আপডেট : ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ ১২:৫১
কঙ্কালের সূত্র ধরে লোমহর্ষক হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ২
নিজস্ব প্রতিবেদক
পরকিয়া সম্পর্কের জেরে খুন হওয়া চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস রুমান শিকদার (৩৯) হত্যা কান্ডের রহস্য উন্মোচন সহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামী ১) আখি আক্তার (২৪) এবং ২) মোঃ আলাল মোল্লা (৩৫)কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই ঢাকা জেলা। গত ২২ নভেম্বর ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার বাঘাশুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। ভিকটিম রুমান শিকদার ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার বাঘাশুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের জনৈক আবু সিকদার এর ছেলে।
আজ ২৯ অক্টোবর সকাল ১১.৩০ ঘটিকায় পিব্কিআই হেডকোয়ার্টার্সে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোঃ কুদরত—ই—খুদা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আবু ইউসুফ, পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স, পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ রাশিদুল ইসলাম এবং এসআই (নিঃ) মোঃ আনোয়ার হোসেন।
গত ২১ মে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা এলাকায় সিংহ নদীতে ভেকু দিয়ে সরকারী নদী খননের সময় বাঘাশুর এলাকার পশিচমপাড়া ডাইঘাট মিন্টু আহম্মেদ এর বাড়ীর সামনের নদীতে কাদা মাটির সাথে একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কঙ্কাল উঠে আসে। ভেকু চালক এলাকার লোকজনকে জানালে লোকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে ৯৯৯ নম্বরে কল করলে দক্ষিন কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। কঙ্কালের সাথে একটি অস্পষ্ট নেভীব্লু রংয়ের শার্টের অংশ বিশেষ যুক্ত ছিল। সংবাদ পেয়ে এ মামলার ডিসিস্ট রুমান শিকদারের মা—বাবা, স্ত্রী, সন্তানরাও সেখানে আসেন এবং উক্ত কঙ্কালটি দেখেন। উক্ত কঙ্কালের পাশে পড়ে থাকা নেভি ব্লু রংয়ের শার্টের অংশবিশেষ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারনা করেন উক্ত কঙ্কালটি রুমান সিকদারের হওয়ার সম্ভাবনা আছে। পরবর্তী সময়ে এসআই (নিঃ) মাইদুল ইসলাম কঙ্কালের সুরতহাল প্রস্তুত করেন এবং ডিএনএ প্রোফাইলিং এর জন্য কঙ্কালটি বিভাগীয় প্রধান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল, ঢাকায় প্রেরন করেন। এ ঘটনায় এসআই মাইদুল ইসলাম নিজেই বাদী হয়ে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানার মামলা নং—৯৮, তারিখ—২২/০৫/২০২৩ ইং, ধারা—৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন। থানা পুলিশ ৫ মাস তদন্ত করে পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর আদেশে গত ২২/০৮/২০২৩ ইং তারিখ পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধানে এবং পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব মোঃ কুদরত—ই—খুদা এর সার্বিক সহযোগিতায় তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক(নিঃ) মোঃ রাশিদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক(নিঃ) মোঃ শরীফুল ইসলাম, এসআই মোঃ সালেহ ইমরান, এসআই আনোয়ার হোসেন, এসআই মানিক চন্দ্র সাহা সহ পিবিআই ঢাকার একটি চৌকষ টীম হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামেন।
তদন্তকালে জানা যায়, অত্র মামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামী আখি আক্তার এর স্বামী ওমর ফারুক কর্মসূত্রে বিদেশ থাকাবস্থায় তিনি তার প্রতিবেশী ডিসিস্ট রুমান শিকদারের সাথে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পরেন। আখি আক্তারের স্বামী বিদেশ থাকাবস্থায় স্ত্রীর পরকিয়া প্রেমের বিষয়টি জানতে পেরে দেশে চলে আসেন এবং আখি আক্তারের সাথে তার স্বামী ওমর ফারুক ঘর—সংসার করবে না বলে আখি আক্তারকে বাড়ী হতে বের করে দেন। পরবর্তীতে আখি আক্তারের আত্মীয়—স্বজন ও তার স্বামী ওমর ফারুকের আত্মীয়—স্বজনের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মীমাংসা করে পূণরায় আখি আক্তার ও তার স্বামী ওমর ফারুক যথারীতি দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই আখি আক্তার আবারও মামলার ডিসিস্ট রুমান শিকদারের সাথে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পরেন। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ডিসিস্ট রুমান শিকদারের হাত ধরে আখি আক্তার পালিয়ে অজ্ঞাত স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে ৬/৭ দিন বসবাস করেন। অনেক খেঁাজাখুজির পর আখি আক্তারের স্বামী ওমর ফারুক তার স্ত্রী আখি আক্তার এবং তার প্রেমিক ডিসিস্ট রুমান শিকদারের সন্ধান পেয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও আত্মীয়—স্বজনদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে তার প্রেমিক ডিসিস্ট রুমান শিকদারের নিকট থেকে আখি আক্তারকে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টাকালে স্থানীয় উপস্থিত লোকজন ডিসিস্ট রুমান শিকদারকে তার প্রেমিকা আসামী আখি আক্তারকে বিবাহ করার জন্য চাপ দিলে ডিসিস্ট রুমান শিকদার তার প্রেমিকা আখি আক্তারকে বিবাহ করতে অস্বীকার করেন। যার ফলে আখি আক্তার তার সমস্ত অন্যায় অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য স্বামী ফারুকের নিকট ক্ষমা চান। তার সংসারে ফিরে যাবেন মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অতঃপর আসামী আখি আক্তার ও তার স্বামী ওমর ফারুক দুইজন মিলে ডিসিস্ট রুমান শিকদারকে তাদের সম্পর্ক এবং একসাথে ৬/৭ দিন বাসা ভাড়া করে থাকার বিষয়টি গোপণ রাখতে অনুরোধ করেন কিন্তু ডিসিস্ট রুমান শিকদার তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে উক্ত বিষয়টি এলাকায় এসে অনেক লোকজনের নিকট প্রকাশ করে দেন। ফলে আসামী আখি আক্তার তার প্রেমিক ডিসিস্ট রুমান শিকদারের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন। তিনি ডিসিস্ট রুমান শিকদারকে দুনিয়া হতে চিরতরে বিদায় করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ডিসিস্ট রুমান শিকদারকে গত ২২/০৩/২০২৩ ইং তারিখ দিবাগত রাত অনুমান ১২ ঘটিকা থেকে রাত ০১ ঘটিকার মধ্যে মোবাইল ফেনের মাধ্যমে আসামী আখি আক্তার তার বসতবাড়ীতে ডেকে এনে কথা বলার একপর্যায়ে পিছন থেকে লোহার রড দিয়ে ডিসিস্টের মাথায় উপর্যুপুরি আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করেন। আসামী আখি আক্তার ও তার স্বামী ওমর ফারুক লাশ বস্তাবন্দি করে গুম করার উদ্দেশ্যে তাদের প্রতিবেশী পিবিআই কতৃর্ক গ্রেতারকৃত আসামী মোঃ আলাল মোল্লা (৩৫), পিতা— মৃত বিদ্দু মোল্লা, মাতা—মরিয়ম বেগম, সাং— বাঘাশুর, থানা—দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, জেলা—ঢাকাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডেকে আনেন। তার সহযোগিতায় উক্ত আখি আক্তার ও তার স্বামী ওমর ফারুক তাদের বসতবাড়ী সংলগ্ন সিংহ নদীতে বস্তাবন্দি ডিসিস্ট রুমান শিকদার এর লাশটি ফেলে দেন।
কঙ্কাল উদ্ধারের পর ডিসিস্ট রুমান শিকদারের স্ত্রী সেলিনা আক্তারের আবেদনক্রমে থানা পুলিশ ডিসিস্টের মেয়ে নুছরাত (১২) ও ছেলে সাইফ (৬) দ্বয়ের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ পূর্বক তুলনামূলক পরীক্ষার জন্য ডিএনএ এনালিস্ট, সিআইড বরাবর প্রেরণ করলে সিআইডি উক্ত ডিসিস্ট রুমান শিকদার তাদের জৈবিক পিতা মর্মে মতামত প্রদান করেন।
মামলার দায়িত্ব গ্রহনের পর তথ্য প্রযুক্তি, সোর্স সহ পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক(নিঃ) মোঃ রাশিদুল ইসলাম মামলাটি তদন্তকালে মামলার ঘটনায় জড়িত আসামী ১) আখি আক্তার ও ২) আলাল মোল্লা দ্বয়কে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের অবস্থান সনাক্তপূর্বক গ্রেফতার করেন। আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ডিসিস্ট রুমান শিকদারকে তারা হত্যা করেছে মর্মে নিজেদের দোষ স্বীকার পূর্বক স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।