়েছি। ভিকটিম স্বপ্না ও জান্নাত অভিযোগ নিয়ে সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে প্রতিকারের জন্য আসলে তাদের থানায় মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ভিকটিম স্বপ্না গত ২১ নভেম্বর ডিএমপির ওয়ারী থানায় মামলা রুজু করেন।
তিনি বলেন, মামলাটি কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমে (সিটিটিসি) হস্তান্তর করা হলে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় গত ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় খুলনা জেলার ফুলতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেনজিরকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার হেফাজত থেকে ২টি মোবাইল ফোন ও ৪টি সিম জব্দ করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, দৃশ্যমান কোন আয়ের উৎস না থাকা স্বত্বেও প্রতারক বেনজির গত ৫ বছরে আনুমানিক ৫ বিঘা জমির উপর বাগান বাড়ি (২ টি ডুপ্লেক্স ভবন), ৩ বিঘা জমির উপর বিলাসবহুল ভবন, নড়াইলে বিভিন্ন জায়গায় ২০ বিঘা মাছের খামার ও দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিতব্য বহুতল ভবনসহ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত বেনজিরের বিরুদ্ধে নড়াইল সদর থানায় মামলা রয়েছে এবং ওয়ারী থানায় রুজুকৃত মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে মর্মে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।