Main Logo
আপডেট : ৩ জুলাই, ২০২৪ ১৫:১৬

আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইউনূসের দণ্ড কার্যকর থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইউনূসের দণ্ড কার্যকর থাকবে

আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের দণ্ড (কনভিকশন) কার্যকর থাকবে, কারণ আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ড স্থগিতের কোনো বিধান নেই। এটা কেবল আপিল নিষ্পত্তি করে বাতিল, বহাল বা সংশোধন হতে পারে।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড পাওয়া নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের দণ্ড ও সাজার রায় স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আদেশ বাতিলের রায়ে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

১৮ মার্চ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।

মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ শ্রম বিধিমালা ১০৭ বিধি ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

এ মামলায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা তাদের বিরুদ্ধে সাজার রায় দেন। তাদের শ্রম আইনের ৩০৩ (ঙ) ধারায় সর্বোচ্চ ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

অপরদিকে ৩০৭ ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন আদালত।

এরপর আসামিপক্ষ আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন। আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করে পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে এক মাসের জন্য জামিন দেন। সেই সময়সীমার মধ্যেই আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্তরা। ড. ইউনূস ছাড়া অন্য তিন বিবাদী হলেন—গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে জামিন দেন। আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে নথি তলব করেন। এছাড়া গত ১ জানুয়ারি দেওয়া দণ্ডের রায়ের কার্যক্রম স্থগিত করেন।

এ স্থগিতের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করেন। এছাড়া দণ্ডিতদের বিদেশ যেতে হলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করে যেতে হবে বলে আদেশ দেন। ওই রুলের শুনানি শেষে ১৮ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট।

৫০ পৃষ্ঠার রায়ে হাইকোর্ট তার নির্দেশনায় বলেন, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের দণ্ড (কনভিকশন) কার্যকর থাকবে, কারণ আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ড স্থগিতের কোনো বিধান নেই। এটা কেবল আপিল নিষ্পত্তি করে বাতিল, বহাল বা সংশোধন করতে পারে।

‘যেহেতু শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে ড. ইউনূসসহ চারজন জামিন পেয়েছেন সেহেতু দণ্ড স্থগিত বা সাসপেন্ড আদেশের কোনো দরকার নেই। জামিন পাওয়ার পর সাজা সংক্রান্ত আদেশ ও রায় সয়ংক্রিয়ভাবে এবং অন্তর্নিহিতভাবে সাসপেন্ড হয়ে যায়। যতদিন পর্যন্ত ড. ইউনূসসহ চারজন জামিনে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত সাজা স্থগিত থাকবে। জরিমানাও আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। এছাড়া ১ জানুয়ারি ছয় মাসের দণ্ড দিয়ে শ্রম আদালতের দেওয়া আদেশ ও রায় স্থগিত করে ২৮ জানুয়ারি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের স্থগিতাদেশ বাতিল করা হলো।

এছাড়া আদালত দণ্ডের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিল যত দ্রুত সম্ভব মেরিটে নিষ্পত্তি করতে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও টাইটাস হিল্লোল রেমা। ড. ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।

উপরে