উত্তরায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে ‘মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচিতে’ শিক্ষার্থীরা, স্লোগানে উত্তাল
আন্দোলন থেকে বৃষ্টিও সরাতে পারেনি শিক্ষার্থীদের। আজ সকালে বৃষ্টির ভেতরেই রাস্তায় নেমে যায় রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে তারা ঘরে বসে থাকতে পারেনি।
আজ শুক্রবার সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো ঝিরিঝিরি, কখনো মুষলধারে। এর মধ্যেই এক এক করে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে জড়ো হতে থাকলেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই ভরে গেল প্রতিষ্ঠানটির সামনের সড়ক। ছাত্র হত্যার বিচারের দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে চারপাশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ঢাকার উত্তরায় রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন কলেজের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক ও অভিভাবক। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বিক্ষোভের কারণে বন্ধ হয়ে যায় কলেজের সামনের সড়কের যান চলাচল।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেখানে কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পরে পুলিশ তাঁদের আন্দোলন দমানোর জন্য গুলি চালিয়ে নির্বিচার হত্যা করে অসংখ্য সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে। হত্যাকাণ্ডের পর বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। পুলিশের গ্রেপ্তার আতঙ্কে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। তাঁরা যেকোনো মূল্যে এ ধরনের অন্যায় বন্ধের দাবি জানান।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘কী দোষ ছিল আমার ভাই মুগ্ধের, কী দোষ ছিল ওই শিশু মেয়েটির, যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল? কীই-বা দোষে এতগুলো নিরীহ মানুষ মরল! কেন নির্মমভাবে তাদের হত্যা করা হলো। আমরা এই প্রতিটি হত্যার বিচার চাই।’
সমাবেশে সাজ্জাদ আরও বলেন, ‘আমি এইচএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু আমি পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছি না। কারণ, পুলিশ আমার সহপাঠী ভাইকে (অন্যান্য এইচএসসি পরীক্ষার্থী) কোনো প্রকার অপরাধ ছাড়া ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমরা আমাদের ভাইকে জেলে রেখে আর কোনো পরীক্ষায় বসতে পারব না।’
বক্তব্যে রাকিব নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সরকার আমাদের জনগণের ট্যাক্সের টাকায়, আমার বাবার পরিশ্রমের টাকায় গুলি কিনেছে দেশের স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য। কিন্তু সেই গুলি দিয়েই আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ অন্যায় মেনে নেব না। আমরা প্রতিটি হত্যার বিচার চাই।’
কর্মসূচিতে অংশ নিতে সকাল থেকেই উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। তাঁরা প্রথমে সমাবেশ করে বক্তব্য দেন। পরে কলেজের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে চারপাশ। স্লোগানগুলোর মধ্যে ছিল, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই, ’ ‘সামনে আসছে ফাল্গুন, আমরা হব দ্বিগুণ’, ‘তোমার কোটা তুমি নাও, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দাও’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমাবেশে অংশ নেন কলেজের অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক। তাঁরাও অনেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিচারের দাবিতে স্লোগান ধরেন। ফারজানা সুলতানা নামের একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে কলেজে পড়ে। এখন বাসা থেকে বের হলেই আর মনে শান্তি পাই না। সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকি। আমিও এ ধরনের অন্যায়ের বিচার চাই। তাই বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মেয়ের সঙ্গে কর্মসূচিতে এসেছি।’