ধারাবাহিক উপন্যাস - পর্ব-০২
নিশিকথা
ওমর ফারুক
কেন কি হয়েছে আমার? গলা কেঁপে ওঠে নাহিদের।
না না, তোর কিছু হয়নি। পত্রিকা পড়েছিস আজ?
হ্যাঁ পড়েছি, কেন কি হয়েছে?
না মানে ইয়ে, আমতা আমতা করতে থাকেন তারিক।
কি হয়েছে, আমতা আমতা করছিস কেন?
না মানে, আজকের পত্রিকার বিশেষ কোন ঘটনা চোখে পড়েছে তোর?
খুলে বলতো কি হয়েছে?
এ প্রশ্ন শুনে তারিক নিশ্চিত মেয়ের সংবাদ পড়া হয়নি নাহিদের। কিন্তু এমন একটা সংবাদ তিনি কি করে দেবেন, ইতস্তত করছিলেন। এ ছাড়া নাহিদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। কি থেকে কি হয়ে যায়। যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে নিজেকে অপরাধী মনে হবে। তারিখ বুদ্ধি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। হঠাৎ তিনি বললেন-
নাহিদ তুই পত্রিকার তিন নম্বর পাতার নিচের দিকে তাকিয়ে দেখ একটা বিজ্ঞাপন আছে। সেই বিজ্ঞাপনটি দেখার পর আমি তোর সঙ্গে কথা বলছি।
ওহ এই কথা। আমি দেখেছি। ছবিটা আমার মেয়ের মতো মনে হয়তো? আরে না সে আমার নিশি না। দেখতে তার মতো।
তাই। স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়লেন তারিক।
তবে তিনি চমকে গেছেন। তিনি তা হেল ভুল দেখলেন। এমন ভুলতো তার কখনো হয় না। তা হলে তার চোখের পাওয়ার আরও কমে গেছে? হয়তো তাই হবে। ভাবলেন, নাহিদ যেহেতু বলছে তা হলে তার মেয়ের ছবি নয় এটি। আবারও তিনি চশমার কাঁচ পরিষ্কার করে পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালেন। কিন্তু তার কাছে নিশিই মনে হচ্ছে। কিন্তু নাহিদের কেন মনে হচ্ছে না তাই নিয়ে আবার চিন্তায় পড়ে গেলেন তারিক।
এবার মোবাইল ফোন নয়, বেজে উঠেছে ল্যান্ড ফোন। নাহিদ আহমেদ ফোন ধরতে দেরি করলেন না।
ফোনটি করেছে নিশির বান্ধবী নিলি। সেও ফোনে নিশির খোঁজ নেয়। নাহিদ আহমেদের কাছ থেকে জানতে চায় নিশির কোন সমস্যা হয়েছে কি না। পরপর আরও ক'টি ফোন রিসিভ করেন নাহিদ আহমেদ। সবারই প্রশ্ন প্রায় একই ধরণের।
নাহিদ আহমেদ তার বিশ্বাস থেকে সরে আসেন। তিনিও নিশ্চিত এ ছবি নিশিরই। তা না হলে সবাই কেন ফোন করে জানতে চাইবে? সবাইতো আর ভুল করতে পারে না। নিশিশ কখন ঘুম থেকে উঠবে সে কারণে এ রুম ও রুমে পায়চারি শুরু করেন নাহিদ আহমেদ।
নাহিদ আহমেদের ভাবনায় আসে কোন পাপের কারণেই হয়তো আজ এই পরিণতি। তার মেয়ে বিপথগামী হয়েছে। ছবি উঠেছে পত্রিকায়। কিন্তু কি পাপ তিনি করেছেন বুঝে উঠতে পারেন না। জীবনে কারো কাছ থেকে দু'টাকা ঘুষ নিয়েছেন কি না তা-ও মনে করতে পারছেন না। কারো উপকার করতে না পারলেও অপকার করেছেন তা মনে পড়ে না। সরকারি বড় কর্মকর্তা হয়েও বাড়ি বানিয়েছেন গ্রামের বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করা টাকায়। অথচ তিনি শুনেছেেন তার অফিসের পিয়নেরও নাকি ঢাকায় ৬ তলা ৮ তলা বাড়ি আছে। তবে কোন পাপে আজ তার মেয়ে বিপথগামী? বাবা মার পাপ নাকি সন্তানদের ছুঁয়ে যায় - এমন বিশ্বাস তার। পাপ- পূণ্যের হিসাব মিলাতে গিয়ে ঘামতে থাকেন তিনি।