Main Logo
আপডেট : ২৩ মার্চ, ২০২৪ ১৪:০৪

ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কিশেরাগ্যাং-এর প্রধানসহ পাচ জন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কিশেরাগ্যাং-এর প্রধানসহ পাচ জন গ্রেপ্তার

বহুল আলোচিত রাজধানীর পল্লবী এলাকার প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ফয়সাল হত্যাকান্ডের ঘটনায় কিশোর গ্যাং লিডার পলাতক মূল আসামি ও হত্যাকারী গালকাটা রাব্বি ও টান আকাশসহ জড়িত ৫ জনকে নরসিংদী ও গাজীপুর জেলা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্লবী এলাকায় কতিপয় দুর্বৃত্ত প্রকাশ্যে কুপিয়ে এক যুবককে হত্যা করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নং-৩১,।  নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র‌্যাব উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-৪ ও র‌্যাব-১১ এর আভিযানিক দল গাজীপুর এবং নরসিংদী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডের মূল হোতা  মোঃ আকাশ টান ওরফে আকাশ,  ফজলে রাব্বি ওরফে হিটার রাব্বি ওরফে গালকাটা রাব্বি (২০),  ইমরান (২৫) মোঃ রাসেল কাজী (২৪)  ও
নয়ন (২৫), কে গ্রেফতার  করে। গ্রেফতারকৃত রাব্বি ও আকাশের দেখানো ও বের করে দেয়া মতে ঘটনাস্থল সংলগ্ন একটি বাগান হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও অপর একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মূলত গ্রেফতারকৃতরা এবং ভিকটিম রাজধানীর মিরপুর এলাকার কিশোর গ্যাং “পেপার সানী গ্রæপ” এর সদস্য। গ্রেফতারকৃত গালকাটা রাব্বি পেপার সানী গ্রæপের হিটম্যান হিসেবে কাজ করতো বলে জানা যায়। বিগত ৪-৫ মাস পূর্বে মাদক কেনা-বেচা সংক্রান্তে ভাগাভাগি, সিনিয়র-জুনিয়র, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও অন্তঃকোন্দলের কারণে গ্রেফতারকৃতরা পেপার সানী গ্রæপ থেকে বের হয়ে গালকাটা রাব্বির নেতৃত্বে ‘গালকাটা রাব্বি গ্রæপ’ তৈরি করে। এর পর থেকেই দুই গ্রæপের মধ্যে প্রায়ই মাদক কেনা-বেচাসহ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি হতো বলে জানা যায়। প্রায় ১ মাস পূর্বে পেপার সানী গ্রæপের সদস্যরা গালকাটা রাব্বিকে মুরাপাড়া ক্যাম্পে নিয়ে তার পায়ের রগ কেটে দেওয়ার চেষ্টা করলে ক্যাম্পের মহিলারা তাকে উদ্ধার করে বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়। গত ১৫ মার্চ ২০২৪ তারিখ গালকাটা রাব্বি গ্রæপের সাথে মাদক কেনা-বেচা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পেপার সানী গ্রæপের মারামারির ঘটনা ঘটে। গালকাটা রাব্বি গ্রæপ ক্ষিপ্ত হয়ে পেপার সানী গ্রæপের সদস্যদের উচিত শিক্ষার দেয়ার পরিকল্পনা করে। এছাড়াও ঘটনার দিন পেপার সানী গ্রæপের সদস্যরা গালকাটা রাব্বি গ্রæপের একজন সদস্যের বোনকে ইভটিজিং করলে বিষয়টি গালকাটা রাব্বি গ্রæপের সদস্যকে জানায়। এ বিষয়টি গালকাটা রাব্বি জানতে পারলে আরোও ক্ষিপ্ত হয়ে পেপার সানী গ্রæপের সদস্যদের উচিত শিক্ষার দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে এসময় গ্রেফতারকৃতরা জানতে পারে তারা একটি ইফতার পার্টিতে গিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গালকাটা রাব্বি গ্রæপের অপর একজন সদস্য রিক্সাযোগে ঘটনার ১৫/২০ মিনিট পূর্বে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দেশীয় ধারালো অস্ত্র গ্যাং লিটার রাব্বি ও আকাশসহ অন্যান্য সদস্যদের হাতে প্রদান করে। ভিকটিম ফয়সাল ও তার বন্ধু রানা স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার পার্টি শেষে রিক্সাযোগে বাসায় ফেরার পথে গ্রেফতারকৃত রাব্বির নেতৃত্বে গ্রেফতারকৃতরা ওঁৎ পেতে থাকে। ভিকটিম ফয়সাল ও তার বন্ধু রানা ঘটনাস্থলে পোঁছালে গ্রেফতারকৃতরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভিকটিম ফয়সাল ও তার বন্ধু রানাকে প্রকাশ্যে এলোপাতারি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরবর্তীতে তারা ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গ্রæপের অন্য এক সদস্যের বাসার ছাদে গিয়ে পেপার সানী গ্রæপের সদস্যকে উচিত শিক্ষা দিতে পারায় বিষয়টি পার্টি করার মাধ্যমে উদ্যাপন করে। এসয়ম স্থানীয় লোকজন ও ভিকটিমের পরিবার ঘটনাস্থলে এসে ভিকটিম ফয়সাল ও তার বন্ধু রানাকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম ফয়সালকে মৃত ঘোষনা করে এবং রানাকে গুরুতর আহত অবস্থায় একই হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে হত্যাকান্ডের ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রেফতারকৃতরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে প্রথমে নেত্রকোনায় আত্মগোপন করে সেখানে দুই দিন অবস্থান করে। পরবর্তীতে মুন্সিগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় আত্মগোপনে থাকে এবং আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত ফজলে রাব্বি @হিটার রাব্বি @গালকাটা রাব্বি গত ০৪/০৫ মাস পূর্বে ‘গালকাটা রাব্বি’ নামক একটি কিশোর গ্যাং তৈরি করে মিরপুর এলাকায় মারামারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো বলে জানা যায়। এছাড়াও সে ঘটনার সময় সে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভিকটিম ফয়সাল ও তার বন্ধুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। মিরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রধান হিটম্যান হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, মারামারি ও মাদক সংক্রান্তে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ০৪টি মামলা রয়েছে এবং ইতিপূর্বে এ সকল মামলায় একাধিক বার কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আকাশ @টান আকাশ মিরপুর পল্লবী এলাকার কিশোর গ্যাং ‘গালকাটা রাব্বি’ গ্রæপের অন্যতম একজন সদস্য। সে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করতো এবং সে এলাকায় মারামারির জন্য অস্ত্র সরবরাহসহ মারামারির নেতৃত্ব প্রদান করতো বলে জানা যায়। এছাড়াও সে এলাকায় মাদক ব্যবসা করতো বলে জানা যায়। ঘটনার সময় সে ভিকটিম ফয়সাল ও তার বর্ণিত বন্ধুকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তার বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীর পল্লবী ও মিরপুর মডেল থানায় মাদক ও মারামারিসহ ০৫টি মামলা রয়েছে এবং ইতিপূর্বে এ সকল মামলায় একাধিকবার কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত রাসেল, ইমরান ও নয়ন কিশোর গ্যাং ‘গালকাটা রাব্বি’ গ্রæপের সদস্য। তারা গ্রেফতারকৃত রাব্বির ও আকাশ এর নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক সেবন ও কেনা-বেচাসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মারামারি ও মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

উপরে