Main Logo
আপডেট : ২৫ মে, ২০২৪ ১২:১১

'সাবেক আইজিপি বা সেনাপ্রধান দোষী হলে সরকার বাঁচাতে যাবে না'

সরকারী কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্ক শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারী কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্ক শুরু

আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাবেক আইজিপি  বা সেনা প্রধান দোষী হলে সরকার বাঁচাতে যাবে না। এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের পর দুর্ণীতি গ্রস্থ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ধারনা করা হচ্ছিল গণমাধ্যমে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্ণীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সরকার তার পক্ষ নেবে। বিষয়টি কয়েকদিন আলোচনায় থাকার পর ঝিমিয়ে যাবে। কিন্তু হলো তার উল্টো । দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তে নেমেছে। আদালত বেনজীর আহমেদের সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে এক সময়ের প্রতাপশালী আইজিপি এখন অনেকটাই অসহায়। এসব চলার সময়ই সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় তার বিরুদ্ধেও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের সময় আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান ছিলেন।

এই যখন অবস্থা তখন বিশেষজ্ঞরা বলেছন, তাঁদের আমলে দেশে গুম খুনের ঘটনা ঘটেছে। সে বিষয়গুলোও সামনে আনতে হবে। এগুলোর বিচার না হলে দেশে গুম খুনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। প্রশাসনের এক কর্মকর্তা সংবাদ এবং- কে জানান,  এক সময় মনে করা হচ্ছিল সরকারকে খুশী করতে যে কোন কাজ করে পার পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটা সম্ভব হবে না। তিনি জানান, ওবাইদুল কাদেরের মন্তব্যর পর কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়গুলো বুঝার চেষ্টা করছেন। 
অনেকেই বলছেন. সরকারের নির্দেশে অনেক সময় অবৈধ কাজ করতে সরকারি কর্মকর্তারা বাধ্য হন। সেই অবৈধ কাজের সুযোগ পেয়ে অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তারা আগ বাড়িয়ে বাড়তি কাজ করেন। যা জনগনের বিরুদ্ধে যায়। এসব কাজের সুযোগ পেয়ে অবৈধ অর্থের দিকেও হাত বাড়ান তারা। প্রশাসনের অনেক সৎ কর্মকর্তা এগুলো দেখেন আর আফসোস করেন। কিন্তু এবারের ঘটনায় টনক নড়েছে কর্মকর্তাদের। সরকার যে বার্তা দিয়েছে তাতে কাপন ধরে গেছে সাবেক ও বর্তমান অনেক কর্মকর্তার।  তার মধ্যে যেমন রয়েছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা তেমনি সিভিল প্রশাসেনের কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদস্থ এক কর্মকর্তা সংবাদ এবং- কে জানান, সরকার সাবেক সেনা ও পুলিশ প্রধানের বিষয়ে যে দৃষ্টিভঙ্গি দেখাচ্ছে তা অব্যাহত রাখলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হোক আর প্রশাসনের হোক কেউ-ই অপরাধ করতে সাহস করবে না। অপরাধ করার সময় একটা বিষয় মাথায় থাকবে যে, অবসরে গেলেও মুক্তি মিলবে না। ফলে বাধ্য হয়ে সৎ থাকবে কর্মকর্তারা। দেশের উন্নতি হবে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, আজিজ আহমেদ ও বেনজীর আহমেদ দু'জনই প্রভাবশালী কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের যদি রক্ষা না মেলে তা হলে তাদের নিচে যারা আছেন তাদের রক্ষা করবে কে? এ বিষয়টা ইতোমধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে নাড়া দিযেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকার কর্মী নূর খান সংবাদ এবং-কে বলেন,  সরকার এসব প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের অবৈধ কাজ নিয়ন্ত্রণ না করে সাপোর্ট করে গেছে বলেই দুর্ণীতি বিকশিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার দায় এড়াতে পারে না। 
তিনি আরো বলেন, তাদের সময়ে গুম খুন হয়েছে। সেগুলোর সুষ্ঠু বিচার হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এগুলো কমবে। আর যদি নামকাওয়াস্তে হয় তা হলে দুর্ণীতি আরো বাড়বে। গুম খুন বাড়বে। সুতারং তাদের বিচারের উপর বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ভর করছে। সাধারণ মানুষের মাঝে সন্দেহ রয়েছে সরকার তাদের দু'জনের বিরুদ্ধে কঠেরা হবে কি না। কারণ তাদের আমলে দেশে অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যেগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয় জড়িত আছে।  তাদের সময় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারকে ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা রয়েছে বলে প্রচার আছে। 

দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধে আদালতের আদেশের বিষয়ে সরকারের এই অবস্থানের কথা স্পষ্ট করলেন ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বিষয়টি দেখতে হবে, কোনো ব্যক্তি যত প্রভাবশালী হোক, অপরাধ করতে পারে। প্রশ্ন থেকে যায়, সরকার অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে সৎ সাহস দেখিয়েছে কিনা। শেখ হাসিনা সরকারের সে সৎ সাহস আছে। কেউ পারবে না।

সেতুমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ, দুদক স্বাধীন। সেখানে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা তাকে প্রটেক্ট করতে যাব না। সেখানে কোনো সাবেক আইজিপি বা কোনো সাবেক সেনাপ্রধান, সরকারের কাউকে প্রটেকশন দেওয়ার বিষয় নেই।
বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে যাদের দণ্ড হয়েছে তাদের সবাই ছাত্রলীগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার তাদের প্রটেকশন দিতে যায়নি। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে যাদের ফাঁসি হয়েছিল, তাদের সরকার প্রটেকশন দিতে যায়নি। কথা হচ্ছে ব্যক্তি অপরাধ করতে পারে, কথা হচ্ছে সরকার প্রটেকশন দিচ্ছে কিনা৷ শেখ হাসিনা সরকারের এখানে জিরো টলারেন্স। অপরাধ করলে শাস্তি তাকে পেতেই হবে।

উপরে