Main Logo
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৬:৩৩

ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

রাজধানীর শাহ অলী থানার সাব-ইন্সপেক্টর তুহিন কাজী ও মশিউর রহমান তাপসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরদ্ধে অভিযোগ তারা ছিনতাই করতেন।  তুহিন-তাপস ছিনতাই করতেন ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে শেরে বাংলা থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। মো. শাহাদাৎ সরদার নামে এক ভুক্তভোগীর মামলায় এসআই তুহিন ও তাপস গ্রেপ্তার হন।

শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাদ আলী এসব গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুজন পুলিশ সদস্য যারা আসামি, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আর কিছুই বলতে পারব না। ডিসি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সব বলতে পারবেন। এ বিষয়ে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী মো. শাহাদাৎ সরদার উল্লেখ করেন- গত শনিবার (৯ ডিসেম্বর) তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক ছোটভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। ছোটভাইকে না পেয়ে একটি রিকশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান্থপথ রওনা করেন। আনুমানিক বিকেল সোয়া তিনটার দিকে শেরেবাংলা নগর থানার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মাণাধীন ভবনের কাছে পৌঁছলে একটি নীল রংয়ের প্রাইভেটকার তাকে বহনকারী রিকশাটির গতি রোধ করে।

ওই গাড়ি থেকে তিনজন লোক নেমে ডিবি পরিচয় দিয়ে তাকে সেটিতে তুলে নেন। প্রাইভেটকারে তুলে তাকে হাতকড়া পরিয়ে কালো কাপড় দিয়ে চোখ-মুখ বেধে ফেলে।

শাহদাৎ বলেন, তারা আমার প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগ, ভিভো ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। ফোনটিতে থাকা দুটি সিম খুলে আমাকে দিয়ে দেয়। আমার পকেটে নগদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিল, সেগুলোও নিয়ে নেন ওই তিন ব্যক্তি। এরপর তারা আমাকে একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আমার মানিব্যাগ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড নেয়; পরে সেটির পিন দাবি করে। আমি পিন কোড দিকে অস্বীকার করলে তারা আমাকে এলাপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। আমি আমার জীবন রক্ষার্থে তাদের এটিএম কার্ডের পিন কোড বলে দিই।

তিনি আরও বলেন, আসামিরা এটিএম বুথে গিয়ে কার্ডে থাকা টাকার পরিমাণ জেনে নেয়। পরে আমার ফোনে তারা নেক্সাস পে অ্যাপ ইন্সটল করে এর মাধ্যমে অ্যাকাউন্টের সব টাকা ট্রান্সফার করে নেয়। বিবাদীরা সিটি ব্যাংকের (১৫০২৪৯৯৫৪৩০০১) একটি অ্যাকাউন্টে পর্যায়ক্রমে ৩ লাখ ১০; ৩ লাখ ১০; ১ লাখ ৩৩ হাজার ১০ টাকা করে মোট ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩০ টাকা স্থানান্তর করে নেয়। তারা নগদ ও ব্যাংক মিলিয়ে মোট ৯ লাখ ১৯ হাজার ২৯ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে।

শাহদাৎ জানান, আসামিরা একটি সাদা কাগজে তার কাছ থেকে সই রাখেন। তারপর আবার তাকে হাতকড়া পরিয়ে, চোখ-মুখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে গাড়িতে তুলে নেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে মিরপুর-১ নম্বরের পাশের কোনো এলাকায় নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে তিনি তার বাড়ি ফিরে যান।

শাহদাৎ পুলিশ সদস্যদের দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন- এটি কীভাবে বুঝতে পারলেন সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু তার বা পুলিশের কাছ থেকে জানা যায়নি। পুলিশই বা কীভাবে মামলার পর তুহিন ও তাপসকেই সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করলো এ ব্যাপারেও কিছু পরিষ্কার নয়। শেরে বাংলা নগর থানার ওসি আহাদ আলীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। ’

সমস্ত বিষয়ে জানতে ওসি আহাদের কথা মতো তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো সাড়া দেননি। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) অসংখ্যবার তাকে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে কল করা হয়, তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি সেটির পাল্টা জবাব দেননি।

যদিও মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, নির্দিষ্ট মামলায় শাহ আলী থানার এসআই তুহিন ও তাপসকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জড়িত থাকার বিষয় প্রমাণ পাওয়া তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত আমাদের প্রায় ২ লাখ দশ হাজার জনের পুলিশ বাহিনী। ২-৪ জন দুষ্টু লোকজন যে নেই কখনো অস্বীকার করি না। আমাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার মানসিকতার লোক থাকতে পারে। তারা যখন অপরাধ করে সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা ডিটেক্ট করতে পারি। মানুষ যখন অভিযোগ করে, সেটা যখন প্রমাণিত হয় তখন আমরা আমাদের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হই না। আমাদের সৌন্দর্য হচ্ছে, আমাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিচলিত হয় না।

তিনি আরও বলেন, বাহিনীর সদস্য হওয়ার পরেও যদি কেউ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে, অথবা ফৌজদারি কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত হয়- তখন সে পুলিশ না সাধারণ মানুষ এটি বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নাই। আমরা তখন তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করি। যদি আমাদের বাহিনী সদস্যও হয় অবশ্যই সে একজন অপরাধী। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও ডিপার্টমেন্টাল সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফৌজদারি ব্যবস্থায় মামলা হবে, আসামি গ্রেপ্তার হবে ও বিচারের জন্য সোপর্দ হবে। সেই ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি এবং সেই ব্যবস্থা চলমান থাকবে।

সূত্র : বাংলা নিউজ

উপরে