Main Logo
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৯:৫১

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সুশৃঙ্খল ও স্মার্ট সৈনিক হিসেবে কাজ করতে হবে: বিজিবি মহাপরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সুশৃঙ্খল ও স্মার্ট সৈনিক হিসেবে কাজ করতে হবে: বিজিবি মহাপরিচালক

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিজিবি’র প্রতিটি সদস্যকে সুশৃঙ্খল ও স্মার্ট সৈনিক হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। তিনি আজ সকালে 'বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২৩' উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ দরবারে সকল পর্যায়ের বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে একথা বলেন।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আজ বাহিনীর সকল সদস্যের জন্য একটি বিশেষ দিন। গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যমন্ডিত এই বাহিনী আজ ২২৯ বছরে পদার্পণ করল। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই শুভদিনে বিজিবি মহাপরিচালক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫’র ১৫ই আগস্ট শাহাদাত বরণকারী তাঁর পরিবারবর্গ, মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর শহীদ বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী এ বাহিনীর ০২ জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীরযোদ্ধা এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাহিনীর উন্নয়ন-অগ্রগতি ও দেশমাতৃকার সীমান্তরক্ষা করতে গিয়ে বাহিনীর যে সকল সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদেরকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। 

বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, প্রতিষ্ঠালাভের পর থেকে এ বাহিনী ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষা এবং সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান রোধ, নারী-শিশু ও মাদক পাচার রোধসহ যেকোনো আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। স্বাধীনতার পর দেশগঠন এবং দেশ মাতৃকার সেবায় এ বাহিনীর অবদান অনস্বীর্কার্য। দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ যেকোনো দুর্যোগময় মুহুর্তে জনগণের সেবায় তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং সাধারণ মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের স্থানীয় ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশ্বস্ততা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে বিজিবি আজ দেশবাসীর আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিজিবি মহাপরিচালক আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহ পৃষ্ঠপোষকতা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় বিজিবি আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল, পেশাদার ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অত্যাধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ২০১০ সালে বাহিনী পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় কমান্ডস্তর বিকেন্দ্রীকরণ করে নতুন নতুন রিজিয়ন, সেক্টর, ব্যাটালিয়ন ও বিওপি স্থাপন ও প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। উন্নয়নের ক্রমধারায় ৭৩টি আধুনিক কম্পোজিট বিওপি নির্মাণ এবং হেলিকপ্টার, এপিসি, এটিভি, এয়ার বোট, এটিজিডব্লিউ (CORSAR) এবং Anti Tank Alcotan-100M2 সহ অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজনের মাধ্যমে বিজিবি একটি বিশ্বমানের আধুনিক ত্রিমাত্রিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম বিওপিসমূহকে যোগাযোগের আওতায় আনা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে বিজিবি’র রিক্রুটিং ব্যবস্থাকে ই-রিক্রুটিং এ রূপান্তরিত করা হয়েছে। বাহিনীর ক্রমবর্ধমান প্রশিক্ষণ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য চুয়াডাঙ্গায় অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত আরও একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও বিজিবি সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নে সৈনিকদের বেতন স্কেল সমন্বয়, সীমান্ত ভাতা বৃদ্ধি, রেশন ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধিসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে বিজিবি’র এই উন্নয়নে সার্বক্ষণিক সানুগ্রহ উদ্যোগের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান বিজিবি মহাপরিচালক। বিজিবি মহাপরিচালক বিজিবি’র প্রতিটি সদস্য সততা, আনুগত্য, কর্তব্য নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা-এই চারটি গুণের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ‘সবার আগে দেশ, এরপর বাহিনীর স্বার্থ, এরপর অধীনস্থ ও সহকর্মীদের স্বার্থ এবং সর্বশেষে নিজ স্বার্থ’-কে বিবেচনায় রেখে বিজিবিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশে গৃহিত সকল কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে বিজিবি’র ওপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে পালন করার আহ্বান জানান বিজিবি মহাপরিচালক।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বিজিবি’র প্রতিটি সদস্য সুশৃঙ্খল ও স্মার্ট সৈনিক হিসেবে অনবদ্য ভূমিকা রাখবে-আজকের দিনে এটাই বিজিবি মহাপরিচালকের প্রত্যাশা।  

এর আগে, অদ্য ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজিবি দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী ফজরের নামাজের পর পিলখানাসহ সারাদেশে বিজিবি’র সকল ইউনিটের মসজিদে বিজিবি’র উত্তরোত্তর অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সকাল ০৬৩০ ঘটিকায় মহাপরিচালকের সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিবি’র রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ০৬.৫০ ঘটিকায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পিলখানাস্থ ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিজিবি মহাপরিচালক। এরপর সকাল ১০৪৫ ঘটিকায় পিলখানাস্থ সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে বিজিবি মহাপরিচালক বিজিবি সদস্যদের বিশেষ দরবার গ্রহণ করেন। দরবার শেষে পদোন্নতি প্রাপ্ত ০৪ জনকে অনারারী সুবেদার মেজর হতে অনারারী সহকারী পরিচালক এবং ০২ জনকে অনারারী সহকারী পরিচালক হতে অনারারী উপপরিচালক পদে র‍্যাংক ব্যাজ পরিধান করানো হয়। পরে পিলখানায় আয়োজিত প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক সকল পর্যায়ের বিজিবি সদস্যদের সাথে প্রীতিভোজে অংশগ্রহণ করেন। এসময় বিজিবি’র সকল কর্মকর্তা, জুনিয়র কর্মকর্তা ও অন্যান্য পদবীর সৈনিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

বিজিবি দিবস-২০২৩ উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়াও দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে দেশের প্রথম সারির স্বনামধন্য জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। 

উল্লেখ্য, আজ সকালে বিজিবি দিবসের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বিজিবি মহাপরিচালক গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিজিবি মহাপরিচালকসহ বাহিনীর সকল সদস্যকে বিজিবি দিবস উপলক্ষ্যে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান, মাদক ও মানব পাচার রোধসহ দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় বিজিবি’র ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে বিজিবি’র প্রতিটি সদস্যকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করেন। 

দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবি’র বিভিন্ন স্থাপনায় বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়। এছাড়া দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসেবে যশোরের বেনাপোল, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর সংলগ্ন আইসিপিতে বিজিবি-বিএসএফ জমকালো ‘জয়েন্ট রিট্রিট সিরিমনি’ প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিজিবি ও বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিপুল সংখ্যক দর্শনাথী উপস্থিত ছিলেন।

 

 

উপরে