যশোরের সর আসনেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী
যশোর: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের ছয় প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচনে লড়বেন আওয়ামী লীগেরই নৌকাবঞ্চিত প্রার্থীরা। আগামী নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ করতে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার ঘোষণা আসার পর দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলার একাধিক নেতা।
জেলার ঝিকরগছা ও চৌগাছা উপজেলা নিয়ে যশোর-২ সংসদীয় আসন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন ১৯ নেতাকর্মী। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন চিকিৎসক তৌহিদুজ্জামান তুহিন। বাকি ১৮ জন এখন কী করবেন, সেই আলোচনা উপজেলার রাজনীতির মাঠে। দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে নিজ সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। স্বতন্ত্র নির্বাচন করার জন্য রিটানিং অফিসারের কাছ থেকে মনোনয়ন কিনেছেন চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম হাবিবও।
শুধু এই আসনে নয়, যশোরের ৬টি আসনেই চিত্র একই। নেতাকর্মীরা বলেছেন, দলীয় সভানেত্রীর প্রার্থী উন্মুক্ত করার ঘোষণার সুযোগে প্রতিটি আসনেই মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে, সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় নিয়ে দলের মধ্যে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন ৬৯ নেতাকর্মী। এর মধ্যে ছয়টি আসনে ৬ নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন দলের সভানেত্রী। যশোর-২ ও যশোর-৪ এই দুটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হলেও বাকি ৪টি আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যরাই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
নতুন মুখ হিসেবে যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের জামাতা বিশিষ্ট চিকিৎসক তৌহিদুজ্জামান তুহিন ও যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল। এছাড়া যশোর-১ (শার্শা) বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-৩ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর-৫ (মণিরামপুর) স্বপন ভট্টচার্য্য এবং যশোর-৬ (কেশবপুর) শাহিন চাকলাদার মনোনয়ন পেয়েছেন।
দলীয় প্রতীকের বিপক্ষে প্রার্থী হতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার এক ধরনের অনুপ্রেরণার জায়গা হিসেবে অনেকেই নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। এমনকি জেলা রিটানিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ইতোমধ্যে ২৪ জন স্বতন্ত্র নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া অনেকেই প্রার্থী হওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
যশোর-১ (শার্শা) এই আসনে টানা তিনবারের সংসদ আফিলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন একসময়ের রাজনীতিক সহচর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি নিজের প্রার্থীতার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে জেলা রির্টানিং কার্যালয় থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বেনাপোল পৌরসভার মেয়র ছিলাম একযুগ। এবারও প্রত্যাশা করেছিলাম, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। কিন্তু নেত্রীর বিবেচনায় আমি মনোনয়ন পাইনি। আমার সমর্থকেরা চাপ সৃষ্টি করছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। ইনশাল্লাহ বিজয়ী হবো। এছাড়া একই আসন থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসানও।
যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনে এবার প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন চিকিৎসক তৌহিদুজ্জামান তুহিন। তিনি আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদের জামাতা। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনির। তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এ বিষয়ে স্থানীয় সবার মতামত জানতে চেয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া একই আসন থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগনেতা আসাদুজ্জামান ও চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হাবিব। এছাড়া স্বতন্ত্র নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী রফিকুল ইসলামও।
যশোর-৩ (সদর) এই আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন। তিনি বলেন, ‘যশোর সদর আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছি। যে কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’ এছাড়া স্বতন্ত্র নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ ও কাজী আনিচুজ্জামান।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন বর্তমান সাংসদ রনজিত রায়। মনোনয়ন পেয়েছেন এনামুল হক বাবুল। এই আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা কৃষক লীগের সহ সভাপতি ইয়াকুব আলী, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু ও সাবেক সংসদ টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ন সুলতান।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের বিপক্ষে নির্বাচন করার জন্য জেলা পরিষদের সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল আজিজ প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচন করতে খন্দকার আজিজ জেলা পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলাম, হোসাইন মোহাম্মদ ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন।
এ সকল বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবারের নির্বাচনকে ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক করার ঘোষণা দিয়েছেন। দলের যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন চাইলে তারা নির্বাচন করতে পারেন। দলীয় বিধিনিষেধ না থাকায় আপাতত কাউকে কিছু বলার সুযোগ নেই।