Main Logo
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:২১

ডিসেম্বরে নির্বাচন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বরে নির্বাচন?

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদল ও উপদেষ্টারা। ছবি : প্রেস উইং

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকার কাজ করছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া হতে পারে।

গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক হয়।


সরকারের তরফ থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সব রাজনৈতিক দল একমত হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে আপত্তি নেই।

সংসদ নির্বাচন কবে হবে—এ নিয়ে নানা আলোচনা আছে। গত কিছুদিন ধরে দেশে বিশৃঙ্খলা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় জানালেন।


সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বর-ই সংসদ নির্বাচন হতে পারে। সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। গতকালের বৈঠকে বিএনপিও দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানায়। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য নেতারা দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করতে ‘চাপ’ দেন নেতারা।


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তাঁরা অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। তিনিও বলেছেন যে তাঁরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করছেন। আমরা আশা করব, জনগণের আশা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী অতি দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করে সে অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।’

কবে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা উনারা ঠিক করবেন। সম্ভবত আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে কিছু একটা জানাবেন।



নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেহেতু তারা অন্তর্বর্তী সরকার, তাদের আমরা আবারও দ্রুত নির্বাচনের তাগাদা দিয়েছি এবং ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্ন করে সংস্কার কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক সরকারের যে পরিবর্তন হবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সেটা অনেক সহজ হয়ে যাবে, যদি একটা নির্বাচন হয়।’

গত রবিবার বিকেলে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল জানায়।

সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহম্মদকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে আসেন। দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক হয়।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও  শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার ব্যাপারে আমরা কোনো মতেই একমত নই। আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি, জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচন হবে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। এ জন্য যে সরকারের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, বিভিন্ন বাহিনী আছে, তাদের সামনেই এই ঘটনাগুলো ঘটেছে। যেটা আমরা মনে করি, সার্বিকভাবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, স্থিতিশীলতা ‍যথেষ্টভাবে বিপন্ন করেছে এবং ফ্যাসিবাদকে সুযোগ করে দিয়েছে তাদের এসব বিষয়ে কথা বলার।’

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের যেসব দোসর ছিল ফ্যাসিবাদের, তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য এবং একই সঙ্গে তাদের প্রশাসন থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা আমরা বলেছি। যারা অর্থনীতির ক্ষতি করেছে, লুট করেছে, তাদের পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য এবং অর্থ লুণ্ঠনকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি। একই সঙ্গে ১৫ বছরে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের কথাও আমরা বলেছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত জোরালোভাবে বলেছি এবং বলেছি যে, এই সরকারের অন্যতম ব্যর্থতা হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। আমাদের তারা বলেছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তারা কাজ করছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ডেভিল হান্ট যে অভিযান চলছে, আমরা বলেছি, অতীতেও আমরা অনেক অভিযান দেখিছি, সেই ধরনের যেন কোনো পুনরাবৃত্তি না হয়। অর্থাৎ নিরপরাধ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এটা নিয়ে যেন কোনো সমস্যা তৈরি করা না হয়।’

 

সব দল একমত হলে সরকারের আপত্তি নেই

গতকাল রাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এখন যদি সব পার্টি বলে আমরা ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়, সে ক্ষেত্রে উনি তো (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, এমন নয় যে উনি একটি জায়গায় স্থির আছেন। রাজনৈতিক দলগুলো কি চায়, তার ওপর নির্ভর করবে।’

বিএনপির পক্ষে থেকে বলা হচ্ছে, সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছে এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে জানানো হবে।

প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের কাজটাই হবে এ বিষয়ে তাড়াতাড়ি কাজ করা। নির্বাচন চলতি ডিসেম্বর বা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে হওয়ার ঘোষণা আগেই দেওয়া হয়েছে—সেই বিষয়টি উল্লেখ করেন। নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার ওপর নির্ভর করছে বলেন জানান তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের প্রথম বৈঠক হবে। সংস্কার কমিশনের ছয়টি প্রতিবেদন নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপটা শুরু হবে। প্রথম বৈঠকটি একসঙ্গে সব দলের সঙ্গে হবে।

গণহত্যা, দুর্নীতি, গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হবে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, দেশের বেশির ভাগ মানুষ শান্তির রাজনীতি করতে চান । আমরা চাই সেই পরিবেশটা শুরু হোক।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, তারা দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় জোর দিয়েছেন। অন্যায়-অত্যাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিচার কাজ যাতে দ্রুত হয়, সেগুলোর জন্য বলেছেন।

আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা ‘হয়রানি’ মামলার প্রত্যাহারের বিষয়ে বিএনপি আলোচনা করেছে বলে জানান প্রেস সচিব। অপারেশন ডেভিল হান্টের বিষয়েও দলটি কথা বলেছেন জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, তাঁরা বলেছেন, এখানে যেন মানবাধিকারের কোনো রকমের লঙ্ঘন না হয়। প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকেও বলা হয়েছে, কোনোভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে দেওয়া যাবে না। যারা অন্যায়-অবিচারের সঙ্গে যুক্ত, সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে, তাদের অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় আনা হচ্ছে। সরকার কোনো রকমের মানবাধিকার লঙ্ঘন চায় না, হবেও না।

গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে বলে বিএনপিকে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

বিএনপির তরফ থেকে সংস্কারের বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘তারা বলেছে, আপনারা সংস্কার করবেন তা আমরা চাই। আমরা সব কমিশনে প্রস্তাবনা দিয়েছি। আপনাদের সঙ্গে আছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে তেমন কথা হয়নি। জাতীয় নির্বাচন উনারা দ্রুত চাচ্ছেন, এই ডিসেম্বরেই চাচ্ছেন। আমাদের তরফ থেকে চিন্ত-ভাবনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ দেখবেন, সিদ্ধান্ত হলে জানবেন।

বিএনপির স্থিতিশীলতার দিকে জোর দিয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তারপর দেশের শান্তি ফিরে এসেছে, দেশে কোনো ধরনের ভাঙচুর দেখছি না। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। একই সঙ্গে বিএনপি এসব ঘটনায় শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন। দেশকে অস্থিতিশীল করার পেছনে তারই ভূমিকা।’

ডেভিল হান্টের বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযানে কোনো ধরনের নিরপরাধ, নির্দোষ ব্যক্তি এ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

সাম্প্রতিক ঘটনার সরকার দায় এড়াতে পারে না—বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই আজ বা কালের মধ্যে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা দেশের মানুষের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

উপরে