Main Logo
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১৪:৫৯

বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার

গত বছর ২৮ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ডেমরায় অছিম পরিবহনে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় জড়িত ৩ জন আসামী গ্রেফতার ও উক্ত ঘটনায় আসামীদের ব্যবহৃত গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।  ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি’র স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপ বিভাগের এন্টি ইললিগ্যাল আর্মস এন্ড ক্যানাইন টিম কর্তৃক আসামী গ্রেফতার ও উক্ত ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতর হলেন মোঃনুরুল ইসলাম মনির @মনির মুন্সি (৩৭) ও  সাবেক সহ সভাপতি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল, মোঃ সাহেদ আহমেদ (৩৮), সদস্য সচিব, যুবদল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর, সাবেক সভাপতি, ছাত্রদল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর  বিএনপি কর্মী এবং মনির মুন্সির ব্যাক্তিগত ড্রাইভার মাহাবুবুর রহমান সোহাগ (৩৩) ।

পুলিশ জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বানচালের উদ্দেশ্যে গত ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ সালে বিএনপি রাজধানীর পল্টন এলাকায় নারকীয় তাণ্ডব পরিচালনা করে। প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে হামলা, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার মত জঘন্য কাজ সহ অসংখ্য গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় বিএনপির নেতা কর্মীরা । তারই ধারাবাহিকতায় ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর ভোরবেলায় ডেমরা থানাধীন দেইল্লা বাস স্ট্যান্ডে রাখা অছিম পরিবহনের একটি গাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে। এতে ঐ বাসে ঘুমিয়ে থাকা হেল্পার মোঃ নাইম (২২) ঘটনাস্থলে আগুনে পুড়ে মারা যায় এবং অপর হেল্পার মোঃ রবিউল(২৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয়। এ সংক্রান্তে ২৯ অক্টোবর ডেমরা থানায় একটি মামলা রুজু হয় যার নাম্বার ৩৮। পরবর্তীতে ১১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে সি টি টি সির স্পেশাল একশন গ্রুপের এন্টি ইলিগাল আর্মস এন্ড ক্যানাইন টিমে মামলা টি হস্তান্তর করা হলে সিটিটিসি এই মামলাটির তদন্ত শুরু করে।
তদন্তের প্রথমেই দুইজন ভিকটিমের খোঁজ নিয়ে জানা যায় মৃত ভিকটিম মোঃ নাইম (২২) এর বাড়ি বরিশালের কোতয়ালি থানা এলাকায়। নিহত নাইমের বাবার নাম আলম চৌকিদার এবং মায়ের নাম পারভিন বেগম। তারা ডেমরা এলাকাতেই থাকতেন। অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতা ফিরানোর জন্যই অল্প বয়সে কাজে নেমে পরেন। অবশেষে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই বাসের ভিতর ঘুমন্ত অবস্থায় কিছু বুঝে উঠার আগেই নিজের জীবন বিসর্জন দেন। অপর ভিক্টিমের নাম মোঃ রবিউল (২৫)। একই বাসে নাইমের সাথে ঘুমিয়ে ছিল রবিউল। ঘুমের মাঝে আচমকা আগুনের তাপে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। কিন্তু ততক্ষণে রবিউলের শরীরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কোনমতে অগ্নিধগ্ধ অবস্থায় গাড়ি থেকে সে বের হয়ে আসে।পরবর্তী তে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় সে হসপিটালে ভর্তি হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সে হসপিটাল থেকে মুক্ত হলেও এখনো শরীরে পোড়া দাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 
তদন্তভার গ্রহণের পড় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনাস্থলের চারপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। উক্ত ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি সনাক্ত করতে সক্ষম হয় যা ঐদিন অগ্নিসংযোগে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই গাড়ীর সূত্র ধরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মূল অগ্নি সংযোগ কারী ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার এবং ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়ীটি জব্দ করা হয়। 
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২৮ শে অক্টোবরের ধারাবাহিকতা এবং তাদের এই নাশকতা অব্যাহত রাখার জন্য মনির মুন্সি তার নেতাদের কাছ থেকে নির্দেশনা পায়। নির্দেশনার মূল বিষয়বস্ত ছিল নাশকতার মাত্রা আরও বাড়ানো এবং এমন কোন ঘটনা ঘটানো যাতে করে জনমনে ব্যাপক আতংকের সৃষ্টি হয়। তারই অংশ হিসেবে সে বেশ কয়েকজনকে অগ্নিসংযোগের জন্য নিয়োগ দেয় এবং সে নিজে বড় একটি ঘটনা ঘটানোর জন্য তার অপর সহযোগী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিব এবং তার বন্ধু সাহেদ আহমেদকে ডেকে নেয়। তারা দুজনে মিলে একটি পরিকল্পনা করে যেখানে তারা স্থির করে এমন একটি ঘটনা ঘটাবে যাতে জনমনে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে ডেমরা এলাকার দেইল্লা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় রাত ২ টার পর বেশ কয়েকবার গাড়ী দিয়ে ঘুরে ঘুরে রেকি করে এবং দেখতে থাকে কোন জায়গাটা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতামুক্ত। অবশেষে তারা কাঙ্ক্ষিত টার্গেট ফিক্স করে “বড়ভাঙ্গা” মার্কেটে চলে যায়। সেখান থেকে তারা ২ লিটারের পানির বোতলে পেট্রোল সংগ্রহ করে আনুমানিক ০৩:০০ ঘটিকায় ঘটনাস্থলে পৌছায়। ঘটনাস্থলে নিরাপদ দূরত্বে গাড়ী থামিয়ে ড্রাইভার মাহাবুবুর রহমান সোহাগ গাড়িতে অবস্থান করে এবং মনির মুন্সি ও সাহেদ পেট্রোলের বোতল নিয়ে রাস্তার পাশে পার্ক করা অছিম পরিবহনের গাড়ীর কাছে যায়। সেখানে একটি গাড়ীর ড্রাইভার সিটের পাশে থাকা খোলা গ্লাসের অংশ দিয়ে ড্রাইভার সিটে মনির মুন্সি পেট্রোল ঢেলে দেয় এবং একপর্যায়ে বোতল টি ও সেখানে ফেলে দেয়। তারপর সে দিয়াশলাই এর কাঠিতে আগুন ধরিয়ে সেই কাঠি ঢেলে দেয়া পেট্রোলের উপর ছুড়ে মারে। নিমিষেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে তারা দুইজন দৌড়ে পুনরায় গাড়িতে এসে উঠে। এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। তারা এক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য রং সাইডে ডেমরা এক্সপ্রেস ওয়েতে উঠে সুফিয়া কামাল ব্রিজ দিয়ে ভুলতায় থাকা মনির মুন্সিদের মালিকানাধীন “মুন্সি পেট্রোল পাম্প” এ রাত্রি যাপন করে। সকাল ১০:০০ ঘটিকার দিকে তারা পেট্রোল পাম্প হতে বাসায় চলে যায়।

উপরে