Main Logo
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১১:৪৬

‘দুঃখিত, আপা! এটি শেষ!’ প্রেসসচিবের ফেসবুক পোস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
‘দুঃখিত, আপা! এটি শেষ!’ প্রেসসচিবের ফেসবুক পোস্ট

প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা গত আগস্টের শেষ দিকে যখন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে জুলাই এবং আগস্টের সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনার জন্য আমন্ত্রণ জানান, তখন অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কেউ কেউ পুরনো বাংলা প্রবাদটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, ‘খাল কেটে কুমির আনার ব্যবস্থা হচ্ছে।’

গতকাল শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুল আলম ওই পোস্টে লেখেন, ‘অনেকের আশঙ্কা ছিল যে, জাতিসংঘ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে হস্তক্ষেপ করবে এবং হয়ত এমন একটি আপসকামী প্রতিবেদন প্রকাশ করবে, যেটি আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে দেখা গেছে।

তবে অধ্যাপক ইউনূস তার সিদ্ধান্তে দৃঢ় ছিলেন। ড. ইউনূস চেয়েছিলেন, হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত। তার বিশ্বাস ছিল, জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরই একমাত্র সংস্থা যারা এমন সত্য উদঘাটন করতে পারে। অবশ্য, বাংলাদেশে সবাই জানত জুলাই ও আগস্টে কী ঘটেছে, কারা হত্যার নির্দেশ দিয়েছে, পুলিশের ভূমিকা কী ছিল, নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ও কর্মীদের কী ভূমিকা ছিল।

তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং নিরপেক্ষ সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন থাকাটা জরুরি ছিল। আর সেই সত্য যদি অপ্রিয় হয়, তাতেও আপত্তি নেই! অবশেষে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ওপর চূড়ান্ত আঘাত হেনেছে।’

তিনি আরো লেখেন, ‘শেখ হাসিনার রাজনীতিতে ফেরার সামান্য সম্ভাবনাও এখন শেষ। যদি আওয়ামী লীগ এবং তাদের সেই বিশাল কর্মীবাহিনী, যারা জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞে জড়িত ছিল না, দলকে পুনর্জীবিত করতে চায়, তবে একমাত্র উপায় হলো—শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে প্রত্যাখ্যান করা এবং জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া।


জাতিসংঘের প্রতিবেদন অন্য কোনো ব্যাখ্যার সুযোগ দেয়নি।’
১৯৯০ সালে সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ যখন গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন, তখন তার বয়স ছিল ৫৯ বছর উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘তিনি ছিলেন এক দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসক। এরশাদ পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করে। পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার সরকারও একই নীতি অনুসরণ করে। তবে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ এরশাদের জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের দলে টেনে নেয়, ফলে এরশাদকে কিছু তরুণ ও বিশ্বস্ত নেতাদের ওপর নির্ভর করতে হয়।

তবে সবাই জানত, এরশাদ রাজনীতিতে ফিরবেন। কারণ, তিনি দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি বিশাল ভোটব্যাংক ধরে রেখেছিলেন।’
প্রেসসচিব লেখেন, ‘শেষ পর্যন্ত এরশাদ রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির ‘কিংমেকার’ হিসেবে প্রভাবিত ছিলেন। তার দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক প্রভাবের পেছনে একটি কারণ ছিল—আন্তর্জাতিক মহলে তার শাসনামল নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য তাকে তীব্র নিন্দার মুখে পড়তে হয়নি। যদিও তার শাসনামলে কয়েকটি উচ্চপ্রোফাইল হত্যাকাণ্ড ঘটে, কোনো তদন্তই প্রমাণ করতে পারেনি যে তিনি এসব হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ এতটা সৌভাগ্যবান নয়! আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রায় সব ঘটনাই নথিভুক্ত করেছে। তার ভোট কারচুপির কৌশল ছিল স্পষ্ট ও নির্লজ্জ। গুম, গণহত্যা, গণগ্রেপ্তার—সবই বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় তোলে। তারপরও, সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের কারণে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন পেতেন। তার একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে যখনই বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ উঠেছে, পশ্চিমা দেশগুলো তাকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও সমর্থন দিয়েছে, কারণ তিনি ‘ওয়ার অন টেরর’ বা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ‘সঠিক’ পক্ষে ছিলেন।’

তিনি আরো জানান, এমনকি তার পতনের পরও, আওয়ামী লীগের প্রচারযন্ত্র ও ভারতীয় গণমাধ্যম প্রমাণ করতে চেয়েছে যে জুলাইয়ের বিদ্রোহ ছিল মূলত ইসলামপন্থিদের দ্বারা সংগঠিত, যা মূলত ‘ওয়ার অন টেরর’-এর অংশ হিসেবে একটি প্রচার কৌশল। অবশেষে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন তার সব প্রচেষ্টা ধ্বংস করে দিয়েছে! সবশেষে শফিকুল আলম ওই ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘দুঃখিত, আপা! এটি শেষ!’

উপরে