সাপ নিয়ে ভুল ধারণা বেশির ভাগ মানুষের : নাগ নাগিনী বিষধর সাপ নয়
সাপ মানেই একটা ভয়ঙ্কর বিষয় বলেই মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ। বাস্তবে চিত্র তার উল্টো। যেমন নাগ-নাগিনী সাপের নাম শুনলেই মানুষ আতৎকে উঠেন। কারন সিনেমায় দেখানো হয় নাগ নাগিনী কতটা ভংঙ্কর। বস্তবে সাপেদের মধ্যে দেখতে অনেক সুন্দর এই নাগ নাগিনী। যে সাপের কোন বিষ নেই। তারা মানুষ দেখলেই দৌড়ে পালায়। অনেকে এখন পর্যন্ত হয়তো চোখের সামনে নাগ নাগিন সাপ দেখেনইনি। নাগ নাগিন সাপের ইংরেজি নাম হলো- (Ornate Flying Snake) ও বৈজ্ঞানিক নাম (Chrysopelea ornata)। ইংরেজিতে (Flying Snake) নাম হলেও সাপটি বাস্তবে উড়তে পারে না। খাদ্যগ্রহণ, বৈশিষ্ট এবং চরিত্রগত কারণে উঁচু গাছের ডাল থেকে নিচু গাছের ডালে লাফ দিয়ে চলাফেরা করে সাপটি। এ সাপটির বিষক্রিয়া নেই। এদের বিষে কারও মৃত্যু হয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই। শুধু কাল্পনিকভাবেই সাপটিকে বিষধর এবং বিভিন্ন গল্প-কাহিনিতে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। ফলে ভয়ঙ্কর ধারণা থেকেই সাধারণ মানুষ যখনই সাপকটিকে দেখে বিষাক্ত ভেবে মেরে ফেলে। তাই এ প্রকৃতির নাগ-নাগিনী সাপ দ্রুত কমে যাচ্ছে। কেউ বলতে পারবে না এ সাপের কারণে কারও মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য সাপ নিয়েও অনেকের মাঝে রয়েছে ভুল ধারনা।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে একধরনের ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এ সাপের দংশনে ইতিমধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সাপ নিয়ে গুজবও আছে প্রচুর। এই গুজবের পেছনে সাপ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার একটা সম্পর্ক আছে-এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মো. ফজলে রাব্বী জানান,সাপ ও অন্যান্য সরীসৃপ নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত আছে। যেমন সাপ নিজে থেকে মানুষকে আক্রমণ করে, এটি একটি প্রচলিত ভুল ধারণা। অন্যান্য অনেক কুসংস্কারের মধ্যে আছে, সাপ দুধ পান করে, সাপের মাথায় মণি থাকে, সাপ প্রতিশোধ নিতে পারে, সাপের পা থাকে, সাপের গায়ে চুল থাকে, সাপ বিনের শব্দে নাচতে পারে ইত্যাদি। অথচ এ ধারণা পুরোপুরি ভুল।
রাসেলস ভাইপার নিয়ে আলোচনা ও ভুল ধারণা
রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া নিয়ে এখন আলোচনা তুঙ্গে। এ নিয়ে গুজব বেশি ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কোথাও চন্দ্রবোড়া সাপ মনে করে অন্য সাপকে মেরে ফেলা হয়েছে। এই মনোবৃত্তির পেছনে শিক্ষা ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাই মূল বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, আঘাত না করলে সাপ বা কোনো প্রাণীই মানুষকে আক্রমণ করে না। সাপ যেটা করে, তা নিতান্তই আত্মরক্ষার্থে। আসলে মানুষ ছাড়া কোনো প্রাণীই অকারণে অন্য প্রজাতিকে আঘাত করে না।
যেকোনো বন্য প্রাণী দেখলে তার ওপর নৃশংস আচরণের মূলে আছে লোকায়ত অপবিশ্বাস, অজ্ঞতা, পাঠ্যক্রমে এসব প্রাণী সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাব। অনেক বইপত্রে প্রাণিকুল সম্পর্কে নেতিবাচক বা ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়। এসব বইপত্র শিশুমনে প্রভাব ফেলে। তাই এসব সংবেদনশীল বিষয় সম্পর্কে লিখতে এসব বিষয়ের বিশেষজ্ঞ বা পণ্ডিতকে নিয়োজিত করা উচিত বলে মনে করেন অধ্যাপক কবিরুল বাশার।
সাপের সঙ্গে মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে স্থানীয় জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের (বন দপ্তর) সম্মিলিত উদ্যোগ এবং গণসচেতনতা কার্যক্রম নেওয়া দরকার-দুই গবেষণাতেই এ কথা বলা হয়েছে।